দীর্ঘ কয়েক বছরের চেষ্টায় সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত উদ্যোগে লোক সংস্কৃতির সংগ্রহশালা তৈরী করেছেন অবসরপ্রাপ্ত চা শ্রমিক। কালচিনি চা বাগানের অবসরপ্রাপ্ত সর্দার কাজিমান গোলে নিজের বাড়ির বারান্দাটি সংগ্রহশালার জন্য বড় করে বানিয়েছেন। জনজাতি সংক্রান্ত বই থেকে শুরু করে দীর্ঘ দিন ধরে সংগ্রহ করা বিভিন্ন জনজাতির সংস্কৃতি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এই সংগ্রহশালায় থাকছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “কালচিনি চা বাগানের এক অবসরপ্রাপ্ত চা শ্রমিক ব্যাক্তিগত উদ্যোগে জনজাতিদের একটি সংগ্রহশালা আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করার জন্য আমায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ডুয়ার্সের পযর্টনের ক্ষেত্রে এ ধরনের সংগ্রহশালার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমি ওই সংগ্রহশালাটিকে কীভাবে সাহায্য করা যায় তা খতিয়ে দেখছি।” |
আলিপুরদুয়ার মহকুমা তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিক খানডোমা ভুটিয়া বলেন, “আলিপুরদুয়ার মহকুমায় তাদের দফতরের একটি ও বক্সা পাহাড়ে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের একটি সংগ্রহশালা রয়েছে। বর্তমানে ব্যাক্তিগত উদ্যোগে কালচিনি বাগানের চা শ্রমিক কাজিমান গোলে লোকসংস্কৃতির সংগ্রহশালা করছেন। সেই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। এই ধরনের সংগ্রহশালা তৈরী হলে আগামী প্রজন্ম ও পর্যটকরা এলাকার জনজাতিদের জীবনযাত্রা সমন্ধে অনেক কিছু জানতে পারবে।” ব্যক্তিগত উদ্যোগে তৈরী ওই সংগ্রহশালাটিকে কীভাবে সাহায্য করা যায় তা নিয়ে মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর চিন্তাভাবনা করছে বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক।
কালচিনি চা বাগানের ফ্যাক্টরি লাইনে অবসরপ্রাপ্ত চা শ্রমিক কাজিমান গোলের বাড়িতে এখন ব্যস্ততা তুঙ্গে। আগামী ১৭ সেপটেম্বর এখানেই প্রায় ১৫-২০ বছর ধরে নেপাল, সিকিম, কার্শিয়াং-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করা বিভিন্ন জনগোষ্টীর মুখোশ থেকে শুরু করে বাদ্যযন্ত্র পরিস্কার করছেন সংগ্রহ কর্তা। তিনি বলেন, “ছোট বেলায় আমি বৌদ্ধদের লামা গোষ্টীর নৃত্য বাকপার সাথে যুক্ত হই। সেখানে বিভিন্ন জনগোষ্টির সংস্কৃতির সাথে যুক্ত হই। সেখান থেকেই আমার সংগ্রহের নেশা শুরু হয়।”
তিনি জানান, তাঁর সংগ্রহে মেচ, রাভা, নেপালী, গারো, আদিবাসি-সহ বিভিন্ন জনগোষ্টির ব্যবহৃত জিনিস রয়েছে। বৌদ্ধ ভিক্ষুকের থেকে সংগ্রহ করা দেড়শ বছরের পুরানো একটা কাঠের বাটি ফুরু রয়েছে। লামাদের বাকপা নৃত্যে ব্যবহৃত মানুষের হাড় দিয়ে তৈরী কাং লিং বাঁশি, লিম্বুদের বাদ্যযন্ত্র চাবরু, নেপালীদের বাদ্যযন্ত্র তুংনা, আদিবাসিদের মাদল, নাকাড়া, চাকপো, মানি, চিংদুং, বাকপা নৃত্যের বিভিন্ন চরিত্রের মুখোশ-সহ বিভিন্ন জনজাতির পোশাক, অস্ত্র মিলিয়ে প্রায় ১০০-১২০ রকম জিনিসের সংগ্রহ রয়েছে।
তিনি বলেন, “আমি এখনও বিভিন্ন জিনিস সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ১৯৯৭ সালে আমি চা বাগান থেকে অবসর নিয়েছি। তারপর প্রায় ৫-৬ বছর ধরে বাড়ির সংগ্রহশালা তৈরী করেছি। এতে পরিবারের সদস্যরা সাহায্য করেছে। আমার সংগ্রহে সাদ্রি, কুরুক, ওরাঁও, তামাং, মাঝি ও নেপালি ভাষার বই রয়েছে।” |