নিজস্ব সংবাদদাতা • ইলামবাজার |
আস্থাভোটে সভাপতির বিপক্ষে ভোট দিলেন সিপিএম সদস্যেরাই। আর তার জেরে পদচ্যুত হলেন সিপিএম পরিচালিত ইলামবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসিত সেনগুপ্ত। এই ঘটনাকে ঘিরে সিপিএম-তৃণমূল চাপানউতোর শুরু হয়েছে।
স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অসিতবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছিলেন ওই পঞ্চায়েত সমিতির ১৩ জন সদস্য। তাঁদের মধ্যে ছিলেন বামফ্রন্টের ১১ জনও (সিপিএম ১০ এবং আরএসপি ১) সদস্যও। গত ২৪ অগস্ট বোলপুরের মহকুমাশাসক দেবাশিস নন্দীর কাছে অনাস্থা প্রস্তাব জমা পড়ে। মঙ্গলবার আস্থাভোটের দিন ধার্য করেছিল প্রশাসন। মহকুমাশাসক এ দিন বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা গৃহীত হয়েছে। নিয়ম মেনে পরবর্তী সভাপতি নির্বাচন হবে।” এ দিন ১১-১ ভোটের ব্যবধানে পরাস্ত হন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি।
প্রসঙ্গত, মোট ২২ আসনের ইলামবাজার পঞ্চায়েত সমিতিতে দলগত অবস্থান হল: সিপিএম ১৮ এবং তৃণমূল, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক ও পিডিসিআই ১টি করে আসন। ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে সভাপতি নির্বাচিত হন অসিতবাবু। অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে সভাপতির বিরুদ্ধে সমিতির একমাত্র তৃণমূল সদস্য আবুল কালামের আনা অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেন সিপিএমের ১০ জন এবং পিডিসিআই এক জন সদস্যও (মোট ১৩ জন)। ওই অনাস্থা প্রস্তাবে সই করা দু’জন সিপিএম সদস্য গত ১৭ ও ১৮ অগস্ট মহকুমাশাসকের কাছে পদত্যাগের আবেদনও করেন। মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে পদত্যাগের শুনানির দিন ধার্য হয় ২৪ অগস্ট। ওই দিনই বাকি ১১ জন সদস্য সভাপতিকে অপসারণের লিখিত আবেদন জমা দেন। দুই সিপিএম সদস্যের পদত্যাগ গৃহীত করে প্রশাসন মঙ্গলবার আস্থাভোটের দিন ধার্য করে।
বোলপুরের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট বরুণ মুখোপাধ্যায় ও ইলামবাজারের যুগ্ম-বিডিও বাবলু সাঁতরার উপস্থিতিতে এ দিন ভোটাভুটি হয়। ফরওয়ার্ড ব্লকের এক জন এবং সিপিএমের ৭ জন সদস্য ভোটের সময় গরহাজির ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত সমিতির ১২ জন সদস্যসিপিএমের ৯ জন (কারণ ইতিমধ্যেই দুই সিপিএম সদস্য পদত্যাগ করেছেন), আরএসপি, পিডিসিআই এবং তৃণমূলের এক জন করে। গোপন ব্যালটে ভোটাভুটি করার প্রস্তাব দেন সিপিএম সদস্য প্রতিশঙ্কর বাগদি। ১১ জন অনাস্থার পক্ষে ভোট দেন। এক জন ভোট দেন অনাস্থার বিপক্ষে।
অপসারিত সভাপতি অসিতবাবুর দাবি, “আমার বিরুদ্ধে আনা স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ভয় দেখিয়ে, জোর করে তৃণমূল এলাকার বিভিন্ন পঞ্চায়েত দখল করেছে। এ বার ওরা পঞ্চায়েত সমিতি দখলে নেমেছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শেখ ইসলাম বলেন, “দলীয় কিছু সদস্য যে ওই অনাস্থায় সই করেছিলেন, তা আমরা জানতাম। কিন্তু এ দিন দলের সভাপতির বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় তা আরও স্পষ্ট হল। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” একই সঙ্গে অসিতবাবুর সুরেই তাঁর অভিযোগ, “রাজ্য জুড়ে তৃণমূল সন্ত্রাস করে, প্রলোভন দিয়ে পঞ্চায়েত দখলে নেমেছে। এখানেও তাই হয়েছে।”
এই অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর দাবি, “পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যেরা ভুল বুঝতে পেরেছেন। তাই এখন দুর্নীতি, স্বজনপোষণের প্রতিবাদ করছেন। জোর খাটানোর কোনও প্রশ্নই ওঠে না।” আস্থাভোটে জয়ের পরে এ দিন ইলামবাজারে ঘুরিষা থেকে নির্বাচিত সদস্য আবুল কালামকে নিয়ে বড় মিছিলও করে তৃণমূল। |