‘আপনি আচরি ধর্ম’ নীতি মেনে ভবানীপুরে তাঁর নির্বাচনী প্রচারে দেওয়াল লিখন না করতে দলকে নির্দেশ দিয়েছেন তৃণমূল-প্রার্থী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
দৃশ্য থেকে যে কোনও রকম দূষণের তিনি বিরোধী বলেই, লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটের সময়েও কালীঘাট এলাকায় তৃণমূল-প্রার্থীর প্রচারে দেওয়াল লিখন কার্যত হয়নি। দু’বছর আগে পুরভোটের সময়েই তৃণমূল নেত্রী স্লোগান তুলেছিলেন, ‘গ্রিন অ্যান্ড ক্লিন সিটি’। ক্ষমতার ‘পরিবর্তনে’র পরে অফিসপাড়ায় যত্রতত্র হোর্ডিং, সাইনবোর্ড খোলার নির্দেশও তিনি কলকাতার পুরকর্তাদের দিয়েছেন। এমনকী, ২১ জুলাই ব্রিগেড সমাবেশের প্রচারে ‘হেরিটেজ’ এলাকায় লাগানো দলের ব্যানার, হোর্ডিং-ও খুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শহরকে দৃশ্য-দূষণের থেকে মুক্তি দিতে কলকাতার একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাজনৈতিক দলের পোস্টার, হোর্ডিং লাগানোর বিষয়ে পরিকল্পনাও তিনি করছেন। প্রত্যাশিত ভাবেই ভবানীপুর উপনির্বাচনে তাঁর সমর্থনে দেওয়াল লিখন হবে না। প্রসঙ্গত, পূর্তমন্ত্রী সুব্রত বক্সী বিধায়কের পদে ইস্তফা দেওয়ার ফলেই ভবানীপুরে ২৫ সেপ্টেম্বর উপনির্বাচন হচ্ছে। ঘটনাচক্রে, সিপিএম-ও দলীয় ভাবে ভবানীপুরে দেওয়াল লিখন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব বলেন, “ভবানীপুরে আমাদের কোনও সমর্থক তাঁর বাড়ির দেওয়ালে সিপিএম-প্রার্থী নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ের নাম লিখে প্রচার করলে আমাদের আপত্তি নেই।” দেওয়াল লিখন না করলেও ফ্লেক্স-হোর্ডিং-পোস্টারের মাধ্যমে সিপিএম-প্রার্থীর প্রচার হবে।
ভবানীপুরে উপনির্বাচন তাঁদের কাছে কার্যত ‘নিয়মরক্ষার লড়াই’ বলেই তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের অভিমত। তাই তাঁদের প্রচারকে তৃণমূল নেতৃত্ব ‘উচ্চগ্রামে’ নিয়ে যেতে চান না। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা কী করেছেন, তা নতুন করে ভবানীপুরের মানুষকে জানানোর কিছু নেই বলেই ওই নেতারা মনে করছেন। বিষয়টিকে একটু অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করেছেন মমতার প্রচারের দায়িত্বপ্রাপ্ত, কলকাতা বন্দরের বিধায়ক ও রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম। তিনি বলেন, “আমরা যাঁর ছবি সামনে রেখে ভোটে জিতে এসেছি এবং যিনি দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে দীর্ঘদিন সাংসদ রয়েছেন, সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভবানীপুরের মানুষকে নতুন করে চেনাতে হবে না।” আর ভবানীপুরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা মন্ত্রী সুব্রতবাবুর কথায়, “রাজ্যের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে ভোট দেওয়ার জন্য ভবানীপুরের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। দক্ষিণ কলকাতা থেকে জিতে মমতা কেন্দ্রে খেল (ক্রীড়া) থেকে রেলমন্ত্রী হয়েছেন। বাংলার মানুষ তাঁকে যে রাজ্যের উন্নয়নের কাণ্ডারী করেছে, তাকে আক্ষরিক অর্থে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত ভবানীপুর।”
ফলে যতটুকু প্রচার দরকার, তা-ই করবেন সুব্রতবাবুরা। তাঁরা কিছু হোর্ডিং ও ফ্লেক্স লাগাবেন। ভোট মিটলেই তা দ্রুত সরিয়ে দেওয়া হবে। ববি, সুব্রতবাবু ছাড়াও মমতার প্রচারের দায়িত্বে আছেন কলকাতা পুরসভার চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “ভবানীপুর কেন্দ্রে আটটি ওয়ার্ড আছে। ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ১০ হাজারেরও উপরে। তাঁদের ভোটের ব্যাপারে জানাতে শ’খানেক ব্যানার, হোর্ডিং, ফ্লেক্স লাগানো হবে।”
ওই আটটি ওয়ার্ডের মধ্যে সাতটিতেই রয়েছেন তৃণমূলের কাউন্সিলর। একমাত্র ৭৭ নম্বর ওয়ার্ড রয়েছে বামফ্রন্টের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লকের হাতে। ববি নিজে ওই ওয়ার্ডে প্রচারের দায়িত্বে আছেন। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, ১০০ শতাংশ ভোট যেন পড়ে।” |