|
|
|
|
|
|
শুধুই আশ্বাস |
যন্ত্রণা অব্যাহত |
শান্তনু ঘোষ |
পাঁচ বছর আগে বর্ষার জমা জলে ডুবে মারা গিয়েছিল দু’টি শিশু এবং এক যুবক। সে স্মৃতি এখনও টাটকা বাসিন্দাদের মনে। তখন বাসিন্দাদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে জল জমার সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছিল প্রশাসন। কিন্তু এখনও বদলায়নি ‘নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত’ পুরস্কার পাওয়া সাঁপুইপাড়া-বসুকাঠি পঞ্চায়েতের জল-যন্ত্রণার ছবি।
ফি-বছর বর্ষায় বালি-জগাছা ব্লকের ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে সব থেকে খারাপ অবস্থা হয় সাঁপুইপাড়া-বসুকাঠি পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকার। রাস্তা থেকে খেলার মাঠ সবই চলে যায় জলের তলায়। অধিকাংশ বাড়িতেই জল ঢুকে বাসিন্দারা কার্যত জলবন্দি হয়ে পড়েন। জল নামতে সময় লাগে চার-পাঁচ মাস। বাসিন্দাদের অভিযোগ, জল বেরনোর দু’টি খাল মজে গিয়েছে। সংস্কারের জন্য বহু বার স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি।
এই অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সমস্যার কথা আগেই শুনেছিলাম। এ বার অভিজ্ঞতা হল। দীর্ঘ দিন ধরে নিকাশির উন্নয়নে কোনও কাজই হয়নি। সে জন্যই সাধারণ মানুষকে প্রতি বর্ষায় ভুগতে হচ্ছে।” |
|
সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থার অভাবে প্রতি বর্ষায়ই সাঁপুইপাড়া-বসুকাঠি পঞ্চায়েতের ৮টি গ্রামের প্রায় ৪০-৪৫ হাজার বাসিন্দা জলবন্দি হয়ে পড়েন। সব থেকে শোচনীয় অবস্থা হয় প্রান্তিক, আনন্দনগর, শ্রীনগর কলোনি, নেতাজিনগর, পশ্চিম শান্তিনগর, চাঁদমারী, সুভাষপল্লি, সাঁপুইপাড়া এলাকার বাসিন্দাদের। এ বছরের টানা কয়েক দিনের বৃষ্টিতে গোটা পঞ্চায়েত এলাকায় কোথাও কোমর সমান জল, কোথাও এক হাঁটু জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। রাস্তা এবং পুকুর আলাদা করে চেনার উপায় নেই। একতলায় জল ঢুকেছে। মেঝেতে ইট পেতে খাট-বিছানা উঁচু করে তার উপরে সংসার চলছে। এমনই অবস্থা যে এলাকার অনেকেই বর্ষায় অন্যত্র চলে যান।
রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ। পিচ উঠে এবড়ো-খেবড়ো গর্ত হয়ে গিয়েছে। ফলে যাতায়াত করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছে। শান্তিনগরের বাসিন্দা বাদল রায় বলেন, “বয়স্ক ও বাচ্চাদের জল ভেঙে যাতায়াত করা খুবই বিপদের। কোথায় গর্ত রয়েছে কিছুই বোঝা যায় না।” এই সমস্যা সাঁপুইপাড়া-বসুকাঠির গোটা পঞ্চায়েত জুড়েই। সুবিধা জন্য বাসিন্দারা নিজেরাই বানিয়েছেন বাঁশের সাঁকো। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় সেই সাঁকো দিয়েও যাতায়াত করা বিপজ্জনক বলে জানান বাসিন্দারা। প্রান্তিকের বাসিন্দা মিঠু সামন্ত বলেন, “বাঁশের উপর শ্যাওলা জমে পিছল হয়ে যায়। পচেও যায়। বুঝতে না পারলেই বিপদ ঘটে।”
