|
|
|
|
রাস্তা জলমগ্ন |
নদী উপচে জল ঢুকছে গ্রামে, ডুবছে খেত |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ফুঁসছে অজয়। মঙ্গলবার তুমুল দুর্যোগের সময়ে কেতুগ্রামের চড়খিতে ছবিটি তুলেছেন অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিপদ আপাতত হাওড়া-হুগলির তুলনায় কম। কিন্তু রাজ্যে ও ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টির জেরে বিভিন্ন নদনদীতে জল বাড়তে থাকলে বর্ধমানের পরিস্থিতি কত ক্ষণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তা কেউ জানে না। অজয় নদে বিপজ্জনক রকম জল বাড়ায় মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামের অবস্থা ইতিমধ্যেই খারাপ। নদের তীরবর্তী পঞ্চায়েতগুলিতে ‘কন্ট্রোল রুম’ খোলা হয়েছে। পূর্বস্থলীতেও জল ঢুকেছে।
গত দু’দিন ধরেই ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক বৃষ্টি চলছে। প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে রাজ্য ও ঝাড়খণ্ডের সীমানা এলাকাতেও। ঝাড়খণ্ডের তেনুঘাট জলাধার থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ মঙ্গলবার বিকেলেই ২০ হাজার কিউসেক ছাড়িয়ে যায়। তার পাশাপাশি বৃষ্টির জলের চাপ বাড়তে থাকায় পাঞ্চেত জলাধারকে প্রায় ৬০ হাজার কিউসেক জল ছাড়তে হয়েছে। তবে মাইথন মাত্র চার হাজার কিউসেক জল ছেড়ে গিয়েছে, সেটা একটা বাঁচোয়া। |
 |
দামোদর দিয়ে এই বিপুল জল আসছে ডিভিসি-র দুর্গাপুর ব্যারাজে। এ দিন সকালে দুর্গাপুর থেকে ৫৯ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হচ্ছিল। বিকেলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭ হাজারে। রাতে তা আরও অনেকটাই বেড়েছে। সেচ দফতরের দামোদর ক্যানাল ডিভিশনের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “রাতে জল ছাড়া বাড়ানোর কথা ডিভিসি আগেই জানিয়ে দিয়েছিল। তবে আপাতত বর্ধমান জেলার তেমন সমস্যা নেই।”
এখনও প্লাবন না হলেও জেলার নদনদীর পরিস্থিতি যে খুব নিরাপদ, তা-ও নয়। বর্ধমানের সদরঘাট সেতুর কাছে গেলেই দেখা যায়, ভরা দামোদর দু’কূল ছাপিয়ে বইয়ে। প্রায় কানায় কানায় ভরে উঠেছে ভাগীরথীও। সন্ধ্যায় পূর্বস্থলী ২ ব্লকের পাটুলি মুসলিমপাড়া, দফরপুর, ঝাউডাঙা গ্রামে জল ঢুকেছে। মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি জানান, বিকেল থেকেই মন্তেশ্বরে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। করন্দা, গনগনিয়া ও সোমেশপুর এলাকায় কৃষিজমি জলের নীচে তলিয়ে গিয়েছে। মালডাঙা-মেমারি রাস্তার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন। আজ, বুধবার ওই রাস্তায় বাস চালানো যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশাসন চিন্তায় রয়েছে। যদিও রাত পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।
অন্য দিকে অজয় কার্যত ফুঁসছে। জল বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে। এ দিন ঝাড়খণ্ডে অজয় নদের উপরে হিংলো বাঁধ থেকে ১১ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। তাতে মঙ্গলকোট ও কেতুগ্রামের নদ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কাটোয়া মহকুমাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম জানান, কেতুগ্রাম ১ ও ২ এবং মঙ্গলকোটে যথাক্রমে ৩০০০, ৩৯০০ ও ৩১০০ হেক্টর জমি জলমগ্ন। মঙ্গলকোটের বিডিও মনিরুদ্দিন ফারুকি বলেন, “হিংলো বাঁধ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ওখানেও বৃষ্টি হচ্ছে।” রাস্তার উপর দিয়ে জল বইতে থাকায় কেতুগ্রামের উদ্ধারণপুর-গঙ্গাটিকুরি রাস্তায় এ দিন বাস চলাচলও বন্ধ ছিল।
এ দিকে, অজয়ে জল বাড়তেই ‘এক্স জমিনদারি’ নদীবাঁধগুলি আরও দুর্বল হতে শুরু করেছে। মঙ্গলকোটের ব্রহ্মপুর, নিচু খেঁড়ুয়া এবং কেতুগ্রামের চড়খি ও ত্যাওড়ায় নদীবাঁধের অবস্থা খুবই খারাপ। কেতুগ্রাম ২-এর বিডিও হেমন্ত ঘোষ পরিস্থিতি দেখে এসে জানিয়েছেন, চড়খি ও ত্যাওড়ায় বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। সেচ দফতরকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মহকুমাশাসক। দাঁইহাটে ভাগীরথীর বাঁধ প্রায় এক মিটার বসে গিয়েছে। যদিও সেচকর্তাদের মতে, এখনই আশঙ্কার কিছু নেই। কাটোয়া ও দাঁইহাটে বিভিন্ন রাস্তাও জলমগ্ন। কিছু মাটির বাড়ির ক্ষতিও হয়েছে।
মঙ্গলকোটের কুনুর নদীর অবস্থাও তথৈবচ। ভাল্যগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সাক্ষীগোপাল মণ্ডল জানান, অজয়ের জল ঢুকেছে ধান্যরুখী, মালিয়াড়া-সহ বেশ কিছু গ্রামে। কাটোয়া ১ ও ২ ব্লকেও প্রায় ৯০০ হেক্টর জমিতে জল রয়েছে। চাষিদের খেদ, গত বছর বৃষ্টির অভাবে তাঁরা চাষ করতে পারেননি। এ বছর আবার বীজতলা তৈরির সময়েই অতিবর্ষণ হয়। তাতে বীজতলা নষ্ট হয়েছে। এখন আবার জলে তলিয়ে গিয়েছে ধানগাছ। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত, তা অবশ্য জল নামার আগে বোঝা যাবে না।
জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি, যাতে ডিভিসি-কে দিয়ে দফায় দফায় জল ছাড়ার ব্যবস্থা করা যায়। সেচ ও প্রশাসনের অফিসারদের জেলার জলমগ্ন এলাকাগুলি পরিদর্শন করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলেছি।” |
|
|
 |
|
|