কমনওয়েলথ দুর্নীতি
সনিয়া নিশানা হতেই পাল্টা আক্রমণ কংগ্রেসের
কের পর এক দুর্নীতির অভিযোগে বিপর্যস্ত কংগ্রেস তথা ইউপিএ সরকারের সংকট বাড়িয়ে কমনওয়েলথ গেমস দুর্নীতি নিয়ে আক্রমণের সুর আরও চড়াল বিজেপি। এ দফায় কমনওয়েলথ গেমস নিয়ে সিএজি রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই মঙ্গলবার সংসদে সরব হল তারা। সংসদে বিজেপি নেতারা এ দিন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ তো বটেই, চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকা সনিয়া গাঁধীকেও নিশানা করতে ছাড়েননি।
সংসদের বাইরেও বিজেপির যুব মোর্চার সমর্থকেরা বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা সংসদ ঘেরাও করতে গেলে পুলিশ বাধা দিলে দু’পক্ষে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠি এবং পরে কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ।
সংসদের ভিতরে-বাইরে বিজেপি-সহ বিরোধীদের আক্রমণে দিশেহারা কংগ্রেস আত্মরক্ষায় পাল্টা আক্রমণাত্মক হয়েছে। নানা যুক্তি দিয়ে তারা বিরোধীদের অস্ত্র ভোঁতা করতে চেয়েছে। কিন্তু সরকারের সেই আক্রমণাত্মক অবস্থান অনেকটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছে ইউপিএ-র প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রীদের দৌলতে! কেন না প্রয়াত কংগ্রেস নেতা সুনীল দত্ত থেকে শুরু মণিশঙ্কর আইয়ার ইউপিএ-র একাধিক প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী বারবার সুরেশ কলমডীর ভূমিকার সমালোচনা করে অতীতে প্রধানমন্ত্রীকে সতর্ক করেছিলেন। আজ সেই সব চিঠি-র প্রসঙ্গ তুলেই বিরোধীরা প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেন। একই ভাবে বিরোধীরা আঙুল তোলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের বিরুদ্ধেও।
পাল্টা আক্রমণে নেমে কংগ্রেসের মোদ্দা বক্তব্য ছিল, কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল এনডিএ আমলে। আজ সিএজি-র ভূমিকারও তীব্র সমালোচনা করে কংগ্রেস। লোকসভায় কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারি বলেন, “সিএজি তার এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করছে।” তাঁর এ-ও বক্তব্য, এমন কোনও রাজ্য নেই যেখানে সরকারের বিরুদ্ধে সিএজি সম্প্রতি কোনও রিপোর্ট দেয়নি। তা হলে একা শীলা দীক্ষিত কেন? সব মুখ্যমন্ত্রীরই তো পদত্যাগ করা উচিত!
সংসদের দুই কক্ষেই সরকারের যুক্তি কার্যত উড়িয়ে দিয়েছেন বিরোধীরা। রাজ্যসভায় সিপিএম সাংসদ প্রশান্ত চট্টোপাধ্যায় দুর্নীতি প্রশ্নে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রীরা সতর্ক করা সত্ত্বেও কেন তিনি কলমডীকে আয়োজক সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন? জেটলি যখন প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রীদের প্রসঙ্গ তুলে সরকারকে বিঁধছিলেন, তখন কক্ষে বসেছিলেন রাজ্যসভায় ইউপিএ-র প্রাক্তন দুই ক্রীড়ামন্ত্রী মণিশঙ্কর আইয়ার ও এম এস গিল! লোকসভায় বিজেপি নেতা যশবন্ত সিনহার প্রশ্ন ছিল, তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া যায় যে কলমডীকে এনডিএ আমলে নিয়োগ করা হয়েছিল, তা হলে একের পর এক অভিযোগ সত্ত্বেও তাঁকে কেন সরানো হল না ইউপিএ আমলে? এর পরেই কলমডীকে নিয়োগের প্রশ্নে সনিয়া গাঁধীর দিকে আঙুল তোলেন বিজেপি নেতারা।
সনিয়ার বিরুদ্ধে মন্তব্য হতেই সভায় হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। এ জন্য সভা এক বার মুলতুবিও হয়ে যায়। পরে জেটলি বলেন, “ইউপিএ সভানেত্রীর প্রসঙ্গ এখন আনা ঠিক নয়। তিনি অসুস্থ। আমরা তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।” জেটলি সংসদের ভিতরে যা-ই বলুন, বাইরে বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ী বলেন, “গেমস দুর্নীতির রাস্তা শীলা দীক্ষিত ও প্রধানমন্ত্রীর দরজা হয়ে সনিয়া গাঁধীর দরজা পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে।”
রাজ্যসভায় বিরোধীদের মন্তব্য ঘিরে হইচই হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই ছিল। কিন্তু লোকসভায় যশবন্ত সিনহা কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেনের উদ্দেশে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলায় উত্তাপের পারদ আচমকা বেড়ে যায়। যশবন্ত কথা প্রসঙ্গে বলেন, “দলের ঝাড়খণ্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা হিসাবে মাকেন প্রায়ই রাঁচি যেতেন। আর কংগ্রেস সমর্থনে চলা মধু কোড়া সরকারকে হুঁশিয়ারি দিতেন। তার পরেই মধু কোড়া বড় থলি নিয়ে দিল্লিতে মাকেনের কাছে চলে আসতেন।” যশবন্ত এ কথা বলতেই শাসক শিবির রে রে করে ওঠে। মাকেন জানান, যশবন্ত অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে তিনি লোকসভা থেকে ইস্তফা দেবেন। যশবন্তকে মন্তব্য প্রত্যাহার করতে বলা হলেও তিনি রাজি হননি। বিজেপি সাংসদের সরস জবাব, “আমি তো বলেছি বড় থলি। সেটাতে তো আমও থাকতে পারত!” পরে অবশ্য লোকসভার রেকর্ড থেকে যশবন্তের ওই মন্তব্য মুছে দেওয়া হয়। এই তর্কবিতর্কের জেরে শেষ পর্যন্ত লোকসভা আজ মুলতুবি হয়ে যায়। ক্ষুব্ধ মাকেন এ দিন বলেন, “আমার কাছে এমন সব নথি রয়েছে, যা বিজেপি-র মুখোশ খুলে দেবে।”
তবে সংসদে কাল এ নিয়ে আর আলোচনা হবে কি না, সংশয় রয়েছে। কারণ সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী পবন বনশল আজ জানান, কমনওয়েলথ গেমস নিয়ে যা আলোচনা হওয়ার আজ হয়ে গিয়েছে। কাল সম্ভবত আর এ ব্যাপারে চর্চার সুযোগ হবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.