গোটা তল্লাটে টেলিভিশন বলতে একটিই। বিদ্যুৎ সংযোগহীন ওই গ্রামে ব্যাটারি দিয়ে সেটি চালানো হয়। ছোট্ট ঘরে রাখা ওই টিভির পর্দায় ভেসে ওঠা সংবাদ চ্যানেলে চোখ রাখতে উপচে পড়া ভিড়। আট থেকে আশি, কে নেই ভিড়ে। উৎসাহের কারণ, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফর। মঙ্গলবারই প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে গিয়েছেন। এ বারের সফরে তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে ছিটমহল বিনিময় চুক্তিতে সই করতে পারেন বলে জানা গিয়েছে। দিনহাটার বাংলাদেশি ছিটমহল মশালদহের বাসিন্দাদের উৎসাহের তাই শেষ নেই। গ্রামের একমাত্র টেলিভিশনে চোখ রাখতে তাই আবু বক্কর সিদ্দিকির বাড়িতে ভিড় করেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। প্রধানমন্ত্রীর ওই সফর নিয়ে ওই ছবি দেখা দিয়েছে দিনহাটার বাংলাদেশি ছিটমহল দাসিয়ার ছড়া, পোঁয়াতের কুঠি, বাঁশকাটা, নলগ্রাম, বাকালির ছড়ার মতো ৫১ গ্রামে। যেখানে টেলিভিশন ছিল না সেখানে লোকে কান পেতেছেন বাংলাদেশ রেডিওয়। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় সমিতির সহকারী সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “নেহরু-নুন, ইন্দিরা-মুজিব ও রাও-জিয়া আমলে তিন দফায় ছিটমহল বিনিময় নিয়ে চুক্তি হয়। শেষ পর্যন্ত বিনিময় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা যায়নি। দুর্দশাও ঘোচেনি সেখানকার বাসিন্দাদের। স্বাভাবিক ভাবেই এ বারের প্রধানমন্ত্রী সফর নিয়ে উৎকণ্ঠা থাকবেই। ইতিবাচক কিছু দেখতে চাইছি।” ওই সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ছিটমহলের বাসিন্দাদের নাগরিকত্ব নেই। ছিটমহলে নেই প্রশাসন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, রাস্তাঘাট, পানীয় জল বা বিদ্যুতের সুবিধে নেই। পালস পোলিও কর্মসূচিরও সুবিধে পান না বাসিন্দারা। মশাল ডাঙার আবু বক্কর বললেন, “নাম ঠিকানা গোপন রেখে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করাতে হয়। গর্ভবতীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতেও সমস্যা কম নয়। এ বার ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে দুর্ভোগ দূর হবে আশায় রয়েছি।” এ দিন পোয়াতের কুঠি গ্রামের বেশ কয়েক জন বাসিন্দা জানিয়েছেন, রেশন কার্ড নেই। মেয়েদের বিয়ে দিতে সমস্যা হয়। সরকার এ বার মানবিক হবে সেই আশায় রয়েছেন তাঁরা। |