বিচারাধীন এক বন্দির অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘিরে তুলকালাম বাধল পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক সাব-জেলে।
সাব-জেলের ভিতরে শৌচাগার সংলগ্ন একটি ঘরে জানলার শিক থেকে গলায় গামছা বাঁধা অবস্থায় সুশান্ত বেরা (৩৩) নামে ওই বন্দির দেহটি নজরে আসে মঙ্গলবার সকালে। বেলা ১১টা নাগাদ কারারক্ষীরা দেহ উদ্ধারে গেলে অন্য বন্দিরা বাধা দেন। জেলের ভিতরে নানা অব্যবস্থা ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলে স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। নির্যাতনের পরিণতিতেই ওই বন্দির মৃত্যু হয়েছে বলে বিক্ষুব্ধ বন্দিরা অভিযোগ করেন। পরিস্থিতি সামলাতে কমব্যাট বাহিনী-সহ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা সংশোধনাগারে যান। দুপুরে আসেন কারা বিভাগের (পশ্চিমাঞ্চল) এআইজি কল্যাণ প্রামাণিক ও ডিআইজি শোভনকুমার দীন। বিক্ষুব্ধ বন্দিদের সঙ্গে আলোচনা করেন তাঁরা। বিক্ষোভের জেরে এ দিন অনেক বন্দিকেই তমলুক আদালতে হাজির করাও যায়নি।
শেষমেশ বিকেল ৩টে নাগাদ মৃত বন্দির দেহ উদ্ধার করে ময়না-তদন্তের জন্য জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। কিন্তু সেখানকার শব-ব্যবচ্ছেদের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ময়না-তদন্তের জন্য দেহটি কলকাতায় পাঠানোর সুপারিশ করেন। ফলে এ দিন আর ময়না-তদন্ত হয়নি। তমলুক সাব-জেলের সুপার তথা মহকুমাশাসক বাসব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, জেলে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় নিয়মানুযায়ী বিচারবিভাগীয় তদন্তও হবে। কারা বিভাগের এআইজি কল্যাণবাবুর বক্তব্য, “প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ, মানসিক অবসাদে আত্মঘাতীই হন ওই বন্দি।”
পুলিশ জানিয়েছে, ভগবানপুরের জগমোহনপুর গ্রামের বাসিন্দা সুশান্ত ছিলেন ডাক বিভাগের কর্মী। কর্মসূত্রে কোলাঘাট থানার মাছিনানে স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে থাকতেন। গত জুলাইয়ে আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় স্ত্রী দেবশ্রীর। বধূর পরিবার সুশান্ত ও তাঁর বাবা-মা-বোনের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ দায়ের করেন। সুশান্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বিচারাধীন বন্দি হিসাবে গত ১৫ জুলাই থেকে তমলুক সাব-জেলেই ছিলেন তিনি। আগামী শুক্রবারই তাঁকে আদালতে হাজির করানোর কথা। তার দু’দিন আগে অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় কারা-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। কী ভাবে ওই বন্দি রক্ষীদের চোখ এড়িয়ে গামছা নিয়ে শৌচাগারের পাশের ঘরে গেলেন, সেই প্রশ্নও উঠেছে। সুশান্তবাবুর কাকা গৌরাঙ্গমোহন বেরা, বোন মমতা সাউদের অভিযোগ, “জেলে নির্যাতনের জেরেই ওর মৃত্যু হয়েছে।” এ দিন অবশ্য কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি সুশান্তের পরিবারের তরফে। |