|
|
|
|
মমতার সাক্ষাৎ পাননি মৌসম |
মালদহে ফুঁসছে নদী, ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
গঙ্গা, ফুলহারের জল বেড়েই চলেছে। নদীর জল ঢুকে রতুয়া, মানিকচক, কালিয়াচক, হরিশ্চন্দ্রপুরের শতাধিক গ্রাম প্লাবিত। জলমগ্ন এলাকায় ত্রাণ পৌঁছচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। দ্রুত ত্রাণ পৌঁছনোর পাশাপাশি ওই সব এলাকাকে সরকারি ভাবে বন্যা প্লাবিত হিসেবে ঘোষণার দাবি তুলেছেন রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র।
|
|
পুনর্ভবার স্রোতে তলিয়ে গিয়েছে নদীবাঁধ। তপন ব্লকের বজ্রপুকুর এলাকায়।
শুক্রবার বালুরঘাটে অমিত মোহান্তের তোলা ছবি। |
মালদহের বন্যা পরিস্থিতি এবং ত্রাণের অপ্রতুলতার অভিযোগ নিয়ে কথা বলতে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছিলেন কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নুর। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের তরফে সেই সময় মেলেনি। মৌসম বলেন, “মালদহের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হচ্ছে। কোথাও কোথাও ত্রাণের অপ্রতুলতার অভিযোগও আছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আমি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু সময় পাওয়া যায়নি। তাই দিল্লি গিয়ে এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেব। কেন্দ্রীয় সরকারকেও জানাব।”
মালদহ জেলার তিনটি প্রধান নদী গঙ্গা, ফুলহার ও মহানন্দার জল হু হু করে বাড়ছে। সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার সুব্রত মজুমদার বলেন, “গঙ্গা চরম বিপদসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। ফুলহার ২৪ ঘণ্টায় দুই ফুটের উপর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮.৩৩ মিটারে। বিগত ৭ বছরে গঙ্গা ও ফুলহারের জলস্তর এত বাড়েনি। গঙ্গার জলস্তর বেড়ে যাওয়ার ফলে কামালতিপুর ও সাকুল্লাপুরের কাছে বাঁধ বিপন্ন হয়ে পড়েছে।”
জল বাড়ছে দক্ষিণ দিনাজপুরের আত্রেয়ী, পুনর্ভবা ও টাঙন নদীতে। তিনটি নদীতেই জল বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। বালুরঘাট শহরের তিনশো পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানো হয়েছে। আত্রেয়ীর জলে প্লাবিত হয়েছে পতিরাম কলেজ। ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ওই কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। পুনর্ভবার বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। সেখানে বাঁধের ফাটল দিয়ে জল ঢুকে প্লাবিত হয়েছে লক্ষ্মীনারায়ণপুর, শুকদেবপুর, কাঁটাবাড়ি, রামপাড়া চেঁচড়া ও নওগাঁর একাংশ। উত্তর দিনাজপুর জেলাতেও নাগর ও টাঙন নদীতে জলস্ফীতির জেরে আলতাপুর-১ ও ২ এবং রসাখোয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ৩০টি গ্রামে জল ঢুকেছে। নাগর নদীর জল ঢুকেছে রায়গঞ্জের জগদীশপুরে। অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রসন্ন মণ্ডল জানান, দুর্গতদের ত্রাণ বিলি করা হয়েছে। |
|
ফুলহারের জলে প্লাবিত রতুয়া। শুক্রবার বাপি মজুমদারের তোলা ছবি। |
ফুলহারের উপচে পড়া জলে হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের ১১টি গ্রাম তলিয়ে গিয়েছে। এলাকার ৭০০ পরিবার ঘর ছেড়ে বাঁধে বা মাচায় আশ্রয় নিয়েছেন। ত্রাণ পৌঁছয়নি। হরিশ্চন্দ্রপুর-২ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা সিপিএমের সুধীর যাদব বলেন, “জলবন্দি এলাকায় ছিটেফোঁটা ত্রাণ পৌঁছয়নি। এমনকী জলবন্দি মানুষদের উদ্ধার করতে একটি নৌকাও পাঠানো হয়নি।” এই প্রসঙ্গে সাবিত্রীদেবী বলেছেন, “ত্রাণসামগ্রী ঠিকমতো বিলি হচ্ছে না। জেলাশাসককে বলেছি, কারও হাতে ত্রাণ দেবেন না। সমস্ত দলের প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে বন্যা কবলিত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ বিলি করুন।”
ত্রাণ শিবিরে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন পশ্চিম রুকুন্দিপুরের বাসিন্দা দুলাল বসাক। তিনি বলেন, “জলে সব ভেসে গিয়েছে। যে খাবারটুকু এনেছিলাম তা দু’দিনেই শেষ।” আজিজটোলার জেসারত আলি, চাঁদপুরের শেখ আবুজাররা গরু, ছাগল, মুরগির সঙ্গেই ঠাসাঠাসি করে রয়েছেন। কেউ ত্রাণ পাননি।
মালদহের জেলাশাসক রাজেশ সিংহ অবশ্য দাবি করেছেন, “কোথাও ত্রাণের অভাব হওয়ার কথা নয়। সবর্ত্র ত্রাণ পৌঁছে দিতে আজ সবর্দলীয় বৈঠক হয়। পাশাপাশি, বন্যা কবলিত এলাকার বিডিওদের স্থানীয় ভাবে শুকনো খাবার কিনে বিলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” |
|
|
|
|
|