সম্রাট কিন শি হুয়ান-এর পোড়ামাটির যোদ্ধারা প্রস্তুত।
আজ থেকে, শহর কলকাতায় শুরু হচ্ছে স্মৃতির সফর। মহানগরে নজিরবিহীন একটি প্রদর্শনীতে দেখা দিচ্ছে চিনদেশের পুরাসম্পদ, ‘ট্রেজার্স অফ এনশিয়েন্ট চায়না’। দিল্লি, মুম্বই, হায়দরাবাদ ঘুরে অবশেষে আলিপুরে জাতীয় গ্রন্থাগার। পুরনো বেলভেডিয়ার ভবনের একাংশ জুড়ে ইতিহাসের আলোছায়া। খ্রিস্টাব্দের সীমানা পেরিয়ে আরও ধূসর খ্রিস্টপূর্বাব্দ, চিনে জেগে উঠছে নব্যপ্রস্তর যুগ, সেই সময়কার পুরাকীর্তির বিবিধ নিদর্শন পাশাপাশি এই প্রদর্শনীর কালপর্ব ছুঁয়ে ফেলছে কিং রাজবংশকে, মাত্র একশো বছর আগেও, ১৯১১ সালে রাজত্ব করেছে যারা।
‘‘সময়কালের এই ব্যাপ্তির কথাটা খেয়াল রাখা দরকার’’ জানাচ্ছেন জাতীয় গ্রন্থাগারের মহানির্দেশক স্বপন চক্রবর্তী। পাশাপাশি তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কলকাতার সঙ্গে চিনা সংস্কৃতির কিছু স্পষ্ট যোগসূত্র বহুকালই ছিল। ‘‘তা ছাড়া, এই শহরে চিনা জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও তো কম নয়।’’ |
আজ শুরু হচ্ছে চৈনিক পুরাসম্পদের এই প্রদর্শনী। ছবি: দেবাশিস রায়। |
এ দেশে আক্ষরিকই অ-ভূতপূর্ব এই প্রদর্শনীকে কলকাতায় নিয়ে আসার মুখ্য উদ্যোগ সংস্কৃতি মন্ত্রকের। ‘‘২০০৬ ছিল ভারত-চিন মৈত্রীবর্ষ, তখনই কিছু ভারতীয় শিল্পকৃতির প্রদর্শনী চিনের চারটি শহরে যায়। ঠিক হয়, ফিরতি প্রদর্শনীতে চিনা শিল্প এবং পুরাকীর্তি ভারতে আসবে। ভেবেছিলাম, এ দেশে যদি আসেই, কলকাতায় নয় কেন?’ বলছেন কেন্দ্রের সংস্কৃতি সচিব জহর সরকার।
সমস্যা অবশ্য ছিলই। অন্তত আট হাজার বর্গফুট জায়গা দরকার। কলকাতায় তেমন জায়গা কোথায়? সুতরাং, বেলভেডিয়ার! আয়োজন আধুনিক, কিন্তু পরিসরটি প্রাচীন, তাকে আবার আচমকা ঝাঁ-চকচকে করে ফেললে চলবে না। ইতিহাসের ছোঁয়াচ রাখতে হবে, পাশাপাশি বাতানুকূল আবহ। মাত্র ছ’টি মাসের মধ্যে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের কলকাতা চক্র ভবন সংস্কার করে প্রদর্শনী-কক্ষটি প্রস্তুত করে ফেলল।
পরিণাম এই যে, স্মৃতির হাত ধরেছে সত্তা। দরজা খুলে ভিতরে গেলেই থমকে আছে সময়। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের মহানির্দেশক গৌতম সেনগুপ্ত উত্তেজিত, ‘‘জিনিসগুলো ভাল করে খেয়াল করলে দেখবেন, কী ভাবে ভাবনার আদানপ্রদান, শিল্পকলার দেওয়া-নেওয়া চলেছে ভারত-চিন দু’দেশের মধ্যে। সেই সাংস্কৃতিক যোগাযোগের টুকরো ছবি হিসেবে এই প্রদর্শনীর তুলনা নেই।’’
এই সূত্রে কয়েকটি প্রদর্শবস্তুর উল্লেখই যথেষ্ট হবে নব্যপ্রস্তর যুগের কৃষিকাজের উপকরণ, ব্রোঞ্জ যুগের পাত্র, তৃতীয় থেকে শুরু করে ষষ্ঠ শতকের ধাতু ও পাথরের বৌদ্ধমূর্তি, দশম থেকে ত্রয়োদশ শতকের চিনামাটির কাজ, পরে মিং ও কিং রাজবংশের সময়কার চিনামাটির পাত্র... এই সব এবং আরও অনেক কিছু নিয়ে কলকাতায় এই আচ্ছন্নকর প্রদর্শনী।
আজ, বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটায় উদ্বোধন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের হাতে, সভাপতি জহর সরকার। প্রদর্শনী জনতার জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে কাল, ৯ সেপ্টেম্বর। চলবে প্রায় দু’মাস, ৭ নভেম্বর পর্যন্ত।
হিমালয় বাধা নয় আর। চিনের প্রাচীরও নতজানু। ইতিহাসের সেতু জুড়ে দিয়েছে কালপারাবার। সম্রাট কিন শি হুয়ান-এর পোড়ামাটির যোদ্ধারা প্রস্তুত। |