তৃণমূলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষ, দ্বন্দ্ব কংগ্রেসের সঙ্গেও
টানা তিন দিন ধরে তৃণমূলের গোষ্ঠী-সংঘর্ষ চলছে কেশপুরে। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের ডেকে জেলা নেতৃত্ব সতর্ক করার পরেও বিবাদ থামেনি। পুলিশকে গিয়ে সংঘর্ষ থামাতে হয়েছে। এরই মধ্যে আবার দাঁতন-২ ব্লকের শাবড়ায় কংগ্রেসের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়িয়ে পড়ল প্রধান শাসকদল।
শাবড়া গ্রামে কংগ্রেস সমর্থকদের বাড়ি ভাঙচুর ও কংগ্রেস কর্মীদের মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। পুলিশ গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ বাবুলের বাড়ি থেকে বোমা-গুলিও উদ্ধার করেছে। সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ তৃণমূল সমর্থককে গ্রেফতারও করেছে। সংঘর্ষে দু’পক্ষের জনা দশেক কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। অন্তত কুড়িটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় পুলিশ ক্যাম্প বসেছে।
শাবড়ার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে কংগ্রেস। জেলা কংগ্রেস সভাপতি স্বপন দুবে বলেন, “বদলা নয়-বদল চাই, আর চাই উন্নয়ন--মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই শ্লোগান আমাদেরও মনের কথা। কিন্তু সেই শ্লোগান যেন দেওয়ার অধিকারটুকুও নেই আমাদের। আগ্নেয়াস্ত্রধারী কিছু মানুষ যা বলার বলবেন, এটা যেন দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবাদ করাতেই আমাদের কর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে, মারধর করা হয়েছে।” পুরো ঘটনা প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বকেও জানিয়েছেন স্বপনবাবু। তাঁর কথায়, “শাবড়া গ্রামে দ্রুত শান্তির পরিবেশ না ফিরে এলে আমরণ অনশনের পথে যাব। অরাজক পরিস্থিতি মেনে নেব না।”
শাবড়া গ্রামে বাড়ি ভাঙচুর। নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রায় সর্বত্রই এই ধরনের ঘটনায় নাজেহাল জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব শনিবার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “কিছু নব্য তৃণমূল কোথাও কোথাও অশান্তি পাকাচ্ছে। সিপিএমও কায়দা করে কিছু মানুষকে অশান্তি ছড়ানোর কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু আমরা তা হতে দেব না। কোন ঘটনা কী কারণে ঘটছে সে নিয়ে ব্লক নেতৃত্বের কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট চেয়েছি। শনিবারের বৈঠকে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।” রাজ্য নেতৃত্বও জেলা তৃণমূলকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলেই দীনেনবাবু জানিয়েছেন। পুলিশও যাতে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে, শান্তি স্থাপনে কড়া পদক্ষেপ করেসে জন্যও পুলিশকে জানানো হয়েছে বলে দীনেনবাবুর দাবি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত থেকেই শাবড়া গ্রামের পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে। গ্রামের তৃণমূল কর্মী শেখ মোফাজলের বাড়ির সামনে দিয়ে একটি রাস্তা গিয়েছে। ওই রাস্তা দিয়েই গ্রামের মানুষ যাতায়াত করেন। মোফাজলের দাবি, তাঁর জমির উপর দিয়ে জোর করে রাস্তা বানিয়েছিল সিপিএম। এখন তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে। ফলে এ বার জমির দখল নেবেন তিনি। গ্রামের মানুষ আর ওই রাস্তা ব্যবহার করতে পারবেন না। রাস্তাটি তিনি বেড়া দিয়ে ঘিরেও দেন। গ্রামের মানুষ প্রতিবাদ করেন। কিন্তু তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী মোফাজলকেই সমর্থন করে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন হল শাবড়া গ্রামের কিছু মানুষ কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে যেমন অতীতে সিপিএম করতেন এমন লোকজনও আছেন, তেমনই কিছু তৃণমূল সমর্থকও রয়েছেন। ফলে কংগ্রেসের উপরে তৃণমূলের একটা ক্ষোভ ছিলই। রাস্তা নিয়ে বিবাদে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর ক্ষোভ গিয়ে পড়ে কংগ্রেস সমর্থকদের উপরেই।
গ্রামবাসীরা জমায়েত করে রাস্তা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানালে কিছু তৃণমূল সমর্থক বোমাবাজি করে বলে অভিযোগ। বোমাবাজির ফলে গ্রামের অনেকে পালিয়ে যান। তখনই বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়। খবর যায় পুলিশে। বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে। খড়্গপুরের এসডিপিও দীপক সরকার বলেন, “এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শেখ বাবুলের বাড়ি থেকে ৬টি বোমা ও ৩ রাউন্ড গুলি পাওয়া গিয়েছে। তবে বাবুল পলাতক।”
অন্য দিকে, কেশপুরের পঞ্চমী ও মুগবসান এলাকার পরিস্থিতি এখনও থমথমে। দু’টি এলাকাতেই পুলিশি টহল চলছে। অভিযোগ, তৃণমূলের এক গোষ্ঠী অন্য গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে তোলাবাজি, সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার ও সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে আনে। তার পরই দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদ-সংঘর্ষ শুরু হয়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.