|
|
|
|
আউশগ্রামে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষ, জখম ৪ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বর্ধমান |
দুই গোষ্ঠী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় ইতিমধ্যেই কয়েক জনকে বহিষ্কার করেছে তৃণমূল। তবু শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব অব্যাহত বর্ধমানে।
অজয়ের বালি তোলা নিয়ে আউশগ্রামের সাঁতলা গ্রামে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে আহত হয়েছেন চার জন। এঁদের এক জন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও তিন জন বীরভূমের বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি। তৃণমূল সূত্রের খবর, গুসকরার পুরপ্রধান ও উপ-পুরপ্রধানের অনুগামী দুই গোষ্ঠীর মধ্যেই এই সংঘর্ষ। এবং একটি গোষ্ঠীর দাবি, সদ্য সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে নাম লেখানো কিছু লোকজন গোলমাল পাকিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দুই গোষ্ঠীর লোকজন ব্যাপক বোমাবাজি করে। শুক্রবার সাঁতলা গ্রাম থেকে ৩০টি তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “অভিযুক্তদের সন্ধানে গ্রামে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। তাদের গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে পুলিশকে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।” |
|
নিজস্ব চিত্র। |
অগস্টের শুরুতেই বর্ধমান শহরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছিল তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী। শহরে সশস্ত্র মিছিলও বের করা হয়। তার জেরে পাঁচ জনকে দল থেকে তাড়ানো হয়েছে। মঙ্গলবার মেমারিতে তৃণমূল কাউন্সিলরকে পেটান দলেরই কিছু লোকজন। ওই ঘটনায় এখনও কারও শাস্তি হয়নি। এর মধ্যে আউশগ্রামে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল।
তৃণমূল সূত্রে খবর, আউশগ্রামের দুই নেতা, গুসকরার পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াই এবং উপ-পুরপ্রধান মল্লিকা চোঙদারের গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে মন কষাকষি চলছে। এলাকার বিভিন্ন স্কুলের নির্বাচনেও লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ছে দুই গোষ্ঠী। অজয় নদের বালি তোলা নিয়েও গোলমাল চলছিল। তার জেরেই সংঘর্ষ বাধে।
বর্ধমান মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে শুয়ে সংঘর্ষে আহত শেখ মইনুদ্দিন খান বলেন, “রাতে ব্যাপক বোমা পড়ে। ভোরে উঠে বাড়ির কাছে মসজিদের পাশে দাঁড়িয়ে ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছিলাম। সঙ্গে ছিল দুই ভাই ও এক ভাইপো। আচমকা এক দল লোক ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুখে আর মাথায় চোট পেয়ে জ্ঞান হারাই। আহত হয় আমার দুই ভাই হাসেন এবং কুতুবুদ্দিন, ভাইপো শোয়েব খানও।”
চার আহতকেই প্রথমে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে মইনুদ্দিনকে বর্ধমানে স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁর অভিযোগ, “আমাদের উপরে হামলায় জড়িতেরা সকলেই সদ্য সিপিএম ছেড়ে এসেছে। ওরা বর্তমানে মল্লিকা চোঙদারের গোষ্ঠীর লোক। আমরা চঞ্চলবাবুর অনুগামী বলেই আমাদের খুনের চেষ্টা হয়েছে।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া অজয়ের একটি বালি খাদান থেকে বালি তোলার কাজ করতেন সিপিএম সমর্থকেরা। সরকার পরিবর্তনের পরে তাঁদের একটা বড় অংশ তৃণমূল সমর্থক বনে যান। পরে চঞ্চল গড়াইয়ের অনুগামীরা বালি খাদানের নিয়ন্ত্রণ নিতে গেলে তাঁরাই মল্লিকাদেবীর শরণাপন্ন হন। এর ফলে সংঘর্ষ বেধেছে। চঞ্চলবাবু অবশ্য দাবি করেন, “বালি তোলা নিয়ে ওই গ্রামে গোলমাল লেগেই ছিল। বিরক্ত হয়ে এক দল গ্রামবাসী খাদান বন্ধ করিয়ে দেন। তাতেই খাদানের সঙ্গে জড়িতেরা রেগে গিয়ে কয়েক জনকে আক্রমণ করেন। এই ঘটনা অরাজনৈতিক।”
গ্রামের বাসিন্দা সৈফুদ্দিন খানের অভিযোগ, “কিছু দিন আগে মল্লিকার অনুগামীরা রেশনের গম লুঠ করে। এতে গরিব মানুষেরা বঞ্চিত হওয়ায় শেখ মইনুদ্দিনের নেতৃত্বে আমরা প্রতিবাদ জানাই। বালি খাদের কাজেও গ্রামের মানুষকে নিতে হবে বলে সদ্য সিপিএম ছেড়ে আসা লোকেদের জানিয়ে দিয়েছিলাম আমরা। এতেই ওদের রাগ।” তবে চঞ্চলবাবুর ব্যাখ্যা, “এখন তো সবাই তৃণমূল। তাই হয়তো বালির খাদানের লোক ও গ্রামের মানুষ, উভয় পক্ষই নিজেদের তৃণমূল বলে দাবি করছেন।”
মল্লিকাদেবী আবার দাবি করেন, তাঁর অনুগামীরা কোনও ভাবেই এই ঘটনায় জড়িত নন। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরও প্রশ্ন নেই। সিপিএম ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যেই এই সংঘর্ষ ঘটেছে। এমনকী, এলাকা দখলের লক্ষ্যে সিপিএমের লোকেরা একদা মঙ্গলকোটের ‘ত্রাস’ ডাবলু আনসারিকে এনে বোমাবাজি করেছে বলেও তাঁর দাবি। সিপিএমের গুসকরা জোনাল কমিটির সম্পাদক অচিন্ত্য মজুমদারের প্রতিক্রিয়া, “গোটা আউশগ্রামের মানুষ জানেন, তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে নানা গোলমাল চলছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঢাকতেই ওরা এখন ডাবলুর নাম করছে।” |
|
|
|
|
|