|
|
|
|
সম্পাদকীয় ১... |
যুক্তি ও অযুক্তি |
এ রাজ্যে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র খুলিবার কোনও পরিকল্পনা আপাতত নাই, সম্প্রতি বিধানসভায় তাঁহার বিবৃতিতে তাহা স্পষ্ট করিয়া দিয়াছেন বিদ্যুৎ মন্ত্রী। এই সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলা চলিবে না। পরমাণু বিদ্যুতের সুবিধা, ইহা কয়লা বা গ্যাসের ন্যায় প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষয় করে না। ফলে প্রায় সকল উন্নত দেশই পরমাণু বিদ্যুতের উৎপাদনের দিকে ঝুঁকিয়াছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হইয়াছে যে, উন্নততর প্রযুক্তি সর্বদাই অধিক লাভ নিশ্চিত করে না। বিশেষত জাপানে ভূমিকম্পের ফলে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে যে সংকট দেখা দিয়াছে, তাহা ইঙ্গিত করে যে যথোচিত ব্যবস্থা লইলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভাঙিয়া পড়িতে পারে। ইহার ফলে দেশের নাগরিকদের, এবং পরিবেশের গুরুতর ক্ষতি হইবার সম্ভাবনা। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়-প্রবণ। প্রবল ঝড়বৃষ্টি, বন্যা এখানে অবধারিত। তৎসহ এ দেশের কর্মসংস্কৃতিও সন্তোষজনক নহে। পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের শর্তগুলি পালিত হইবে, সেই সম্পর্কে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হইতে না পারিলে নির্মাণ না করাই শ্রেয়। সমস্যার পরিধি অবশ্য নিরাপত্তার প্রশ্নেই সীমিত নহে। জমি অধিগ্রহণ একটি সংবেদশীল বিষয় হইয়া দাঁড়াইয়াছে। পরমাণু বিদ্যুতের ক্ষেত্রে জমির প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি মেগাওয়াট প্রতি প্রয়োজনীয় জমি অন্য যে কোনও প্রকার বিদ্যুৎ অপেক্ষা পরমাণু বিদ্যুৎ দাবি করে বেশি। অতএব রাজনীতির দিক হইতেও নীতি প্রণয়নকালে পরমাণু বিদ্যুৎকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া কঠিনতর হইয়া উঠিতেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সমর্থন না থাকিলে উন্নয়নের প্রকল্প করা সম্ভব নহে। বিদ্যুতের প্রয়োজন সকলেরই, কিন্তু ব্যাপক এলাকায় জমি হারাইবার আতঙ্ক তাহাকে ছাড়াইয়া যাইতে পারে। সরকার সতর্কতা অবলম্বন করিবে, ইহা আশ্চর্য নহে।
কিন্তু সতর্কতা যখন উন্নয়নের গতি রুদ্ধ করে, সমস্যার সমাধান না করিয়া সমস্যা সৃষ্টি করে, তখন তাহার যৌক্তিকতা লইয়া প্রশ্ন করিতেই হয়। রাজ্যের বিদ্যুতের প্রয়োজন মিটিবে কী করিয়া, সে প্রশ্নও গুরুত্বপূর্ণ, তাহাকে অবহেলা করিলে চলিবে না। উন্নয়নমূলক কাজের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নটি গুরুত্বপূর্ণ হইয়া উঠিয়াছে। কাটোয়াতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করিবার কথা হইয়াছিল, তাহাও যে এখন স্থগিত করিতে হইয়াছে, তাহা জমি অধিগ্রহণে আপত্তির কারণেই। ইহা সঙ্গত নহে। বিদ্যুৎ উন্নয়নের চালিকাশক্তি। রাজ্যবাসীর জীবিকা বা জীবনযাত্রার মানের উন্নতি নির্ভর করে বিদ্যুতের জোগানের উপর। আমাদের রাজ্য কেবল বাইরে হইতে বিদ্যুৎ ক্রয় করিবে, নিজে উৎপাদন করিবে না, ইহা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসাবে কার্যকর হইবে না। বিদ্যুতের দাম বাড়িবে, দাম দিতে চাহিলেও সহজে পাওয়া না-ও যাইতে পারে। ইন্দোনেশিয়া হইতে যে কয়লার আমদানি হইতেছে, তাহার দাম বাড়িতেছে। ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন হইতে সর্বদাই প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পাওয়া না-ও যাইতে পারে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের বিদ্যুৎ নীতি কী, তাহা স্পষ্ট করিতে হইবে। এখনও অবধি তাহার কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায় নাই। এই পরিস্থিতিতে সরকারকে রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থেই বিদ্যুতের জন্য জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি লইয়া পুনরায় আলোচনা করিতে হইবে। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা প্রয়োগ করিয়া গ্রামের মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে ঐকমত্য তৈয়ারি করিতে হইবে। উৎপাদনের নূতন উপায় চিন্তা করিতে না পারিলে, অন্তত পুরাতন প্রথায় উৎপাদন যাহাতে নির্বিঘ্নে ঘটে, তাহা নিশ্চিত করাই সরকারের লক্ষ্য হওয়া প্রয়োজন। |
|
|
|
|
|