নাশকতার নয়া ছক
খনি প্রযুক্তি ব্যবহার করে আঘাত হানছে মাওবাদীরা
নিতে বিস্ফোরণ ঘটানোর পদ্ধতি প্রয়োগ করে নাশকতা ঘটাচ্ছে মাওবাদীরা। জঙ্গলের পথে পায়ে হেঁটে সন্তর্পণে এগিয়ে আসা যৌথ বাহিনীর একটা বড় অংশকে এক ধাক্কায় উড়িয়ে দিতে বহুলপ্রচলিত বৈদ্যুতিক তারের বদলে ‘কোডেক্স তার’ ব্যবহার করে আঘাত হানার কৌশল ক্রমশ বাড়ছে। ঝাড়খণ্ডের লাতেহারে যৌথ বাহিনীর সদ্য শেষ হওয়া অভিযানের শেষে মাওবাদীদের নাশকতার এই নয়া কৌশল টের পেয়েছে পুলিশ।
লাতেহারে সিপিআই (মাওবাদী)-র কোয়েল-শঙ্খ জোনের সদর দফতর সরযূ গ্রামের আশপাশে অভিযান চালিয়ে এ বার ৪০০০-৪৫০০ মিটার লম্বা কোডেক্স তার উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনী। গারু থানা এলাকায় চাঁচো গ্রামে অভিযান চালিয়ে এ যাত্রা লুকনো এই তারের হদিস আগে পেয়ে যাওয়ায় অল্পের জন্য বড়সড় নাশকতার হাত থেকে রেহাই পান নিরাপত্তাকর্মীরা। কিন্তু মাস চারেক আগে লোহারদাগায় ধরধরিয়া জলপ্রপাতের কাছে অভিযান চালিয়ে ফেরার সময়ে একই পদ্ধতিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ১০ জন সিআরপি জওয়ান ও এক অফিসারকে হত্যা করে জঙ্গিরা।
খনিতে বিস্ফোরণের এই কৌশল জঙ্গিরা খাটাতে শুরু করায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন পুলিশ। ঝাড়খণ্ডে খনির ছড়াছড়ির দরুণ খনিতে ব্যবহৃত কোডেক্স তার মাওবাদীদের হাতে চলে আসার বিষয়টি পুলিশকর্তারাও স্বীকার করছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই পদ্ধতিতে বিস্ফোরণের ছক এখনও বন্ধ করা যাচ্ছে না। সিআরপি-র ডিআইজি (রাঁচি) বিজেন্দ্রকুমার শর্মা বলেন, “একসঙ্গে পুলিশ বা আধা-সামরিক বাহিনীর যত বেশি সম্ভব ক্ষতি করার লক্ষ্যে বিস্ফোরণের এই কৌশল সব থেকে বিপজ্জনক। লোহারডাগার বিস্ফোরণ-কাণ্ডে এর শক্তি মালুম হয়। সেখানে কোডেক্স তারের মাধ্যমে যুক্ত ১৮৯টি বিস্ফোরক এক সঙ্গে ফাটতে শুরু করায় বহু জওয়ান এক সঙ্গে অসহায়ের মত ফাঁদে পড়ে যান।” জঙ্গিদের হাতে বিপদের কথা ভেবেই বিস্ফোরক-বিশেষজ্ঞরা এ দেশে খনিতে তরল বিস্ফোরক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন। পুলিশেরও ধারণা, তরল বিস্ফোরক জঙ্গিদের হাতে এলেও তা থেকে এত বড় বিপদ ঘটানো সম্ভব হবে না। মাওবাদী-অধ্যুষিত বিভিন্ন জেলায় কতর্ব্যরত পুলিশের তরফে বার বার উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের খনির প্রযুক্তি জঙ্গিদের হাতে আসার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু বিপদের ঝুঁকি এখনও কমেনি।
ঠিক কী ভাবে বিশাল পুলিশ-বাহিনীকে ফাঁদে ফেলে কোডেক্স তার? মাওবাদী-দমনে ঝাড়খণ্ডের বিশেষ বাহিনী জাগুয়ারের এসপি দেওবিহারী শর্মা এখন লাতেহারের ভারপ্রাপ্ত এসপি। তিনি বলেন, “বৈদ্যুতিক তারের সাহায্যে মাইন বিস্ফোরণের সীমা তত বেশি নয়। কিন্তু কোডেক্স তারের মাধ্যমে শক-ওয়েভে বিস্ফোরণের সীমানা বিস্তৃত হয়। সেকেন্ডে ৪৫০০ মিটার জুড়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। তাই এক জায়গায় পুরোটা বিস্ফোরক না-জমিয়ে মাওবাদীরা অল্প-অল্প বিস্ফোরক তারের মাধ্যমে জুড়ে ছড়িয়ে দেয়।” লোহারডাগার ঘটনাটিতে কার্পেটের মত বিছানো ১৮৯টি বিস্ফোরক একসঙ্গে ফাটানো হয়েছিল। ৮০০ বর্গ মিটার জুড়ে পাতা ছিল মৃত্যুফাঁদ। লাতেহার ও পলামুতে কিছু দিন আগেও কোডেক্স তারের ফাঁদ টের পায় পুলিশ। এ বার চাঁচো গ্রামে কোডেক্স তারে যুক্ত ৩৫টি বিস্ফোরক-ঠাসা দুধের ক্যানের হদিস মিলেছে।
সারান্ডার পাশাপাশি, এই বর্ষায় লাতেহার, গুমলা ও লোহারদাগায় অভিযান চালিয়েও সফল যৌথ-বাহিনী। গারু থানা এলাকার দুর্গম গ্রাম সরযুতে হানা দিয়ে জঙ্গিদের বিস্ফোরক তৈরির বিশাল ঘাঁটি নিকেশ করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, সাব-জোনাল কম্যান্ডার সুরেন্দ্র ওরফে বিনোদ লোহরা ও সাবির খান নামে দুই দাগি জঙ্গি ধরাও পড়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.