তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’
নন্দীগ্রাম-খেজুরির সম্মেলন অন্যত্র, সিদ্ধান্ত সিপিএমের
চার বছর আগের জমিরক্ষার আন্দোলনের জেরে সেই যে ‘ভিত নড়েছিল’, নন্দীগ্রামে এখনও তা মেরামত করতে পারল না সিপিএম। অবস্থা এমনই, চলতি মাস থেকেই শুরু হতে চলা দলের লোকাল, তার পরে জোনাল কমিটি পর্যায়ের সম্মেলন পর্যন্ত অন্যত্র করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সিপিএম নেতৃত্ব। একই হাল একদা ‘দুর্গ’ খেজুরিতেও। সাংগঠনিক ভাবে এতটাই ‘দুর্বল’ দল, যে সেখানকার লোকাল-জোনাল সম্মেলনও হবে এলাকার বাইরে। নন্দীগ্রামের সম্মেলনগুলি চণ্ডীপুরে ও খেজুরির সম্মেলনগুলি হলদিয়ায় করার সিদ্ধান্ত হয়েছে দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর শনিবারের বৈঠকে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নিরঞ্জন সিহির বক্তব্য, “জেলায় তৃণমূলের আক্রমণে কয়েকশো পরিবার ঘরছাড়া। অনেককে চাষ করতে দেওয়া হচ্ছে না, জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। দলের বহু কার্যালয়ও দখল হয়ে গিয়েছে। নজিরবিহীন আক্রমণের মুখে পড়েই নন্দীগ্রাম-খেজুরির সম্মেলন অন্যত্র সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।” তবে তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা জুলুম-সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মামুদ হোসেনের পাল্টা দাবি, “নন্দীগ্রাম, খেজুরিতে যে সব সিপিএম নেতা-কর্মী এক সময়ে জুলুম-সন্ত্রাস চালিয়েছেন, জনরোষ থেকে বাঁচতে তাঁরা নিজেরাই এলাকাছাড়া হয়েছেন। সাধারণ সিপিএম সমর্থকরা নির্ভয়ে এলাকাতেই রয়েছেন। জরিমানা আদায়, চাষ করতে না দেওয়ার অভিযোগও মনগড়া।” ওই তৃণমূল নেতার ‘কটাক্ষ’, “মানুষের দরবারে প্রত্যাখ্যাত হয়ে এখন মুখ লুকোনোর নানা অজুহাত খুঁজছে সিপিএম।”
নন্দীগ্রামের আন্দোলনের ‘ধাক্কা’য় ২০০৮-এর পঞ্চায়েত, ২০০৯-এর লোকসভা এবং ২০১০-এর পুরসভা নির্বাচনে জেলায় পর্যুদস্ত হয় সিপিএম। যার জেরে আগেই নন্দীগ্রাম-খেজুরির একাধিক লোকাল-জোনাল কমিটি ভেঙে সাংগঠনিক কমিটি গড়েছিলেন দলীয় নেতৃত্ব। চলতি বছর বিধানসভা ভোটের আগে নেতারা ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র দাবি করলেও, ফের ‘বিপর্যয়ের’ই মুখে পড়ে দল। নন্দীগ্রাম, খেজুরি-সহ জেলার ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রেই বাম-প্রার্থীরা হেরে যান। সম্প্রতি মূল্যবৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্নীতি নিয়ে জেলা-সদরে বিক্ষোভ-জমায়েত করলেও জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় কার্যত কোনও কর্মসূচিই নিতে পারছে না সিপিএম। ‘পরিস্থিতি’র জন্য প্রকাশ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে জুলুম-সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলার পাশাপাশি, একান্তে তাঁরা মানছেন, দলের বহু সদস্যই ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে গিয়েছেন। কোথাও কোথাও শাখা-স্তরের এক জন সদস্যও আর সক্রিয় নেই। এর মধ্যে সবচেয়ে ‘খারাপ অবস্থা’ নন্দীগ্রাম-খেজুরিতেই।
সিপিএম সূত্রের খবর, সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে জেলা নেতৃত্ব ‘তৃণমূলের সন্ত্রাস’ নিয়ে রীতিমতো পরিসংখ্যান পেশ করেন। নেতৃত্বের অভিযোগ, দলের সমর্থক ৬৩৫টি পরিবার ভোটের ফলপ্রকাশের পর ঘরছাড়া হয়েছেন। ৬৩২ একর জমিতে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের চাষ করতে দেওয়া হচ্ছে না। ইতিমধ্যে দলের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা ‘জরিমানা’ও আদায় করেছে তৃণমূল। আক্রমণের মুখে দলের অনেক নেতা-কর্মীই নতুন করে ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে পড়েছেন। ফলে, ‘দুর্বল’ হচ্ছে সংগঠন। ব্যাহত হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মসূচি। দল সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্মেলন-পর্ব শুরুর আগেই শাখা, লোকাল ও জোনাল কমিটিগুলির বর্তমান ‘পরিস্থিতি’ নিয়ে বিশদে রিপোর্ট তৈরিরও সিদ্ধান্ত হয়েছে ওই বৈঠকে। শাখা, লোকাল ও জোনাল কমিটির সদস্যদের কত জন সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয়, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন হচ্ছে কি নাসে-সব বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত নেতাদের।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.