|
|
|
|
‘ডান্স বার’ তদন্তে সিসিটিভি-র ফুটেজ চাইল জেলা প্রশাসন |
কিশোর সাহা • শিলিগুড়ি |
শিলিগুড়ি লাগোয়া ভক্তিনগরের ‘ডান্স বার’ কর্তৃপক্ষের কাছে ‘ক্লোজড সার্কিট টিভি’র ‘ভিডিও ফুটেজ’ চাইল জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন ও আবগারি দফতর। শনিবার রাতে সেখানে ‘গোলমালে’র সময় ঠিক কী হয়েছিল, তা জানতেই ওই ‘ফুটেজ’ দেখা হবে। ওই ‘হাঙ্গামা’য় বেশ কয়েকজন আইপিএস অফিসারের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় উচ্চ পর্যায়ের তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু করেছে রাজ্য সরকার। মহাকরণ সূত্রের খবর, রাজ্য পুলিশের কোনও শীর্ষ কর্তাকে দিয়ে ওই তদন্ত করানো হবে। সেই তদন্তেরই অঙ্গ হবে ওই ‘ফুটেজ’। এমনকী, ভক্তিনগর থানার যে অফিসার ফোন করে নির্দিষ্ট সময়ের পরে পানশালা খুলিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তদন্তের স্বার্থে তাঁকে আপাতত দায়িত্ব থেকে সরানো হবে কি না, তা নিয়েও পুলিশ মহলে চিন্তা-ভাবনা চলছে।
শনিবার শিলিগুড়ি লাগোয়া ভক্তিনগর থানার সেবক রোডের একটি রেস্তোরাঁয় জলপাইগুড়ির এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পারিবারিক অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে একাধিক আইপিএস ও আইএএস পদমর্যাদার অফিসার যোগ দেন। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ উচ্চ পদস্থ অফিসারদের কয়েকজন কাছের একটি ‘ডান্স বার’-এ গিয়ে, সেটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে ১ ঘণ্টা খুলিয়ে রেখে গান শোনেন বলে অভিযোগ। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ অফিসারেরা যখন বেরোচ্ছিলেন, সেই সময়ে পানশালায় থাকা এক দল যুবক তাঁদের জন্য আরও আধ ঘণ্টা নাচ-গান চালাতে হবে দাবি তুলে হইচই শুরু করেন। সেই সময়ে ভিন্ রাজ্যের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার এক অফিসারের সঙ্গে ওই যুবকদের তর্কাতর্কি হয়। মুহূর্তের মধ্যে দু’পক্ষে ‘হাতাহাতি’ বাধে। পরে পানশালায় উপস্থিত যুবকদের মধ্যে দু’জনকে পুলিশ ধরে। ভক্তিনগর থানার নথি অনুযায়ী, জ্যোতিনগরের বাসিন্দা ওই দুই যুবককে প্রকাশ্যে মাতলামির অভিযোগে ধরা হয়। বিষয়টি নিয়ে হইচই এড়াতে দু’জনকে থানা থেকে জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, ‘ডান্স বার’-এ আইপিএস পদমর্যাদার পুলিশ অফিসারদের কয়েকজন মারপিটে জড়িয়ে পড়েছেন, এই অভিযোগ পৌঁছে যায় মহাকরণে।
মহাকরণ সূত্রেই জানা গিয়েছে, দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির পুলিশ মহল থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ঘটনার সময়ে বিহারের এক জন এসপি ও এক জন এএসপি পদমর্যাদার অফিসার উপস্থিত ছিলেন। বিহারের এক এডিএম পদমর্যাদার অফিসারের বিরুদ্ধে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগও রয়েছে। দার্জিলিঙের এক এএসপি পদমর্যাদার অফিসারের নাম জড়ালেও তিনি গোলমালের খবর পেয়ে ঠেকাতে গিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে। পাশাপাশি, বিহারের এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাও ঘটনার সময়ে পানশালায় উপস্থিত ছিলেন বলেও অভিযোগ পেয়েছেন পুলিশ-কর্তারা।
এই অবস্থায় পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কবে শুরু হবে সেই প্রশ্নেই এখন পুলিশ-প্রশাসন মহলে জল্পনা চলছে। কারণ, শিলিগুড়ি ও লাগোয়া ভক্তিনগর এলাকায় আটটি ‘সিঙ্গিং বার’ ও ‘ডান্স বার’-এ নানা সময়ে হাঙ্গামার ঘটনা ঘটলেও নানা মহলের ‘চাপে’ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তদন্ত সম্পূর্ণ হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, পানশালায় গান চালাতে গেলে সরকারি অনুমোদিত যে সংস্থার কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়, সেই ‘পাবলিক পারফর্মেন্স লাইসেন্স’ প্রদানকারী সংস্থার পূর্বাঞ্চলের রিজিওনাল ম্যানেজার পার্থ চক্রবর্তীও বলেছেন, “একাধিক পানশালায় বেআইনি ভাবে গানবাজনা হচ্ছে। ক’দিন আগেই ভক্তিনগরের একটি পানশালার মালিকের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করার পরে তিনি ফেরার হয়েছেন। শনিবার যে পানশালায় হাঙ্গামা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তার মালিকের কাছেও কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। বিনা অনুমতিতে পানশালায় গানবাজনা চালানোর জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |
|
|
 |
|
|