|
|
|
|
অনেক পথ বাকি প্রত্যাশা পূরণে, ‘মানছেন’ মমতা |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
মানুষের বিপুল প্রত্যাশার ঢেউয়ে সওয়ার হয়ে তাঁর সরকার ক্ষমতায় এসেছে। প্রত্যাশা পূরণে এবং রাজ্যের চেহারা বদলাতে অনেক পথ অতিক্রম করতে হবে। ‘রাতারাতি’ অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। সরকারের ১০০ দিন পেরিয়ে এই কথা মেনে নিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যা, প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, ‘বাস্তবতা’রই স্বীকারোক্তি।
বামফ্রন্ট সরকার ৩৪ বছর ধরে যে ‘অপশাসন’ চালিয়েছিল, তার রেশ কাটিয়ে বেরোতে সময় লাগবে এই কথা হামেশাই বলে থাকেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশিই তিনি এ-ও মনে করেন, তাঁর সরকার অল্প সময়ে যথেষ্ট ‘দ্রুততা’র সঙ্গে কাজ করছে।
কিন্তু বিধানসভায় গিলোটিন হয়ে-যাওয়া দফতরগুলির বাজেট পুস্তিকায় মমতার বক্তব্যে এই ‘বাস্তবতা’ই নথিভুক্ত করানো হয়েছে যে, রাজ্যের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে আরও অনেক দূর যেতে হবে। মমতারই হাতে-থাকা মুখ্যমন্ত্রীর দফতর (সিএমও), স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের বাজেট বক্তব্যে মেনে নেওয়া হয়েছে অনেক কাজ এখনও করতে হবে।
ঘটনাচক্রে, মানুষের প্রত্যাশা পূরণে আরও অনেক পথ হাঁটার ‘বাস্তবতা’ মেনে নেওয়া হয়েছে যে সব দফতরের বাজেট পুস্তিকায়, সেগুলি নিয়ে বিধানসভায় আলোচনা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী বন্যা পরিস্থিতি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যস্ত থাকায় ওই সবক’টি দফতরের আলোচনা গিলোটিনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সদ্যসমাপ্ত অধিবেশনে। কিন্তু বিধানসভায় দফতরগুলির তরফে যে নথি পেশ করা হয়েছে, তার থেকেই ‘বাস্তব চিত্র’ ধরা পড়ছে। গিলোটিনে চলে-যাওয়া সিএমও-র বাজেট পুস্তিকায় মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে’ দাঁড়িয়ে ‘অনেক কিছুই করতে হবে। মানুষের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে’। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা আরও স্পষ্ট ভাবে পরিকাঠামোর সমস্যার কথা বলতে গিয়ে মেনে নিচ্ছেন, ‘রাতারাতি এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব নয়। তাই আমরা পরিকল্পনা-মাফিক এবং পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নিচ্ছি’।
বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র অবশ্য ওই বাজেট পুস্তিকাগুলির বক্তব্যকে একক ভাবে গুরুত্ব দিতে নারাজ। সূর্যবাবুর কথায়, “বাজেটের বক্তব্য, বিধানসভায় বেশ কিছু প্রশ্নের জবাব এবং সরকারের ৯০ দিনের কাজের বই এই তিনটে পাশাপাশি রাখলে কোনও কিছুই মেলানো যাবে না! ওঁরা কী বলছেন আর কী করছেন, মেলানো বড় মুশকিল! ৩৪ বছরে কিছুই হয়নি বলছেন। কিন্তু বামফ্রন্টের নাম না-করেও কিছু বাজেটে আমাদের আমলের কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে!” উদাহরণ দিয়ে বিরোধীরা বলছে, সংখ্যালঘু বিষয়ক দফতরের বাজেটে উল্লিখিত হয়েছে ১২টি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলায় বহুক্ষেত্রীয় উন্নয়নমূলক কর্মসূচির কথা, যা বামফ্রন্ট জমানায় ২০০৮-০৯ সালে গৃহীত হয়েছিল।
সরকারের তরফে শিল্পমন্ত্রী তথা বিধানসভার দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, “এমন অনেক কাজই আছে, যা সম্পূর্ণ হতে সময় লাগবে। দফাওয়াড়ি বাজেটে সেই প্রক্রিয়ার কথাই বলা হয়েছে। বিষয়টা এই ভাবেই দেখা উচিত।” সরকার তথা শাসক দলের একাংশের মতে, কাজের প্রক্রিয়া সম্পর্কে এই দৃষ্টিভঙ্গিই ‘বাস্তবসম্মত’।
প্রত্যাশা পূরণের জন্যই কিছু নতুন পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে চাইছে মমতার হাতে-থাকা দফতরগুলি। যেমন, ‘নজিরবিহীন’ ভাবে সিএমও-কে এখন দিনে প্রায় ২৫০০ দরখাস্ত জমা নিতে হচ্ছে। ওই দফতরের বাজেটে জানানো হয়েছে, ‘জনসাধারণ তাঁদের অভিযোগ খুব শীঘ্রই অনলাইনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে জানাতে পারবেন’। যে ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই কার্যকর করেছেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী উম্মেন চান্ডি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা ওই দফতরের বাজেটে জানিয়েছেন, যে সব মহকুমায় ২০টির বেশি ব্লক আছে, সেই রকম ৭টি মহকুমা হাসপাতালকে ৭টি স্বাস্থ্য জেলায় উন্নীত করার ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত’ হয়েছে। যাতে প্রত্যন্ত ব্লকের মানুষেরা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার সুযোগ পান। এই নতুন স্বাস্থ্য জেলাগুলি হল আসানসোল, বিষ্ণুপুর, কাঁথি, খড়গপুর, ডায়মন্ড হারবার, বসিরহাট এবং জঙ্গিপুর। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পের অধীনেই এই উদ্যোগ। এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাগুলি নিয়ে অবশ্য বিধানসভায় আলোচনার সুযোগ ছিল না।
তবে সরকারের বক্তব্য বা মনোভাবে ‘সঙ্গতির অভাব’ আছে বলে মনে করলেও উন্নয়নের কাজে বিরোধীরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। রাজ্যের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি আদায়ে সহমত তৈরি করার লক্ষ্যে আলোচনা চেয়ে মন্ত্রীদের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন বিরোধী দলনেতা। উত্তর এখনও পাননি। তবে সূর্যবাবু বলছেন, “কয়েক জন মন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে জানিয়েছেন, উদ্যোগটা ভাল। দেখা যাক!” |
|
|
|
|
|