২০০৭-এ এই গ্রাম ‘নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েত’ পুরস্কার পায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতি বছরই প্রশাসনের তরফে নিকাশির উন্নয়নের আশ্বাস দেওয়া হয়। অনেক সময় পুজো পর্যন্ত নোংরা জল জমে থাকে। তা ছাড়া জল জমার জন্য ঘনঘন লোডশেডিংও হচ্ছে। নলকূপও জলের তলায় চলে গিয়েছে। অগত্যা বেশি দাম দিয়ে জলের ব্যারেল কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি সাপ ও আন্ত্রিকের সমস্যাও রয়েছে। সুভাষপল্লির বাসিন্দা করবী দাস বলেন, “ঘরের ভিতর এক হাঁটু জল। দুটো বাচ্চাকে নিয়ে খাটের উপরই সংসার। এক দিন দেখি খাটের পায়া বেয়ে সাপ উঠছে।” |
|
বেহাল নিকাশির শিকার হাসপাতালও। চাঁদমারী এলাকার বেলুড় ইএসআই-টিবি হাসপাতাল চত্বরে জল জমে যায়। এক তলার জরুরি বিভাগ, অপারেশন থিয়েটার, চিকিৎসকদের বসার ঘর, অফিস সর্বত্রই জল জমে রয়েছে। অভিযোগ, এই জলে যক্ষ্মা রোগীর বর্জ্য ও চাঁদমারী ভাগাড়ের আবর্জনাও ভেসে আসে। ফলে চামড়ার রোগও হচ্ছে।
সাঁপুইপাড়া-বসুকাঠি পঞ্চায়েত লাগোয়া চকপাড়া-আনন্দনগর এলাকায়ও জল জমে যায়। প্রশাসন সূত্রে খবর, শেওড়াপোঁতা ও সুতি খাল দিয়ে এই অঞ্চলের জমা জল হাওড়া ড্রেনেজ ক্যানাল ও বালিখালে গিয়ে পড়ে। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘ দিন প্রশাসনের উদাসীনতার জন্যই খাল দু’টি মজে গিয়েছে। সাঁপুইপাড়া-বসুকাঠি পঞ্চায়েতের সদস্য তৃণমূলের প্রতিমা দত্ত বলেন, “খাল দু’টি সংস্কারের জন্য বহু বার আবেদন জানিয়েও লাভ হয়নি। ভোটের আগে কয়েক দিন খালের ধারের আগাছা সাফাই হয়। কিন্তু ঠিকমতো সংস্কার হয়নি। এ বছর প্রায় এক কোটি টাকা খরচ করে এলাকায় নর্দমা বানানো হলেও আউটলেট না থাকায় জল বেরোতে পারছে না।” যদিও বালি-জগাছা ব্লকের বিডিও পারমিতা সাহা বলেন, “জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে দু’টি খালেরই সংস্কার হয়েছে। তবে চকপাড়ার নিকাশির কিছু কাজ বাকি রয়েছে। সেগুলি হয়ে গেলে সাঁপুইপাড়া-বসুকাঠি ও চকপাড়া-আনন্দনগর পঞ্চায়েতের জল জমার সমস্যা থাকবে না।”
বিধায়ক রাজীববাবু বলেন, “এ বার বৃষ্টির সময় হাওড়া উন্নয়ন সংস্থা (এইচআইটি)-র ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে খাল ও নিকাশি নালাগুলি দেখেছি। কোথায় সমস্যা রয়েছে তাও চিহ্নিত করা হয়েছে। বর্ষা মিটলেই কাজ শুরু হবে।” এইচআইটি-এর এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জিত বসু বলেন, “ওই এলাকায় নিকাশির কিছু কাজ এখনও বাকি আছে। বর্ষা মিটলেই চকপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার কালভার্ট তৈরি ও খালগুলির সংস্কার হবে। আশা করি সেই কাজ শেষ হলেই জল জমার সমস্যা অনেকটা মিটবে।”
|
ছবি রণজিৎ নন্দী |
|
|
|
|
|