স্বপ্ন ছিল, এক দিন ভাল গোলরক্ষক হবে। তাই স্কুল ছুটির পরেই সহপাঠীদের জুটিয়ে নিয়ে হাজির হয়ে যেত হরিবাজার ফুটবল মাঠে। দুর্গ আগলানোর ঢঙে সোজা গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ত বারপোস্টের নীচে। কিন্তু মঙ্গলবার বিকাল ৪টা নাগাদ সেখানেই ঘটে গেল মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। খেলতে খেলতে মাথায় লোহার বারপোস্ট ভেঙে পড়ে মারা গেল হরিবাজার প্রাথমিক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া আইনুল আনসারি (১০)। পাড়ার সকলের প্রিয় ‘ছোটবাবু’।
এ দিন পুরসভার ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের হরিবাজার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ছোটবাবুর মাথা থেঁতলে গিয়েছে। চেনার বিশেষ উপায় নেই। অদূরে পড়ে রয়েছে মরচে ধরা বারপোস্ট। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় দেড় দশক আগে ওই বারপোস্টের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল একটি বেসরকারি সংস্থা। তারপর থেকে আর তা বদলানো হয়নি। রোদে-জলে বারপোস্টের নীচের অংশে মরচে ধরে গিয়েছিল। তবু সেই মাঠেই খেলত খুদেরা। বিপদের কথা আন্দাজ করতে পারেননি বড়রাও। তবে কিছু দিনের মধ্যে ওই মাঠে একটি ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করার পরিকল্পনা নিয়েছে স্থানীয় একটি ক্লাব। তারা বারপোস্ট বদলাতে উদ্যোগীও হয়েছে। সরঞ্জাম কিনেও ফেলা হয়েছে। কিন্তু তা লাগানোর আগেই ঘটে গেল দুর্ঘটনা। |
আইনুলের মা সারিনা বিবি। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
প্রত্যক্ষদর্শী সেভাবে কেউ ছিলেন না। দুর্ঘটনার পরে আইনুলের সঙ্গীরাই বাড়ি গিয়ে বড়দের খবর দেয়। মাঠে গিয়ে পাড়ার বাসিন্দারা দেখেন, মৃত আইনুল পড়ে রয়েছে মাঠে। আইনুলের বাবা তাবারা আনসারি পেশায় ভ্যানচালক। চার দিদি ও দুই দাদার পর ছোট্ট আইনুল ছিল পরিবারের সবচেয়ে আদরের। খেলাধুলা ভালোবাসত, তাই পাড়াতেও কদর ছিল তার। স্থানীয় বাসিন্দা শেখ আবদুল রহিম, শেখ সাবিরউদ্দিনরা জানান, আইনুলের ফুটবল ভালবাসত। অন্যরা অনুশীলনে প্রায়ই অনিয়মিত থাকলেও আইনুল প্রতিদিন মাঠে যেত। শুধু তাই নয়, খেলা যাতে চালু করা যায় সেজন্য কয়েক জনকে জুটিয়েও নিত। তার সর্বক্ষণের সঙ্গী দ্বিতীয় শ্রেণির পারসিনা খাতুন বলে, “এ দিন স্কুল ছুটির পরে দু’জনে মিলে মাঠের পাশের দোকানে চকোলেট কিনে খাই। এরপর আইনুল চলে যায় মাঠে। কিছুক্ষণ পরেই দুঃসংবাদ পাই।” আইনুলের মা সারিনা বিবি ও অন্যান্য পরিজনেরা মাঠে বসেই বিলাপ করতে শুরু করেন।
স্থানীয় কাউন্সিলর তপন ঘোষ জানিয়েছেন, তিনি বিশেষ কাজে আসানসোলে ছিলেন। দুর্ঘটনার খবর পেয়েই তিনি থানায় খবর দেন। মিনিট দশেকের মধ্যে পুলিশ চলে আসে। পরে পুলিশ মৃতদেহ ময়না-তদন্তের জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠায়। তপনবাবু বলেন, “মর্মান্তিক ঘটনা। এরকম যে ঘটে যাবে কেউ আন্দাজ করতে পারেননি।” |