প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী করে
তুলতে ব্যস্ত এক কারিগর
দিচ্ছা ও আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়ে অনেক বড় কাজ করা যায়, বর্ধমান জেলার খান্দরা গ্রামে এলে যে কেউ তা চাক্ষুষ করতে পারবেন। দেখলে অবাক হতে হয় গুটিকয় গ্রামবাসীর নিরলস চেষ্টায় এবং কোনও কিছুর প্রত্যাশা ছাড়াই কী ভাবে গড়ে উঠেছে স্কুল থেকে কলেজ, প্রতিবন্ধী শিক্ষাকেন্দ্র। যা হয়তো সাধারণের ভাবনার বাইরে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতি খান্দরার অনেক প্রবীণ -প্রবীণার এখনও বেশ উজ্জ্বল। গ্রামে সেই সময় গড়ে উঠেছিল সেনা ছাউনি। ক্রমে যুদ্ধ শেষ হল। পরিত্যক্ত হয়ে পড়ল সেনাছাউনি। গ্রামের কিছু মানুষের উদ্যোগে ওই সেনা ছাউনিতেই গড়ে উঠল প্রাথমিক পাঠশালা। ‘সবুজ সমিতি’ থেকে ‘সবুজ সঙ্ঘ’, যাঁদের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল কলেজ। কিন্তু অর্থের সংস্থান? চিৎপুর যাত্রা সমাজ টাকা জুগিয়েছিল। মানে? বিশেষ কনসেশনে নট্ট, লোকনাট্য প্রভৃতি দল যাত্রাপালা গেয়ে দেয়। টিকিট বিক্রির টাকায় হল কলেজ ঘর। পোঁতা হল দেড় হাজার গাছ।
তারপর? রূপকথার গল্পের মতো ৫৬ জন মানসিক প্রতিবন্ধীর জন্য হল স্কুল, হস্টেল, ছাপাখানা।
কিন্তু প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরির মাঝে হঠাৎ ছাপাখানা কেন? “আরে, ছাত্রছাত্রীদের একটা জীবিকার ব্যবস্থা। শিল্পনগরী দুর্গাপুরের ইসিএল অন্যান্যরা দিয়েছে জব ওয়ার্ক, ছোটখাটো বিল ছাপানোর কাজ।” বললেন প্রতিবন্ধী কেন্দ্রের সম্পাদক প্রকাশ সরকার। করজোড়ে বৈষ্ণবীয় বিনয়ে মার্কসীয় দর্শনে বিশ্বাসী, প্রতিবন্ধী কেন্দ্রের সম্পাদক যোগ করেন, “আমি একা নই। দয়া করে কথাটা বলবেন বা লিখবেন যে এর সূচনায় শঙ্কর বকশি আর অমলেন্দু বকশি মালকোঁচা মেরে উন্নয়নের

নিজস্ব চিত্র।
প্রথম লগি ঠেলেছিলেন। প্লিজ, আমার একার কথা লিখলে প্রতিষ্ঠানের সঙ্কট হতে পারে।” খান্দরায় গিয়ে যদি কোনও এখানে গিয়ে কোনও পথচারীকে যদি জিজ্ঞেস করেন, প্রকাশ সরকার কোথায় থাকেন? তিনি হাঁ করে থাকবেন। যদি বলেন, বিজুবাবু কোথায়? তখন আপনাকে বাগান -ঘেরা কর্মকেন্দ্রের বিজুবাবুর ঘরে নিয়ে যাবেন। আংশিক প্রতিবন্ধী, মূক -বধির, আংশিক দৃষ্টিহীনদের আত্মবিশ্বাসে গড়া দেড় একরের কর্মযজ্ঞের মাঝে ফুলের বাগানে দাঁড়ালে মনে হবে, মানুষই পারে এমন কাজ করতে। প্রতিবন্ধী কেন্দ্রের নাম ‘বিধানচন্দ্র প্রতিবন্ধী কর্মকেন্দ্র’। জীবিকাশ্রয়ী নানা উদ্ভাবনী পথের সন্ধান রয়েছে এখানে। আশপাশের অসংখ্য স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের (সর্বশিক্ষা অভিযান ) পোশাক তৈরি করে ছাত্রছাত্রীরা। সেগুলো কিনে নেয় স্কুলগুলো।
পরিত্যক্ত ব্যারাক। সেখান থেকে পাঠশালা। তার পরে স্কুল, কলেজ। কলেজে কলা বিভাগের পরে বাণিজ্য শাখা। আরও পরে প্রতিবন্ধী স্কুল। তাদের জীবিকাশ্রয়ী ট্রেনিং, জীবিকার মূল্যায়ন, একটা স্বপ্নের জন্ম দিয়েছে খান্দরা গ্রামটি। আর সেই স্বপ্নের ছোট্ট, বর্তমানের প্রকাণ্ড বীজমন্ত্রের পাত্রটিকে প্রকাশবাবু দু’হাতের তালুতে ধরে বললেন, “আমি একা নই, অনেকেরই দান, তাতেই গড়ে উঠেছে এই সব। আমিও তাদের সঙ্গে পিঁপড়ের মতন বয়ে নিয়ে যাচ্ছি ছোট্ট একটা ডিম। অনেক বৃদ্ধি হবে, দেখে নেবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.