নিকাশি না থাকায় ফি বর্ষায় ডুবে থাকে জমি
মগরাহাটে চরম দুর্দশায় চাষিরা
ল বেরিয়ে যাওয়ার কোনও ব্যবস্থা আজও গড়ে ওঠেনি। ফলে বৃষ্টি হলে চাষের জমি চলে যায় জলের তলায়। কোথাও হাঁটুজল তো কোথাও আবার জলের উচ্চতা বুকসমান। চাষ করতে না পেরে হতভাগ্য চাষিদের কপাল চাপড়ানো ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। বছরের পর বছর এমন অবস্থা চলতে থাকলেও জেলা প্রশাসনের যে তাতে কোনও টনক নড়েনি চলতি মরসুমেও একই অবস্থা সেটাই প্রমাণ করে দিয়েছে। ক্ষুব্ধ চাষিদের অভিযোগ, প্রশাসনের জন্যই তাঁদের এই দুর্দশা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার মহকুমার মগরাহাট-২ ব্লকের অধীনে উড়ালচাঁদপুর, ধনপোতা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় রয়েছে কয়েক হাজার বিঘা কৃষি জমি। জমির পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে উস্থি, মগরাহাট, ডায়মন্ড হারবার খাল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ওই খালের কোনওরকম সংস্কার হয়নি। অনেক জায়গাতেই খাল মজে যাওয়ায় জলনিকাশির ক্ষেত্রে তা বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বর্ষার মরসুমে ওই দুই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ক্ষুদিরাম মণ্ডলের চক, কাঁটাপুকুরিয়া, তিলকপাত্রের চক, আবাদচাঁদপুর, দাইজি, মল্লারপুর, পরাণখালি, বাকাঁর দাঁড়-সহ আট-দশটি গ্রামের লাগোয়া কৃষিজমি চলে যায় বুকসমান জলের নীচে। দিনের পর দিন জল না সরায় আর চাষ করা যায় না ওই সব জমিতে। ফলে যেমন ক্ষতি হচ্ছে চাষির তেমনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষের কাজের শ্রমিকেরা। এই অবস্থায় কাজের খোঁজে চাষি থেকে শ্রমিক সকলেই অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কেউ কেউ ওই জমা জলে মাছ চাষ করে কিছুটা ক্ষতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও তার সংখ্যা খুবই নগণ্য।
চাষের জমি নাকি দিঘি? মগরাহাট-২ ব্লকে তোলা নিজস্ব চিত্র।
মঙ্গলবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল জমির পর জমি ডুবে আছে বুকসমান জলে। চারপাশে তাকালে যে কেউ বিরাট দিঘি বলে ভুল করতে বাধ্য। তারই মধ্যে ডিঙি নৌকায় কেউ কেউ বেরিয়ে পড়েছেন মাছ ধরতে। ওই মাছ ধরেই ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করবেন। স্থানীয় মল্লারপুর গ্রামের চাষি সহদেব মালিক, দাইজি গ্রামের বাসুদেব বর, গণেশ সিংহরা জানালেন, বছর কুড়ি আগে এই এলাকার এমন অবস্থা ছিল না। এলাকার খালগুলি ঠিকমতো সংস্কার না হওয়ায় পলি জমতে জমতে জল নিকাশির ক্ষমতা হারিয়েছে। আর সেই কারণেই বর্ষায় চাষের জমি ডুবে গিয়ে আমাদের ভাত মারা যাচ্ছে। চাষের সময় যদি চাষই না করতে পারি তা হলে খাবার জুটবে কোথা থেকে। অথচ প্রশাসনের কারও কোনও নজর নেই এ দিকে।’’
মগরাহাট-২ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ গৌতম সর্দার বলেন, “এই এলাকার কয়েক হাজার জমি গোটা বর্ষায় বুকসমান জলে ডুবে থাকে। ফলে চাষিরা জমিতে চাষ করতে পারেন না। গরমের সময় কেউ কেউ বোরো চাষ করলেও সেই ধানে তো আর সারা বছর সংসার চলে না। ফলে চাষিদের চরম দুর্দশা। এলাকা নীচু হওয়ায় এবং উপযুক্ত নিকাশি না থাকায় এই অবস্থা। প্রশাসনের তরফেও আজ পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ দেখা যায়নি।’’ মগরাহাট-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি খয়রুল লস্কর বলেন, “এলাকার জমা জল সরাতে হলে বাহিরপুয়া, বামনা, উস্থি, ধনপোতা, দাইজি, লক্ষ্মীকান্তপুর এলাকার খালগুলির সংস্কার প্রয়োজন। এ জন্য দরকার কয়েক কোটি টাকা। কিন্তু অত টাকা আমাদের তহবিলে নেই। সমস্যার ব্যাপারে একাধিকবার সেচ দফতর ও কৃষি বিভাগকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি।”
জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ হায়দার আলি মল্লিক বলেন, “খাল সংস্কারের জন্য সেচ দফতরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ওই খালের জল ডায়মন্ড হারবারে হুগলি নদীতে পড়ার জন্য যে ৩২টি স্লুইস গেট রয়েছে সেগুলি সারানোর জন্য ইতিমধেই রাষ্ট্রীয় কৃষি বিকাশ যোজনা থেকে ১ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা অনুমোদন হয়েছে।”
মহকুমা সেচ দফতরের সহকারি বাস্তুকার দীপক দাস বলেন, “ওই এলাকার বিভিন্ন খাল সংস্কারের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে পাশাপাশি স্থানীয় মানুষকেও সচেতন হতে হবে। কারণ খালে যত্রতত্র বাঁধ দেওয়া, জাল পেতে রাখায় জল নিকাশির ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া খালের পাড়ে দখলদারদের দাপট তো রয়েইছে। এই সব কারণেও সমস্যা হচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.