জমি নিয়ে সংঘর্ষের জেরে মঙ্গলবার ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল বারুইপুরের জয়াতলা। দু’দিন আগে, রবিবার একটি জমির দখলকে কেন্দ্র করে গুলি-বোমার সংঘর্ষে ওই এলাকায় দুই তৃণমূলকর্মীর মৃত্যু হয়েছিল। এ দিন সেখানে বহু ঘরবাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করা হয়। ঘরে ঢুকে লোকজনকে মারধরও করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
সিপিএমের অভিযোগ, এ দিন সকালে ওই দু’টি মৃতদেহ সামনে রেখে এলাকার বহু ঘরবাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করেন তৃণমূলকর্মীরা। তৃণমূল অবশ্য ওই ভাঙচুরের ঘটনায় তাদের কর্মীদের যুক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কঙ্করপ্রসাদ বারুই বলেন, “শোকমিছিল থেকে বেরিয়ে এক দল লোক এলাকার কয়েকটি দোকান ও বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে।” |
গত রবিবার দুপুরে বারুইপুরে জয়াতলা গ্রামে তৃণমূল এবং সিপিএমের সংঘর্ষে সাধন নস্কর (৩৫) ও সন্ন্যাসী নস্কর (২২) নামে দুই তৃণমূলকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সোমবার ময়না-তদন্তের পরে মৃতদেহ দু’টি রাখা হয় বারুইপুর থানায়। মঙ্গলবার সকাল ৭টা নাগাদ থানা থেকে দু’টি মৃতদেহ নিয়ে মিছিল করে জয়াতলা গ্রামে যান তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকেরা। বারুইপুর (পূর্ব) কেন্দ্রের বিধায়ক নির্মল মণ্ডল-সহ স্থানীয় তৃণমূল নেতারা ওই মিছিলে ছিলেন বলে পুলিশি সূত্রের খবর।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একটি লরিতে মৃতদেহ দু’টি আনা হয়। লরির সামনে ছিল পুলিশের একটি জিপ। সাড়ে ৮টা নাগাদ মৃতদেহ জয়াতলা গ্রামে পৌঁছতেই তৃণমূল-সমর্থক জনতা আশপাশের দোকান ও বাড়িতে হামলা চালাতে শুরু করে। একের পর এক বাড়ি এবং দোকান ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়াতলা গ্রামে ঢুকে লরি থেকে নামিয়ে মৃতদেহ দু’টি তোলা হয় সাইকেল ভ্যানে। তার পরে সেই সাইকেল ভ্যান নিয়ে গ্রামের ভিতরে মিছিল করা হয়। তখনও বেশ কিছু বাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। সিপিএমের অভিযোগ, ভাঙচুরের সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ ছিল। তাদের সামনেই ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পুলিশের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, ওই সময় ঘটনাস্থলে পর্যাপ্ত পুলিশ ছিল না। সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ অতিরিক্ত
পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কঙ্করবাবুর নেতৃত্বে বড় পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে হাজির হয়। তার পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ দিনের হামলার পরে সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “পুলিশ ও তৃণমূলের যোগসাজশে পরিকল্পনা করেই ভাঙচুর চালানো হয়েছে। মহিলা, শিশুরাও মারধরের হাত থেকে রেহাই পাননি।” ভাঙচুরের ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে এলাকার তৃণমূল বিধায়ক নির্মলবাবু বলেন, “ওখানে তো পুলিশ ছিল। যা হয়েছে, পুলিশের সামনেই হয়েছে। আমরা কী করব?”
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জয়াতলা বাজারে গোটা দশেক দোকানে তাণ্ডব চালানো য়েছে। দোকানগুলির টিনের ছাদ মাটিতে পড়ে রয়েছে। জিনিসপত্র লন্ডভন্ড হয়ে রয়েছে। বাজারের লাগোয়া কয়েকটি বাড়িতেও ঢুকে ভাঙচুর করা হয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, ঘরে ঘরে ঢুকে মারধর করেছে হামলাকারীরা। |