একটা সময় ছিল যখন সাত-সকালেই কলেজের পাশে বসে যেত যত্ত সব রং-চঙে গয়নার পসরা। তাদের অমোঘ হাতছানি উপেক্ষা করা ছিল বড়ই কষ্টকর। ক্লাস কেটে সব ভিড় জমাত। পকেটমানি বাঁচিয়ে দেদার কেনাকাটা। কী নেই? কাচের চুড়ি, পাথর-সেটিং ব্রেসলেট, ঝোলা দুল, অক্সিডাইজ্ড সেট, এমনকী বাঁশ বা পোড়া-মাটির গয়না অবধি। নতুন পোশাক কিনলেই তো চাই ম্যাচিং নতুন গয়না। আর বাড়ি ফিরেই বকুনি। কী সব ছাইপাঁশ কিনে এনেছিস? কয়েক দিন পর মন উঠে গেলেই সব ডাস্টবিনে। টাকার শ্রাদ্ধ। ‘তার চেয়ে সোনার কিছু কেন, থেকে যাবে।’ সঙ্গে সঙ্গেই পাল্টা জবাব, সোনার গয়নায় ফ্যাশন কই? কলেজে রোজ একই গয়না পরলে, জাস্ট প্রেস্টিজ পাংচার। তার ওপর ভিড় বাসে কে কখন দেবে টান। গলা আগলে বসে থাকো.....এই নিয়ে মা-মেয়ের একপ্রস্থ গজগজানি। |
দিন বদলেছে। দামের যা বহর, এখন কোন মা আর তাঁর কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে বলতে পারেন দু’একটি সোনার গয়না কিনতে। তবে মাঝের এই ক’টি বছরে সোনার দাম যেমন বেড়েছে, গয়নার জগতে অন্য এক আলোড়নও তৈরি হয়েছে। যা গয়নাপ্রেমীদের জন্য সত্যিই সু-সংবাদ। উঠে এসেছে রকমারি রুপোর গয়না। এই কিছু দিন আগেও রুপোর গয়না ছিল অচ্ছুৎ। বড়জোড় পায়ের তোড়া। এর বেশি রুপোকে গয়নার জগতে তেমন একটা মান্যি-গণ্যি করা হত না। যদিও বা কিছু ভারি গয়না গড়া হত, তা ঢাকা থাকত সোনার জলের আড়ালে। নরম এই ধাতুতে সূক্ষ্ম কাজ নাকি ধরা যায় না এই ছিল রুপোর বদনাম।
সে সব বদনাম চুকিয়ে-বুকিয়ে রুপো হাজির স্বমহিমায়। ভাবটা এমন, আমিই বা কম কীসে? তাই কখনও অন্য কোনও ধাতুর সঙ্গে মিলিয়ে মিশিয়ে, আবার কখনও স্টারলিং (পিয়োর) সিলভারেই গড়ে উঠছে রকমারি গয়না। শুধু তাই নয়, প্রতিটি গয়নাই আজকের আধুনিকাদের মন-পসন্দ। দারুণ ফ্যাশনদুরস্ত।
|
এক হাতে দু’খানা মোটা-সোটা বালা, অন্য হাত খালি। এমনটাই এখন ফ্যাশন। তবে সব রকমের গয়নার মধ্যে অ্যান্টিক লুক-এর রুপোর গয়নার কদরই সবচেয়ে বেশি। বাঙালি মেয়ের পায়ে পায়ে বহু দিন ঘুরেছে রুপোর তৈরি নূপুর। সেটাই এখন বিক্রি হচ্ছে অ্যান্টিক লুক-এ, অন্য চেহারায়। আসলে রুপোর গয়না এমন ভাবে তৈরি হচ্ছে যে অফিস হোক বা পার্টি, দেশীয় বা পশ্চিমি পোশাক যাই হোক না কেন, সবেতেই মানিয়ে যাবে। যেমন লহরি হারের কথাই ধরুন। পাঁচ-ছ’টি চেনের এই লহরি হার অফিসের জন্য আদশর্। আবার অফিস শেষে বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি থাকলে তাতেও দিব্যি মানিয়ে যাবে। সে রকমই পিয়োর সিলভারের তৈরি ডিজাইনার বালা বা ব্রেসলেট। পুরোটা সিলভার লুক, মুখের কাছে অ্যান্টিক লুক। এমন একটি ব্রেসলেট আপনি যেমন শাড়ির সঙ্গে পরতে পারবেন তেমনই জিনসের সঙ্গেও অনায়াসে মানিয়ে যাবে। সুতরাং দোকানে ঢুঁ মারলেই হল। দেখা মাত্রই এমনতর গয়না মনে ধরে যাবে।
|