...গন্ধ এসেছে
লুপ্তপ্রায় শিল্প থেকে
পুরাণ, মণ্ডপসজ্জায় সবই
সে কবেকার কথা। দিনক্ষণ ঠিক মনে পড়ে না। ছেলেবেলা থেকেই মনে হত, কত তো ভাবার বিষয়। সেগুলোর সঙ্গে মিশে থাকে কত কল্পনা, কখনও বা স্মৃতিও। কেমন হয় যদি সেই ভাবনাগুলোকে এক সুতোয় গাঁথা যায়? সেই থেকেই শুরু। রেখার মাধ্যমে ফুটে উঠতে লাগল বিভিন্ন ভাবনার টুকরো টুকরো কোলাজ। তৈরি হল আশ্চর্য এক শিল্প। সযত্নলালিত সেই শিল্পের চিরকালীন আবেদন পৌঁছল অন্যের মনের আঙিনায়। কিন্তু কোনও জিনিস তৈরি করা যত সহজ, রক্ষা করা বোধহয় ততোধিক কঠিন। কিছু বছর পর থেকেই গোল বাধল সেই শিল্পকে রক্ষা করা নিয়ে। ক্রমেই হারিয়ে যেতে থাকল তা। সব দেখে শুনে মনে হল, এই পুজোর মরসুমে যদি সেই ‘হারানিধি’ ফিরিয়ে দেওয়ার একটা সামান্য চেষ্টা করা যায়, তা হলে মন্দ কী! তাই যাঁরা শিল্পের শিকড় সন্ধানে উৎসুক, তাঁদের জন্য সুসংবাদ। ‘দমদম পার্ক সর্বজনীন’-এর হীরক জয়ন্তী বর্ষের পুজো সেই সব রসিকজনের জন্য সাজিয়ে তুলবে বাংলার পটচিত্র। দেবদেবীর আরাধনা থেকে সাংসারিক নানা ভাবনা, সবই ফুটে উঠত পটশিল্পের সূক্ষ্ম কারুকাজে। এই পুজোর মণ্ডপসজ্জা দেখে আপনার মনে পড়তে পারে শিল্প-সমৃদ্ধ এক টুকরো বাংলার কথা।
কোনও জিনিসের সাধনা করতে গেলে প্রয়োজন হয় বিবিধ উপকরণের। মা দুর্গার আরাধনার সঙ্গে যে উপকরণ সমার্থক হয়ে গিয়েছে, তার নাম চালচিত্র। ইতিহাস খুঁজলে দেখা যাবে, প্রাচীন রাজবংশ ও জমিদারবাড়ির পুজোয় চালচিত্র যোগ করত এক নান্দনিক মাত্রা। তার শৈল্পিক উপস্থাপনা বহন করত জমিদারবাড়ির গরিমা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তনশীল সব কিছুই। সে থেকে বাদ যায়নি চালচিত্রও। বিভিন্ন ধরনের চালি আজ লুপ্তপ্রায়। গড়িয়ার ‘বিধানপল্লি পূর্বপাড়া’ও তাই প্রথাগত পথ থেকে বেরিয়ে হাঁটতে চেয়েছে একটু অন্য ভাবে। বিভিন্ন কল্কা ও ছবির সাহায্যে তাঁরা মণ্ডপসজ্জায় ফুটিয়ে তুলবেন লুপ্তপ্রায় চালচিত্রের সৌন্দর্য।
শোলা দিয়ে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপসজ্জার উপকরণ। মঙ্গলবার, কুমোরটুলিতে। ছবি: রাজীব বসু।
সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে তৈরি হবে মণ্ডপ অলঙ্করণের সঙ্গে বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবের আত্মিক যোগসূত্র।
কবি লিখে গিয়েছেন, ‘গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ, আমার মন ভুলায় রে।’ নগরায়নের চাপে আজ আমরা ভুলতে বসেছি শস্যশ্যামলা সেই গ্রামবাংলাকে। আধুনিক প্রজন্মের কাছে গ্রাম আজ শুধুই অতীত। গ্রামের মাটির সঙ্গে মানুষের যে নাড়ির টান, তারই ছোঁয়া মিলবে কানাই ধর লেনের ‘অধিবাসীবৃন্দ’র পুজোয়। ৫০ শরৎ পেরিয়ে এই পুজোর এ বারের ভাবনা ‘ফিরে চল মাটির টানে’।
‘মাটিতে জন্ম নিলাম, মাটি তাই রক্তে মিশেছে।’ সভ্যতার উন্মেষ থেকে কৃষ্টি-সংস্কৃতির পরতে পরতে জড়িয়ে আছে মাটির সোঁদা গন্ধ। যাপনশৈলীতে, লোকায়ত ও নাগরিক সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে সেই পরশ পাওয়া যাবে ‘সিঁথি মুন্সির বাগান সর্বজনীন’-এ। মণ্ডপের দু’পাশে ঘট দিয়ে নানা কারুকাজ। মূল মণ্ডপে উজ্জ্বল রূপে বিরাজমান মহামায়া। থাকছে মধুবনী চিত্রকলার কাজও।
অতীতকে সঙ্গে নিয়েই পথচলা মানুষের। দীর্ঘ অতীতে ফিরে ফিরে আসে কত বিশ্বাস, পুরাণকাহিনি কত। ব্রহ্মার সঙ্গে মন্ত্রণা করে বিষ্ণু যখন তাঁর সুদর্শন চক্রের আঘাত নামিয়ে আনেন সতীর উপরে, সতীর দেহ খণ্ডিত হয়ে পড়ে বিভিন্ন স্থানে। পরবর্তীকালে সেখানেই গড়ে উঠেছে একান্নটি পীঠ। সেই একান্ন পীঠ ছুঁয়েই এ বারের যাত্রা বাগমারি ‘আবাসিকবৃন্দ’র। পুরাণের সঙ্গে আধুনিকতা মিশে যাবে এখানে। কে বলতে পারে, হয়তো অজান্তেই গড়ে উঠবে এক পিছুটানের সম্পর্ক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.