|
|
|
|
আওতায় কারা, বিভ্রান্তি |
মমতার ইচ্ছায় আজও ছুটি স্কুলে
|
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বাইশে শ্রাবণ রবীন্দ্র প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে। আর তেইশে শ্রাবণ, অর্থাৎ আজ, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছায়।
আরও একটি ছুটি। প্রথম দিনটি ছিল রাজ্য জুড়ে সরকারি ছুটি। স্কুল-কলেজ-অফিস-আদালত-ব্যাঙ্ক সবই ছিল সোমবার, ২২ শ্রাবণে সরকারি ছুটির আওতায়। আজ, মঙ্গলবারের ছুটি অবশ্য কেবল স্কুলের ছাত্রছাত্রী আর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জন্য। যদিও সব স্কুল নয়, রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আওতাভুক্ত স্কুলগুলিতেই ছুটি থাকার কথা ঘোষণা করা হয়েছে। খোলা থাকছে আইসিএসই, সিবিএসই স্কুলগুলি। মাদ্রাসাগুলি ছুটি থাকবে কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্তি দূর হয়নি রাত পর্যন্ত।
কিন্তু বাঙালির ক্যালেন্ডারে ২৩ শ্রাবণের তো কোনও মাহাত্ম্য বর্ণনা নেই! তা হলে হঠাৎ এ ছুটি কীসের?
আসলে এই ছুটির পিছনে কিছুটা রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, বাকিটা প্রকৃতিদেবী। সোমবার সকালে আলোকফেরি নামে শোভাযাত্রা হরিশ পার্ক থেকে আসে ধর্মতলার মেট্রো চ্যানেলে পর্যন্ত। তাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পা মেলায় বেশ কিছু স্কুলের কয়েক হাজার পড়ুয়া। ধর্মতলায় পৌঁছনোর পরে মুখ্যমন্ত্রী হঠাৎই বলেন, “এই পড়ুয়ারা বৃষ্টিতে ভিজেছে, কষ্ট হয়েছে কিন্তু দমে যায়নি। এটাই রবীন্দ্রনাথের বাংলা। এরা সুন্দর ভাবে রবীন্দ্র তিরোধান দিবসে উপস্থিত হয়েছে। এদের জন্য ব্রাত্য (শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু) একটা মিষ্টি ছুটি দেবে।” সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এই ছুটি শুধুমাত্র স্কুলের ছাত্র-শিক্ষকদের জন্য। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “কলেজে তো একটু পড়াশোনা করতে হয়!”
ব্রাত্যবাবু পরে জানান, আজ, মঙ্গলবার স্কুলগুলিতে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছুটি থাকবে। তিনি বলেন, “দুর্র্যোগের মধ্যে রাজ্যের সর্বত্র স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ২২ শ্রাবণ উদ্যাপন করেছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।” ২৬ জানুয়ারি বা ১৫ অগস্ট ছুটির দিন হওয়া সত্ত্বেও তো স্কুলে গিয়ে নানা অনুষ্ঠানে যোগ দেন ছাত্র-শিক্ষকেরা। সেটাই রেওয়াজ। তা হলে এ ক্ষেত্রে বাড়তি ছুটির দরকার হল কেন, তার ব্যাখ্যা সরকারের তরফে মেলেনি।
তা ছাড়া, সোমবার অফিস-কাছারির সঙ্গে রাজ্যের প্রায় সব স্কুলই ছুটি ছিল! রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকেই সপ্তাহের অন্য দিনে রবীন্দ্র-স্মরণ অনুষ্ঠান করতে বলা হয়েছে। যে পড়ুয়ারা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোকফেরিতে পা মিলিয়েছে, তারা অবশ্য এ দিনের ছুটি পুরোপুরি উপভোগ করতে পারেনি। তবে কি তাদের সৌজন্যেই লক্ষ-লক্ষ পড়ুয়ার আরও একটা দিন ছুটি পেয়ে গেল?
অবশ্য ছুটির ঘোষণা নিয়ে বিভ্রান্তিও দেখা দিয়েছে। সরকারি সূত্রে খবর, সরকারি প্রাথমিক স্কুল এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের অধীন স্কুলগুলিতেই আজ, মঙ্গলবার ছুটি থাকছে। কিন্তু সোমবার সরকারি সব দফতর ছুটি থাকায় মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী নির্দেশিকা প্রকাশিত হয়নি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদও এ দিন কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি অঞ্জন সেনগুপ্ত বলেন, “দফতরের সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সব স্কুল ছুটি থাকবে। তবে কেন এই ছুটি, সে বিষয়ে কারও সঙ্গে আমার কথা হয়নি। সোমবার ছুটি থাকায় হয়তো দফতর থেকে সরকারি ভাবে কিছু জানানো সম্ভব হয়নি।” এর জেরে মুখ্যমন্ত্রীর ‘ইচ্ছার বার্তা’ সর্বত্র সমান ভাবে পৌঁছয়নি। যেমন বারাসত অঞ্চলের এক স্কুল পরিদর্শক তাঁর এলাকাধীন এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আপনারা তো সোমবার রবীন্দ্র-স্মরণ অনুষ্ঠান করেননি। তা হলে আপনাদের স্কুলে মঙ্গলবার ছুটি হবে কেন?’ টিভি-তে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ছুটির ঘোষণা এবং স্থানীয় স্কুল পরিদর্শকের অন্য রকম নির্দেশের মধ্যে ওই শিক্ষিকা বিভ্রান্ত।
যেমন বিভ্রান্ত মধ্যশিক্ষা পর্ষদের আওতায় থাকা পুরোপুরি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবকেরা। কোনও কোনও স্কুলে আজ ছুটি ঘোষণা করা হলেও বেশ কিছু স্কুল রাত পর্যন্ত এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি। ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের অধীন মাদ্রাসাগুলিও। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় তাদের উল্লেখ নেই। মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গিয়াসুদ্দিন সিদ্দিকি বলেন, “এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। সংখ্যালঘু শিক্ষা দফতরের সচিবের কাছে বিষয়টি জানতে চেয়েছিলাম, তিনিও কিছু বলতে পারেননি।”
আইসিএসই-সিবিএসই স্কুলগুলির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, রবীন্দ্র তিরোধান দিবস উপলক্ষে রাজ্য সরকার ছুটি ঘোষণা করায় সোমবার স্কুল বন্ধ ছিল। একই কারণে আরও একটা দিন ছুটি দেওয়ার পক্ষপাতী নন তাঁরা। |
|
|
|
|
|