রান্নাঘরে হাঁড়ি-কড়াই-হাতা-খুন্তি নিয়ে সুনিপুণ হস্তে সংসার সামলাতে ব্যস্ত তিনি। ছেলেমেয়েরা দুষ্টুমি করলে, কাজের ফাঁকেই চোখ পাকিয়ে, গরম খুন্তি হাতে তেড়ে যাওয়া। দিনভর সব কাজ সুষ্ঠু ভাবে সারতে রন্ধনশালার নানা সরঞ্জামই বিভিন্ন সময়ে হয়ে ওঠে গৃহকর্ত্রীর হাতিয়ার।
দিনের অনেকটা সময় সেই রান্নাঘর থেকেই গেরস্থালির সব দিকের খেয়াল রাখেন তিনি। কখনও নরম, তো প্রয়োজনে কখনও খুবই কঠিন। ঘরে ঘরে সকল ‘মা’ এ ভাবেই হয়ে ওঠেন দশভুজা। শক্তি থেকে শান্তি, সবের প্রতীক তখন তিনিই। বড়িশার ‘সবেদাবাগান ক্লাবে’র মণ্ডপ এ বার সাজবে গৃহকর্ত্রীদের সেই ‘অফিসঘরের’ আদলে। দশ হাতে রন্ধনশালার নানা প্রকরণে সুসজ্জিত দেবীর এমনই মাতৃরূপ দেখা যাবে সেখানে।
গেরস্থালির এই পরিচিত গণ্ডি থেকে বাইরে পা রাখলেই মায়ের রূপ কিন্তু এক্কেবারে অন্য রকম। গৃহকর্ত্রী মা তখন যেন অভিনব ভ্রমণসঙ্গী। আন্দামানের সবুজ দ্বীপে সমুদ্রের ধারে মায়ের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার আনন্দই তাই আলাদা। সেলুলার জেলের আদলে তৈরি দমদমের ‘চোদ্দোর পল্লি সর্বজনীন’-এর মণ্ডপের মূল প্রবেশপথ দিয়ে ভিতরে গেলেই মায়ের সঙ্গে পৌঁছনো যায় সাদা বালির তটে। শহুরে ভিড়ভাট্টা পেরিয়ে মণ্ডপপ্রাঙ্গণে প্রবাল, ফসিলস্, সামুদ্রিক প্রাণী আর গাছপালায় মন উড়ে যেতে পারে বহু দূর। সঙ্গে বাঁশ, বেত, প্লাইউডে তৈরি বাড়ি আর সবুজ দ্বীপের আদিবাসী সংস্কৃতির ঝলকও মিলবে সে প্রাঙ্গণেই।
অচেনাকে চিনে নিতে মাতৃদর্শনে চলে যাওয়া যায় কোনও পোড়ামাটির দেশেও। পোড়ামাটির কাজ করা প্রবেশপথে ঝুলছে বড়সড় একটা ঘণ্টা। তার ভিতরে বীরভূমের এক পুরনো মন্দিরের আদলে তৈরি মণ্ডপে চার সন্তানকে নিয়ে মা যেন আদিবাসী ঘরণী। তারই মধ্যে চার পাশের গ্রাম্য পরিবেশ ও লোকজীবনের অঙ্গ হয়ে উঠবেন শহুরে মানুষেরাও। ওই গাঁয়ের কেন্দ্রস্থলে রয়েছে একটা বুড়ো বটগাছ। মনে কোনও বাসনা থাকলে ওই গাছের ডালে মাদুলি বেঁধে ভগবানের কাছে করা হয় প্রার্থনা। বাগুইআটির ‘উদয়ন সঙ্ঘ’-এর পুজোমণ্ডপে সেই বটবৃক্ষের নীচে দাঁড়িয়েই পুজোর দিনে কিছুটা সময় কাটিয়ে নেওয়া যায় মায়ের সান্নিধ্যে।
উত্তর কলকাতার বিবেকানন্দ রোডে মন্দিদের আদলে তৈরি ‘শিমুলিয়া সর্বজনীন’-এর পুজো মণ্ডপে মা আবার বসবেন সাবেক সাজেই। বনেদি পাড়ার হইহট্টগোলের মাঝে ডাকের সাজের প্রতিমা শুধু শক্তির আধার নন, স্নেহময়ী জননীও।
শরৎকালের পাশাপাশি বসন্তও মিলন উৎসবে মাতার ঋতু। উল্টোডাঙার কাছে মুরারিপুকুরে ‘বিধান সঙ্ঘ’-এর মণ্ডপে তাই এ বার ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বসন্তের আমেজ। দোল উৎসবকে মনে করেই মণ্ডপ তৈরি হচ্ছে রং-বেরঙের পিচকিরি দিয়ে। মা সাজবেন রাধিকা বেশে। রঙিন মণ্ডপে থাকবে তাঁর স্নিগ্ধতার স্পর্শই। |