|
|
|
|
চিকিৎসা দূর, নিজেই ধুঁকছে ‘ট্রমা-কেয়ার’ |
সোমা মুখোপাধ্যায় • কলকাতা |
দুর্ঘটনায় পড়লে ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্স বা ১০০ ডায়ালের সাহায্য পাওয়া নিয়ে নানা চর্চা চলছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, ১০০ ডায়াল করে যদি পুলিশের সাহায্য পাওয়াও যায়, যদি ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্স ঠিক সময়ে হাজিরও হয়, তার পরে কী? কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে?
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ট্রমা ইউনিট নামেমাত্র চালু হয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে। এন আর এস হাসপাতালে পরিকল্পনা জমা পড়েও কাজ এগোয়নি এক চুল। বাঙুর হাসপাতালে ঘর তৈরি হয়েছে, যন্ত্রও কেনা হয়েছে, কিন্তু প্রয়োজনীয় কর্মীর অভাবে ইউনিট চালু হওয়া বিশ বাঁও জলে। আর পুলিশ হাসপাতালে ঘটা করে ট্রমা ইউনিটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলেও কেন্দ্রটি চালাবে কে, তা নিয়ে সকলেই ধন্দে। সব মিলিয়ে এ রাজ্যে ট্রমা চিকিৎসার ভবিষ্যৎ যে তিমিরে ছিল, এখনও সেই তিমিরেই।
চিকিৎসকেরাই প্রশ্ন তুলেছেন, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু রোড উড়ালপুলের দুর্ঘটনায় জখম কিশোর সুপ্রিয় রায় যদি মারা না-ও যেত, তার যথাযথ চিকিৎসা কী ভাবে, কখন শুরু হত? দুর্ঘটনাস্থল থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে ট্রমা চিকিৎসার কোনও ব্যবস্থা নেই। কার্যত সেই ব্যবস্থা সরকারি স্তরে রাজ্যের কোথাওই সে ভাবে নেই।
এস এস কে এম হাসপাতালে বহু বছর আগে একটি ট্রমা সেন্টার চালু করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। কিন্তু সেই প্রকল্পের একটি ইটও গাঁথা হয়নি এখনও। চলতি বছরের গোড়ায় আর জি করে আট শয্যার ট্রমা ইউনিটের উদ্বোধন হয়েছিল। কিন্তু এখন কার্যত সেটি মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। কেন এমন হল? স্বাস্থ্যকর্তারা শুধু এটুকুই জানিয়েছেন যে, পৃথক ইউনিটের জন্য ‘ডেডিকেটেড স্টাফ’ দেওয়া যাচ্ছে না।
বাঙুর হাসপাতালে ট্রমা ইউনিটের জন্য ৬০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। সরঞ্জামও কেনা হয়েছিল। এমনকী, রোগীদের জন্য তৈরি হয়েছিল দু’টি আলাদা অপারেশন থিয়েটার। কিন্তু তার পরেও কাজ শুরু হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই ইউনিটের জন্য পৃথক চিকিৎসক, নার্স এবং অন্যান্য কর্মীর ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। তাই এই দেরি। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “শুধু এই ক’টি জায়গা নয়, সমস্ত মেডিক্যাল কলেজেই ট্রমা ইউনিট চালুর বিষয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে। আরও কিছু সময় লাগবে।”
কিন্তু, যেখানে পরিকল্পনা তৈরি, সেখানে কেন কাজ শুরু হল না? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর অবশ্য মেলেনি। রাজ্যে ট্রমা ইউনিট তৈরির উদ্যোগে গোড়া থেকেই সামিল যে চিকিৎসক, সেই রামেন্দু হোমচৌধুরী জানিয়েছেন, এন আর এস হাসপাতালের জন্যও একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তিনি বেশ কিছু দিন আগে স্বাস্থ্য দফতরে জমা দিয়েছেন। তাঁর কথায়, “একটা নতুন ইটও ওখানে গাঁথতে হবে না। ইমার্জেন্সিতে যে জায়গা রয়েছে, সেখানেই আলাদা ট্রমা ইউনিট করা সম্ভব। আমি বিস্তারিত পরিকল্পনা জমা দিয়েছি। একটা ট্রমা ইউনিট তৈরি হওয়া মানে যে কত মানুষের প্রাণ বাঁচা, সেটা সকলকেই বুঝতে হবে।”
রামেন্দুবাবু মনে করেন, লোকবল না-থাকার অজুহাতে ট্রমা ইউনিট চালু না-করে ফেলে রাখার কোনও যুক্তি নেই। তিনি বলেন, “আই টি ইউ-এর মতো পরিকাঠামো থাকলেই পৃথক ট্রমা ইউনিট চালু করা সম্ভব। দরকার শুধু একটা জিনিসের, তা হল সদিচ্ছা।” ট্রমা ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও দিয়েছেন রামেন্দুবাবু।
ইতিমধ্যেই কলকাতায় ১২টি ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্স কাজ করছে। তার জন্য ৭২ জন পুলিশকর্মীকে রামেন্দুবাবুরা প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। আরও ছ’টি ট্রমা অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে পথে নামার অপেক্ষায়। কিন্তু সেগুলি কবে নামবে, জানা নেই কারও। সেগুলির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশকর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার। কবে তার ব্যবস্থা হবে, সে বিষয়েও এখনও কেউ কিছু জানে না। যেমন জানা নেই, কলকাতা পুলিশ হাসপাতালে ট্রমা ইউনিট চালু হলে তার দায়িত্ব কে নেবে। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে দুর্ঘটনাগ্রস্ত মানুষের প্রাণ বাঁচানোর এই উদ্যোগের সূচনা না হয় হল, কিন্তু তার পরে হাল ধরবে কে? জবাব এখনও অজানাই। |
|
|
|
|
|