মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলির পারস্পারিক হনন-তপ্ত অবস্থার মধ্যেই সবাইকে কিছুটা অবাক করে ছাত্রপরিষদ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং এসএফআই, বস্তুত হাতেহাত মিলিয়ে শিক্ষক দিবস পালন করল লালবাগের সুভাষচন্দ্র সেন্টেনারি কলেজে।
যা দেখে জেলার অন্যান্য কলেজের ছাত্রসংগঠনগুলিও অনুপ্রাণিত হবে বলেই মনে করছেন রাজনীতিক থেকে শিক্ষাবিদ, সকলেই। ওই কলেজ অধ্যক্ষ প্রভাস সামন্ত অবশ্য বলেন, “আমরা যে খুব বড় কিছু করেছি, মনে করছি না। ছাত্র সংগঠনগুলিকে নিয়ে শুক্রবার বৈঠক করেছিলাম। সেখানেই সবাইকে বলা হয়েছিল, নিজেদের মধ্যে এমন হানাহানি শোভা পায় না। ছাত্রেরা আমাদের কথার দাম দিয়েছে। তারা শিক্ষকদের কথার সম্মান জানানোয় সাধুবাদ দিচ্ছি।”
বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তীতে জেলার বিভিন্ন কলেজের ছাত্র সংসদ দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্র সংঘর্ষ প্রায় নিত্য ঘটনা। ছাত্র-সংঘর্ষের জেরে পঠনপাঠনের পরিবেশ না থাকায় বেশ কিছু দিন বন্ধ ছিল বহরমপুর কলেজ। এমনকী ছাত্র-নেতাদের হাতে কলেজ অধ্যক্ষ প্রহৃত হওয়ার ঘটনাও বাদ যায়নি।
বহরমপুরের কৃষ্ণনাথ কলেজে লাগাতার ছাত্র-সংঘর্ষ চলছে। মঙ্গলবারও সেখানে টিএমসিপি-র অনুগামীরা ছাত্রপরিষদের উপরে হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ। তালিকায় রয়েছে বেলডাঙা শিউনারায়ণ ফতেপুরিয়া কলেজ এবং জঙ্গিপুর কলেজ। দু’টি কলেজই বন্ধ ছিল বেশ কিছু দিন। জিয়াগঞ্জের রানি ধ্বন্যাকুমারী কলেজেও ভাঙচুর করা থেকে কলেজ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। এই অবস্থায় লালবাগ কলেজের শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান মিলিয়ে দিয়েছে তিন পক্ষকের ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের। ওই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তিনটি ছাত্র সংগঠনই জেলার বিভিন্ন কলেজে ছড়িয়ে দিয়েছে ‘সম্প্রীতি’র বার্তা।
ব্লক তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি তথা কলেজের ছাত্র আনিসুর রহমান বলেন, “সংকীর্ণ রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রেখে সকলের উপস্থিতিতে শিক্ষক দিবসে পরিচ্ছন্ন অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলাম। ওই অনুষ্ঠানে ছাত্রপরিষদ-এর পাশাপাশি এসএফআই-এর সহযোগিতাও পেয়েছি। ওই দুটি সংগঠনের সদস্যরা পাশে এসে না দাঁড়ালে সুষ্ঠু ভাবে এত বড় অনুষ্ঠান করা সম্ভব ছিল না।”
লালবাগ কলেজ ছাত্র পরিষদের ইউনিট সভাপতি সোমনাথ প্রামাণিকও বলেন, “ছাত্র সংগঠনগুলির মধ্যে রেষারেষি তো থাকবেই। কিন্তু কলেজের সুষ্ঠু পরিবেশ নষ্ট করে অবশ্যই নয়। উপযুক্ত পঠনপাঠনের পরিবেশ বজায় রেখে কলেজ রাজনীতি করা উচিত। অনেক সময়ে আমরা তা ভুলে যাই। সংঘবদ্ধ ভাবে কলেজে শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান করে অন্যান্য কলেজে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া গিয়েছে বলেই মনে করছি।” এসএফআই-এর লালবাগ জোনাল সম্পাদক শুভাশিস মণ্ডলের কথায়, “কলেজগুলিতে যে ভাবে শিক্ষকদের হেনস্থা করা হচ্ছে, তাতে ওই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের উন্নতি করার একটা ছোট্ট প্রয়াস নেওয়া হয়েছিল। আমরা সফল। এ জন্য একক ভাবে আমাদের সংগঠনের সদস্যদের নয়, সাধুবাদ জানাচ্ছি ছাত্রপরিষদ ও টিএমসিপি-র সদস্যদেরও।” |