|
|
|
|
ব্যর্থতা মানতে নারাজ জেলা প্রশাসন |
বেশিরভাগ পঞ্চায়েতেই চালু হয়নি সহায় প্রকল্প |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বনগাঁ |
অসহায়, যাঁদের দু’বেলা খাওয়া জোটে না এমন পরিবারের মানুষদের জন্য বছর চারেক আগে রাজ্য সরকার চালু করেছিলেন সহায় প্রকল্প। নিরন্ন মানুষের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে পঞ্চায়েতগুলিতে ওই প্রকল্প চালু হয়। সরকারের এমন উদ্যোগে আশার আলো দেখেছিলেন খেতে না পাওয়া পরিবারগুলি। ২০০৫-০৬ সালে এ রাজ্যে যে ‘গ্রামীণ পরিবার সমীক্ষা’ হয়, তাতে দেখা যায়, মোট ৩.৫ শতাংশ পরিবার একবেলার খাবার জোগাড় করতে পারে না। অন্য দিকে, ১৬.৫ শতাংশ পরিবার দু’বেলার খাবারের সংস্থান করতে অক্ষম। তাঁদের জন্যই ‘সহায়’ প্রকল্পটির কথা ঘোষণা করা হয়। উদ্দেশ্য, তাঁদের অন্তত একবেলা রান্না করা খাবার খাওয়ানো। প্রথমে ঠিক হয়, ২০০৮ সালের এপ্রিল মাস থেকে প্রকল্পটি চালু করা হবে। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচন এসে যাওয়ায় প্রকল্পটি চালু করার কথা হয় ওই বছরের অক্টোবর মাস থেকে।
প্রকল্পটি রূপায়ণ করার জন্য জেলা ভিত্তিক নোডাল এজেন্সি করা হয় জেলা গ্রামোন্নয়ন সেল (ডিআরডি সেল)-কে। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের পক্ষ থেকে ডিআরডি সেলের অফিসারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়াও ব্লক পর্যায়ের অফিসার, গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির প্রধান ও উপ-প্রধান, গ্রাম পঞ্চায়েত কর্মী, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যে থেকে নির্বাচিত করা হয় ‘সহায় বন্ধু।’ ঠিক হয়, সহায় বন্ধুরাই গরিব মানুষদের রান্না করা খাবার খাওয়াবেন। তাঁদের সাহায্য করবে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি।
কিন্তু দেখা গিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার বেশিরভাগ পঞ্চায়েত এলাকায় এখনও বহু দরিদ্র পরিবার এই প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যদিও জেলা প্রশাসন এটাকে তাঁদের ব্যর্থতা বলতে নারাজ। জেলার প্রকল্প অধিকর্তা দেবযানী দত্ত বলেন, “জেলার সব গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেই যে অসহায়, খেতে না পাওয়া মানুষ থাকবেন তা নাও হতে পারে। তাই যে সব পঞ্চায়েত এলাকায় এমন মানুষ আছেন সেখানেই এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ২০০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১০টিতে এই প্রকল্প চালু করা সম্ভব হয়েছে। অন্যগুলিতে এই প্রকল্প চালু না হওয়ার ব্যাপারে ওই সব পঞ্চায়েতের প্রধানেরা বিভিন্ন সমস্যার কথা জানিয়েছেন।
বনগাঁ মহকুমার তিনটি ব্লকের মোট ৩৮টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে একটিতে সম্প্রতি সহায় প্রকল্প চালু হয়েছে। বাগদা ব্লকের বাগদা গ্রাম পঞ্চায়েতে গত ১ অগস্ট এই প্রকল্প চালু হয়। বর্তমানে ওই পঞ্চায়েত এলাকার ৩২ জন অসহায় মানুষ এর সুবিধা পাচ্ছেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা রান্না করে তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনে একবার রান্না করা খাবর দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এ জন্য মাথাপিছু খরচ ধরা হয়েছে ১৬ টাকা। শুধু রানানা করে দেওয়াই নয়, যাঁরা অশক্ত তাঁদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে এই প্রকল্পে। বাগদার বিডিও খোকনচন্দ্র বালা বলেন, “খুব শীঘ্রই এই ব্লকের বাকি আটটি পঞ্চায়েতে এই প্রকল্প চালু করা হবে।”
বনগাঁ ব্লকে ১৬টি পঞ্চায়েতের একটিতেও এখনও এই প্রকল্প চালু হয়নি। কেন চালু করা হয়নি সে প্রসঙ্গে বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের সৌমেন দত্ত বলেন, “প্রকল্প চালু করতে হলে মূলত পঞ্চায়েতের উপরে নির্ভর করতে হয়। কারা কারা এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন পঞ্চায়েত প্রধানেরা এখনও সেই তালিকাই তৈরি করে উঠতে পারেননি।” এ ছাড়া প্রকল্প চালু না হওয়ার জন্য পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে অন্য সমস্যাও তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, এই প্রকল্পে মাথাপিছু বরাদ্দ ১৬ টাকা। যা বর্তমান বাজার দরের তুলনায় একেবারেই সম্ভব নয়। তার উপর যিনি রান্না করবেন ও বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেবেন তাঁকে দিতে হবে ৫টাকা। অর্থাৎ একজন অসহায় মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে প্রকৃত বরাদ্দ ১১ টাকা। সৌমেনবাবুর কথায়, “এত অল্প বরাদ্দের কারণে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি এতে উৎসাহ দেখাচ্ছে না।”
গাইঘাটা ব্লকের ১৩টি পঞ্চায়েত রয়েছে। সেখানেও চালু হয়নি ইই প্রকল্প। বিডিও পার্ত ভৌমিক বলেন, “প্রকল্প চালু করার জন্য যাবতীয় সমীক্ষার কাজ শেষ হয়েছে। শুধু রান্না করা খাবারই নয়, এই সব মানুষকে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার কথাও রয়েছে এই প্রকল্পে। খুব শীঘ্রই গোটা ব্লকে প্রকল্পটি চালু করা হবে।’’
ভিন্ন কথা শোনা গিয়েছে বারাসত হকুমার হাবরা-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুশান্ত দাসের গলায়। তিনি বলেন, “ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েতের মধ্যে তিনটি পঞ্চায়েতে সহায় প্রকল্প চালু আছে। বেশ কয়েকটি পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তাদের এলাকায় সহায়-সম্বলহীন মানুষ নেই। ফলে সেখানে ওই প্রকল্প চালুর প্রশ্নই ওঠে না।” হাবরা ১ ব্লকের ৭টি পঞ্চায়েতে মধ্যে মাত্র একটি ছাড়া অন্যগুলিতে প্রকল্প চালু না হওয়ার প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, “ওই সব পঞ্চায়েতে সহায়-সম্বলহীন মানুষ নেই যে তা নয়। কিন্তু বিপিএল তালিকায় নাম না থাকায় তাঁদের এই প্রকল্পের আওতায় আনা যায়নি। আবার এমনও মানুষ আছেন যাঁরা বিপিএল তালিকাভুক্ত অথচ প্রকল্পের যা নিয়ম তার মধ্যে পড়েন না। ফলে সর্বত্র এই প্রকল্প চালু করা যায়নি।” |
|
|
 |
|
|