|
|
|
|
পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার অভিযোগ |
নিজস্ব সবাদদাতা • ময়ূরেশ্বর |
রাস্তা সংস্কারে নিজেদের ‘পছন্দের’ ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল বিজেপি-তৃণমূল জোট পরিচালিত ময়ূরেশ্বর ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে। এ ব্যাপারে বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই পঞ্চায়েত সমিতিরই এক সদস্য।
পঞ্চায়েত সমিতির এগজিকিউটিভ অফিসার তথা ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের বিডিও বাবুলাল মাহাতো অবশ্য ওই অভিযোগ মানতে চাননি।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে প্রায় ২২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জেলা পূর্ত দফতরের আওতাধীন কোটাসুর-রামনগর সড়ক চারটি ভাগে সংস্কারের ব্যবস্থা করা হয়। এর জন্য ২৯ অগস্ট ‘স্পট কোটেশন’ ডাকা হয়। ঠিকাদারদের একাংশও বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, পঞ্চায়েত সমিতির এক প্রভাবশালী কর্তার ‘পছন্দের’ ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার জন্যই গোপনে ‘স্পট কোটেশন’ ডাকার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু পছন্দের ঠিকাদারেরা ওই দিন উপস্থিত না হওয়ায় ৩০ অগস্ট তড়িঘড়ি টেন্ডারের ফর্ম বিলি করা হয়। যদিও বেশ কিছু ঠিকাদারকে ওই টেন্ডারের ফর্ম দেওয়া হয়নি বলেও বিডিও-র কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে।
কাজের বরাত না পাওয়া ওই সব ঠিকাদারদের আরও অভিযোগ, টেন্ডার ডাকা সত্ত্বেও তৃতীয় ভাগে (যে চার ভাগে রাস্তার কাজ হওয়ার কথা) কোটাসুর স্কুলমোড় থেকে ষাটপলশা পর্যন্ত মেরামতির কাজটি ‘অনিবার্য কারণে’ বাতিল বলে ঘোষণা করেছে পঞ্চায়েত সমিতি। অথচ ওই কাজের মালপত্র সরবরাহ হয়ে গিয়েছে। বিডিও-র কাছে অভিযোগে ওই ঠিকাদেরার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, পরে গোপনে টেন্ডারের মাধ্যমে সমিতির ‘পছন্দের’ ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়া হবে।
তবে শুধু ঠিকাদারেরাই নয়, টেন্ডার নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ, কংগ্রেসের মমতা দলুই। বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগে তিনি বলেছেন, “ইতিপূর্বে রাস্তা সংস্কারের কাজে ঠিকাদারের কাছ থেকে ৪১ শতাংশ ছাড় নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই কাজে মাত্র ০.০১ শতাংশ ছাড় নেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে এই টেন্ডার অসঙ্গতিপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। ওই টেন্ডার বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার ডাকার দাবি জানিয়েছি।”
পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সভাপতি বিনয় সাহার দাবি, “টেন্ডার নিয়ে কোনও দুর্নীতি হয়নি। যে-সব ঠিকাদার ফর্ম পাননি, তাঁদের জন্য বিডিও-র কাছে নতুন করে টেন্ডার ডাকার জন্য আবেদন জানিয়েছি।” বিডিও বাবুলাল মাহাতো বলেন, “কিছু ঠিকাদার আপত্তি তুলেছিলেন বলেই ‘স্পট কোটেশন’ বাতিল করে জরুরি ভিত্তিতে টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। কারও পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে নয়। পঞ্চায়েত সমিতির স্থায়ী সমিতির (পূর্ত) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যে-সব ঠিকাদার আগের বরাত পাওয়া কাজ ২-৩ তিন মাস ফেলে রেখেছেন, তাঁদেরই কেবল টেন্ডারের ফর্ম দেওয়া হয়নি। গোটা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
এলাকার অন্যতম ঠিকাদার করুণাসিন্ধু পালের দাবি, “বর্ষার জন্য একটি সেতু নির্মাণের কাজ ছাড়া, বরাত পাওয়া আর কোনও কাজ পড়ে নেই। এমনকী অন্য ঠিকাদারেরা নানা অসুবিধার কারণে যে-সব কাজের বরাত নিতে চাননি, আমি সেই কাজও করে দিয়েছি। তার পরেও অন্য কোনও ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতেই আমাদের কয়েক জনকে টেন্ডারের ফর্ম দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে রাস্তা সংস্কারের কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।”
এ দিকে সংস্কারের অভাবে রাস্তার শোচনীয় দশার জন্য ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। তাঁরা অনশন, অবরোধ, বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। আমড়ার বাবর মণ্ডল, রামনগরের রামমোহন প্রামাণিকরা বলেন, “আবেদন-নিবেদন, অবরোধ করেও রাস্তা সংস্কারের ব্যাপারে দীর্ঘ দিন প্রশাসনের টনক নড়েনি। কারও আখের গোছাতে গিয়ে রাস্তা সংস্কারের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না।”
ময়ূরেশ্বর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তৃণমূলের জটিল মণ্ডল বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী টেন্ডার ডাকা হয়েছিল। কিন্তু বিডিও ওয়ার্ক অর্ডার না দেওয়ায় অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।” |
|
|
|
|
|