রাজ্যের স্বার্থ ক্ষুণ্ণ করে বাংলাদেশকে তিস্তার জল দেওয়ার ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে তিস্তা চুক্তি বাতিল করতে হয়েছে দিল্লিকে। এ নিয়ে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ঢাকা সফরে যখন বিস্তর জল ঘোলা হচ্ছে, তখন মহাকরণে বসে তিস্তা প্রকল্পের কাজের হাল হকিকত জেনে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এবং শুধু জানলেনই না, ১৯৭৬ সালে চালু হওয়া তিস্তা প্রকল্পের অগ্রগতি যে মোটেই বলার মতো নয়, ওই প্রকল্পের মাধ্যমে যত কৃষকের উপকৃত হওয়ার কথা, তাঁদের বেশির ভাগের কাছেই যে তিস্তার জল এখনও অধরা তা জেনে রীতিমতো অসন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। কেন এত দিন ঠিক মতো কাজ হয়নি, সেচমন্ত্রী মানস ভুইয়াঁর কাছে তার রিপোর্ট চেয়েছেন মমতা। পাশাপাশি, কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করতেও এ দিন নির্দেশ
দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সাড়ে তিন দশক আগে শুরু হওয়া তিস্তা প্রকল্পের ব্যয় বাড়তে বাড়তে ২৯৮৮ কোটি টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে, যার ৯০ শতাংশই দিচ্ছে কেন্দ্র। প্রকল্প শেষ হলে সাড়ে তিন লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচের বন্দোবস্ত হবে। সেচ দফতরের হিসেব, এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে ১২৬৭ কোটি টাকার, যাতে হিসেব মতো ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে জল পৌঁছনোর কথা। কিন্তু তার বদলে মাত্র ৩৬০০ হেক্টর জমিতে পৌঁছেছে সেচের জল! |
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন সেচমন্ত্রীকে বলেন, “এত দিনেও প্রকল্পের কাজ কেন করা যায়নি, দ্রুত তার রিপোর্ট দেবেন। আর কাজটা যাতে দ্রুত করা যায়, তার ব্যবস্থা নেবেন।” সেচমন্ত্রী তাঁকে জানান, ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলার বিধায়ক, জেলাশাসক, সভাধিপতিদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে তিস্তা প্রকল্পের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ারকে। কোনও সমস্যা হলে ওই কমিটি স্থানীয় পর্যায়ে দ্রুত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে।
বৈঠকের পরে মানসবাবু জানান, তিস্তার জল যাতে চাষিরা পান, তার জন্য কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কম্যান্ড এরিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটিকে (সিএডিসি)। নব্বইয়ের দশক থেকে সিএডিসি-র দায়িত্ব বর্তায় জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের উপরে। ওই দফতরের সচিব সুব্রত বিশ্বাস স্বীকার করেন, চাষের কাজে নতুন করে তিস্তার জল গত কয়েক বছরে একেবারেই দেওয়া যায়নি। কিন্তু কেন? সুব্রতবাবু বলেন, “তিস্তার জল সরবরাহের জন্য প্রথমে ‘মেজর চ্যানেল’, ‘ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেল’ এবং ‘ফিডার চ্যানেল’ কাটতে হয়। এ গুলি করার দায়িত্ব সেচ দফতরের। এর পরে সিএডিসি ‘ফিল্ড চ্যানেল’ তৈরি করে। কেন্দ্র নয়, এই টাকা দেয় রাজ্য সরকার। মূলত উদ্যোগের অভাবেই এত দিন খাল কাটার কাজ হয়নি।”
প্রকল্পের কাজ ঠিক মতো হয়নি বলে স্বীকার করেছেন প্রাক্তন সেচমন্ত্রী আরএসপি-র সুভাষ নস্কর। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “দরকারি জমি সময় মতো অধিগ্রহণ করা যায়নি, অধিগৃহীত জমি হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া রয়েছে আইনি জটিলতাও। আমি নিজে মাঝে মাঝে ওখানে গিয়ে এ সব সমাধানের চেষ্টা করেছিলাম। পারিনি। সরকারি দীর্ঘসূত্রিতাও এ সবের জন্য অনেকটা দায়ী।”
তিস্তার জল দ্রুত কৃষকের জমিতে পৌঁছে দিতে এখন কী ব্যবস্থা করবে সরকার? সুব্রতবাবু বলেন, “জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের এক মুখ্য ইঞ্জিনিয়ারকে সম্প্রতি শিলিগুড়িতে মোতায়েন করা হয়েছে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে যে ভাবেই হোক অন্তত ৬০০০ হেক্টর জমিতে জল দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। আগামী পাঁচ বছরে ৫০ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।” এ ব্যাপারে সেচ এবং জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের অফিসার-ইঞ্জিনিয়ারেরা মাঝে মাঝে বৈঠকে বসে নিজেদের কাজে সমন্বয় রক্ষা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। |