খুন-জখম, অগ্নিসংযোগ, জরিমানা। জরিমানার টাকা দিতে না পারলে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ। বর্গাদার, পাট্টাদার, রায়তদের উচ্ছেদ। বিচারের নামে ডেকে জোর করে সাদা কাগজে মিথ্যা অভিযোগ সত্যি বলে লিখিয়ে নেওয়া। পঞ্চায়েত, সমবায়, স্কুল, পাঠাগারে নির্বাচিত সদস্যদের কাজ করতে না দেওয়া।
বর্ধমানের পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে রায়না ও মাধবডিহি জুড়ে তৃণমূলের ‘নির্যাতনে’র একগুচ্ছ অভিযোগ জানাল সিপিএম। বুধবার সিপিএমের রায়না জোনাল কমিটির সম্পাদক শ্যামাপদ পালের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের অভিযোগ, তাঁদের ৩৭ জন কর্মী দীর্ঘদিন গ্রামছাড়া। কেউ-কেউ ঈদে বাড়িতে আসার চেষ্টা করলেও পরিণাম হয়েছে ভয়ঙ্কর। এর পরে পুজো আসছে। তার আগে ঘরছাড়াদের ফেরানোর আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা।
রায়না ও মাধবডিহি ব্লকে ‘অত্যাচারিত’দের নামের বিশাল তালিকাও দিয়েছে সিপিএম। তাদের অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই উচালন, কাইতি, কোটশিমূল, বারাটি, বদ্দিপুর, বিনোদপুর, মোমরেজপুর, গোপালপুর, রুপসাড়া, দিঘুরা, মাছখান্ডা, সিপ্টা, আউসাড়া, মুক্তিপুর, চাঁদপুর, গোতান, সুন্দরপুর, দক্ষিণকুল, আনগুনা, ধারান, কুলে, আলমপুর, হিজলনা, ধামনাড়ি, বোরেজপোতা, বন্তির, জ্যোৎসাদি, আখিনা, বাঁধগাছা ইত্যাদি গ্রামে অত্যাচার শুরু হয়েছে। ৫টি বাড়ির খড়ের গাদায় আগুন দেওয়া হয়েছে, বাস্তুভিটে থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে ২১ জনকে, জমি থেকে উচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে ২১টি, সিপিএম বা তার শাখা সংগঠনের অফিস বন্ধ করিয়ে দেওয়া হয়েছে ১৬ জায়গায়। নানা ঘটনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৩১।
রয়েছে ‘জরিমানা’র নামে তোলাবাজির নালিশও। সিপিএমের অভিযোগ, মাধবডিহিতে তাদের ৩৫ জন কর্মী-সমর্থকের থেকে ৭ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা ‘জরিমানা’ আদায় করেছে তৃণমূলের লোকেরা। অন্য দিকে পাঁইটা, তৈলাড়া, কামারহাটি, রামপুর, বুজুকদিঘি, কুলিয়া, নলে, আখিনা, মোহনপুর, বিনোদপুর ও রুপসাড়া গ্রামের ২৩ জন কর্মী-সমর্থকের থেকে প্রায় ১১ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এই ‘হিসেব’ দিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন সিপিএম নেতারা।
তবে পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “ওই দলের নেতারা আগেও অভিযোগ করেছেন। আমরা ওঁদের বলি, কেউ টাকা আদায় করতে গেলেই যেন পুলিশে খবর দেওয়া হয়। একটি ঘটনাতেও ওঁরা তা করেননি। জমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্যে অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীকে আমরা সর্বত্রই ব্লক স্তরের পাঁচ সদস্যের কমিটির কাছে পাঠাচ্ছি। ওই কমিটি যা সুপারিশ করবে, পুলিশ তা কার্যকর করবে।”
তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ মানতে নারাজ। দলের জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের দাবি, “সব সিপিএমের মনগড়া অভিযোগ। ওদের নেতা-কর্মীরা টানা ৩৪ বছর ধরে মানুষের উপরে অত্যাচার চালিয়েছেন। মানুষই এখন তার বদলা নিচ্ছেন। তবে আমরা পুলিশকে বলেছি, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করুন। যদি আমাদের কেউ কোনও ঘটনায় জড়িত থাকে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিন।” |