|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
তারকার ভরসায় |
লিয়োনেল মেসি কলিকাতায় আসিতেছেন। ঘুরিতে নয়, খেলিতে। এক্ষণে তিনি কিংবদন্তি, এবং আর্জেন্তিনা দলে তাঁহার সতীর্থ আরও বেশ কয়েক জন ফুটবল-তারকাও বিশ্বপ্রসিদ্ধ। তাঁহারাও মেসির সহিত খেলিবেন। খেলা এক সময় ফুরাইবে। মেসি সদলবল বিমানে উঠিবেন। কলিকাতা ফুটবলের কোনও উন্নতি হইবে কি? প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ। তাহা এই কারণে নহে যে, কলিকাতায় আর্জেন্তিনা-ভেনেজুয়েলার আন্তর্জাতিক খেলা করিবার কোনও যুক্তি নাই। বরং, উল্টাটিই সত্য। এই খেলাকে ঘিরিয়া যে পরিমাণ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আগ্রহ, তাহা কলিকাতা ফুটবলের সাম্প্রতিক বদ্ধ স্রোতে সত্যই নূতন জোয়ার আনিতে পারে। আনিবে কি? অন্তত, এখনও পর্যন্ত তাহার কোনও আভাস দেখা যায় নাই। অন্য দিকে, পরিকাঠামোর অবস্থাটি যে কী নিদারুণ রূপে শোচনীয়, প্রতি পদে তাহাই প্রমাণিত হইয়া চলিয়াছে।
বিগত বামফ্রন্ট জমানার দীর্ঘ দিনের ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী মহোদয় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনকে কার্যত নিজস্ব খাসতালুক হিসাবে বিবেচনা করিতেন। ফলে, গাড়ি বা বাস হইতে ঠিকাদারের বাঁশ, সবই সেই ক্রীড়াক্ষেত্রের অন্দরে থাকিত। ইতিহাস বলিবে, একদা কিছু সমাজবিরোধীও যুবভারতী হইতে গ্রেফতার হইয়াছিলেন। ময়দানটির ভিতরে নানাবিধ অনুষ্ঠান, জলসা ইত্যাদি হইয়াছে। অথচ, যে কর্মকাণ্ডগুলি সেখানে হইবার কথা, সেইগুলি কত দূর সফল ভাবে হইয়াছে, তাহা বিতর্কের বিষয়। বামফ্রন্ট গিয়াছে। পরিবর্তন আসিয়াছে। রাজ্যের নূতন ক্রীড়ামন্ত্রী কয়েক বার যুবভারতী পরিদর্শনে গিয়াছেন। পরিস্থিতি কত দূর বদলাইয়াছে, বলা কঠিন। আর্জেন্তিনা দলের অন্যতম প্রশিক্ষক, একদা কলিকাতার মাঠে খেলিয়া যাওয়া জুলিয়েন কামিনো স্টেডিয়াম পরিদর্শনে আসিয়া সবিস্ময়ে দেখিয়াছেন, সাজঘরে খেলোয়াড়দিগের জন্য বরফ-জলের ‘পুল’ নাই। শুধুমাত্র ‘পুল’ নাই বলিলে ভুল হইবে, এই জাতীয় ‘পুল’ যে রাখা দরকার, সেই চেতনাটিও নাই। ইহাই প্রকৃত সংকট।
কোনও দেশে বিখ্যাত কোনও খেলোয়াড় খেলিতে আসিলেই যে রাতারাতি সেই দেশের ক্রীড়ামানের উন্নতি হয় না, তাহার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত নিকটেই বিদ্যমান। জাপান। সেই দেশে জিকো-র ন্যায় কিংবদন্তি খেলোয়াড় খেলিতে আসিয়াছিলেন। এবং, আজ জাপান বিশ্ব ফুটবলে নিজস্ব স্থান করিয়া লইয়াছে। মহিলাদের সাম্প্রতিক ফুটবল বিশ্বকাপ জাপানই জিতিয়াছে। এই দুইটি তথ্যের ভিতর সহসা কোনও সরলরেখা টানিয়া ফেলিলে এক পরিকল্পিত প্রচেষ্টার অতিসরলীকরণ হইবে। জাপান সেই দেশে অতীব পরিকল্পিত উপায়ে ‘জে-লিগ’ সংগঠিত করিয়া ফুটবলে নিজেদের ক্রীড়ামানকে সমুন্নত স্তরে লইয়া গিয়াছে। জিকো-র ন্যায় খেলোয়াড়ের উপস্থিতি সেই লিগটির বিপণনে সাহায্য করিয়াছে, অন্য খেলোয়াড়দেরও প্রভূত মাত্রায় উৎসাহিত করিয়াছে। ইহাতে দুই অর্থে সুবিধা হইয়াছে। এক, অর্থ আসিয়াছে। দুই, দেশীয় খেলোয়াড়েরা সরাসরি আন্তর্জাতিক ফুটবলশৈলীর স্বাদ পাইয়াছেন। ভারতে, দুঃখজনক ভাবে, ইহার একটিও ঘটে নাই। ‘আই লিগ’ শুরু হইয়াছিল বিষম ঢক্কানিনাদ সহকারে। ফল কত দূর হইয়াছে, তাহা স্পষ্ট। অবশ্য, সম্পূর্ণ অপেশাদার একটি আবহের মধ্যে অন্তত আধা-পেশাদার একটি ছাঁদ যে আনা গিয়াছে, তাহা অনস্বীকার্য। লিওনেল মেসি আসিলেই যে সেই যোগ্য পরিকাঠামোহীন বিচিত্র অচলাবস্থা রাতারাতি বদলাইবে, এমন ভাবিবার কোনও কারণ নাই। ভারতীয় ফুটবল এখনও জুরাসিক যুগে বন্দি। মেসি স্বাগত। ফুটবলের আধুনিক করণকৌশল, সংগঠনের আধুনিক রীতিবিধিকেও স্বাগত জানানো জরুরি। |
|
|
|
|
|