|
|
|
|
জঙ্গলমহল |
নলবাহী পানীয় জল পৌঁছতে নয়া উদ্যোগ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
অনেক কিছুর মতোই নলবাহিত পানীয় জলের সুবিধাতেও বঞ্চিত জঙ্গলমহলের অধিকাংশ বাসিন্দা। পরিসংখ্যান বলছে, মাত্র ১৩ শতাংশ স্থানীয় বাসিন্দার কাছে নলবাহী বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকায় নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দিতে নতুন করে তৎপর হচ্ছে প্রশাসন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, যে সব প্রকল্পের কাজ চলছে, তা রূপায়িত হলে আরও ২ শতাংশ, অর্থাৎ সব মিলিয়ে ১৫ শতাংশ মানুষ এই সুবিধার আওতায় আসবেন।
একটা সময় পিছিয়ে পড়া জঙ্গলমহলের সর্বত্র বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দিতে তৎপরতা শুরু হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে জোর দেওয়া হয়েছিল নলবাহিত পানীয় জল প্রকল্পের উপরে। তবে পরিকল্পনা মতো কাজ না হওয়ায় অধিকাংশ এলাকাতেই এই সুযোগ পৌঁছে দেওয়া যায়নি। এই পরিস্থিতিতে লালগড়, বেলপাহাড়ি, গোয়ালতোড় ও সংলগ্ন এলাকার মানুষের কাছে পরিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দিতে নতুন করে পরিকল্পনা তৈরি করেছে জেলা প্রশাসন।
সূত্রের খবর, এ বার থেকে জঙ্গলমহলের প্রতিটি ব্লকে বছরে অন্তত ২৫টি নলবাহী পানীয় জল প্রকল্প রূপায়িত করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এক-একটি প্রকল্পের জন্য গড়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ লক্ষ টাকা। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক সুরেন্দ্র গুপ্তর বক্তব্য, “জঙ্গলমহলে পানীয় জল প্রকল্পের কাজ স্বাভাবিক গতিতেই এগোচ্ছে।” একই দাবি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (মেদিনীপুর ডিভিশন) মহসিন আলি খানের। তাঁর কথায়, “জঙ্গলমহলে এখন ৯টি পানীয় জল প্রকল্পের কাজ চলছে। আগামী বছরে কী কী কাজ হবে, সেই সংক্রান্ত একটি রিপোর্টও তৈরি করা হয়েছে।” আগেও অবশ্য জঙ্গল-এলাকার গ্রামে গ্রামে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছে দিতে পরিকল্পনা হয়েছিল। জোর দেওয়া হয়েছিল সজলধারা প্রকল্পে।
কিন্তু কাজ এগোয়নি। প্রশাসনেরই একটি সূত্রের খবর, মাওবাদী প্রভাবিত এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট মেটাতে বেশ কয়েকটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু জলস্তর না থাকায় তার একাংশ রূপায়িত করা যায়নি। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “জলস্তর না থাকলে নলকূপ তৈরি অসম্ভব। বর্ষায় হয়তো জল পাওয়া যাবে। কিন্তু বছরের অন্য সময়ে ওই নলকূপ অচল হয়ে পড়বে। এর ফলে গ্রামবাসীরাও উপকৃত হবেন না।” এখন আর শুধু সজলধারা নয়, পিউপি, আইএপি-সহ অন্য প্রকল্পের মাধ্যমেও এই কাজ করা সম্ভব।
প্রশাসন সূত্রের খবর, লক্ষ্যমাত্রা বেশি থাকলেও এখনও পর্যন্ত জঙ্গলমহলের মাত্র ১৩.৩৬ শতাংশ মানুষের কাছেই নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছনো সম্ভব হয়েছে। যে সব প্রকল্পের কাজ চলছে, সেগুলো রূপায়িত হলে এই হার বেড়ে হবে ১৫.২৯। এখন জঙ্গলমহলের মোট জনসংখ্যা ১৪ লক্ষ ৯ হাজার ১৮১। বসত বাড়ি রয়েছে সব মিলিয়ে ২ লক্ষ ৭৭ হাজার ২৩৪ টি। এই এলাকায় নলকূপ রয়েছে ৯ হাজার ৭৯১টি। কুয়ো ৬০৭টি। সব মিলিয়ে ৬ হাজার ১৯৯টি স্কুলে পানীয় জলের বন্দোবস্ত রয়েছে। সেই সঙ্গে ৩৩৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও পানীয় জলের ব্যবস্থা রয়েছে। তা সত্ত্বেও জঙ্গলমহলের বিস্তীর্ণ এলাকায় মাঝেমধ্যেই জল-সঙ্কট তীব্র হয়ে ওঠে।
পানীয় জলের জন্য গ্রামবাসীদের বহু দূরে যেতে হয়। জলের চাহিদা মেটাতে এক সময়ে বেশ কয়েকটি বাড়ির ছাদে জলাধার তৈরি হয়েছিল। সেখানে বৃষ্টির জল ধরে রাখার বন্দোবস্ত করা হয়। আগামী দিনে এই প্রকল্পের উপরে আরও জোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। জঙ্গলমহলে ৯৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে বছরে ৫টি করে এমন জলাধার তৈরির পরিকল্পনা করেছে জেলা প্রশাসন। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারের আশ্বাস, “জঙ্গলমহলের আরও বেশি-সংখ্যক মানুষের কাছে নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছনোর চেষ্টা চলছে।” |
|
|
|
|
|