টানা বৃষ্টিতে জলবন্দি হাওড়া, রাজারহাট
হরের অনেক এলাকায় রবিবার সন্ধ্যায় জমা জল নামলেও রাতের বৃষ্টিতে ফের জলমগ্ন হয়ে পড়ে বিভিন্ন অঞ্চল। কলকাতা পুরসভার অবশ্য দাবি, সোমবার সকাল থেকে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় সেই জল নামতে শুরু করেছে।
পুরসভার নিকাশি দফতরের মেয়র পারিষদ রাজীব দেব এ দিন বলেন, “পুরসভার পাম্প ছাড়াও বাড়তি পোর্টেব্ল পাম্প বসিয়ে দুপুরের মধ্যে অধিকাংশ জায়গা থেকে জল নামানো হয়েছে।”
এ দিকে, খড়দহের বন্দিপুর আনন্দপল্লিতে ঘরের মধ্যেই জলে ডুবে মৃত্যু হয় দেবস্মিতা রাজবংশী (২) নামে এক শিশুর। ওই ঘটনার পরেই খড়দহ-সহ ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের জলমগ্ন এলাকায় নৌকা নামানো হয়। ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক অজয় পাল বলেন, “ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তবে, প্রত্যেক জলবন্দি বাসিন্দার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
পুরসভার নিকাশি দফতরের তথ্য অনুযায়ী, রবিবার রাত ১২টা থেকে সোমবার ভোর ৫টা পর্যন্ত কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৬০ মিলিমিটার। সব চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে উত্তরে বীরপাড়ায়, প্রায় ৫৬ মিলিমিটার।
টানা বৃষ্টিতে বহু রাস্তায় নিকাশির মুখ আটকে যায় বলে পুর-কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ এসেছে। এই প্রসঙ্গে রাজীববাবু বলেন, “নিকাশি নালার মুখ আটকে যাওয়ায় অনেক জায়গায় জঞ্জাল পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে বৃষ্টি কমার পরে দ্রুত জঞ্জাল পরিষ্কার করা হচ্ছে।” বেহালার জেমস লং সরণি, ক্রিস্টোফার রোড-সহ বিভিন্ন রাস্তায় প্রায় দশটি গাছ পড়েছে।
বৃষ্টিতে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস, এসএসকেএমের বিভিন্ন বিভাগে জল জমে। এসএসকেএমের ফার্মাসিতে জল জমায় পরিষেবার সমস্যা হয়।
রাজারহাটের চিনার পার্কে জল থইথই পথ। সোমবার। ছবি অর্কপ্রভ ঘোষ
টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে নিউ টাউন, রাজারহাটের কিছু ওয়ার্ড ও ভিআইপি রোডের কিছু অংশ। দুর্ভোগে পড়েন বিমানবন্দরের যাত্রীরাও। রাজারহাট, নিউ টাউনের কয়েকটি আবাসনেও জল ঢুকে যায়। অভিযোগ, সোমবার দুপুর থেকে পানীয় জলের অভাব দেখা দেয় রাজারহাটের বিভিন্ন ওয়ার্ডে। এলাকার বিধায়ক তথা শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “পাম্প চালিয়ে জল নামানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানীয় জল ও ত্রাণ দেওয়া হয়েছে কয়েকটি ওয়ার্ডে।”
দমদম পার্কের চার নম্বর ট্যাঙ্ক সংলগ্ন এলাকাতেও প্রায় এক কোমর জল। বাগজোলা খাল প্রায় ভর্তি হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান অঞ্জনা রক্ষিত অবশ্য বলেন, “সব এলাকাতেই পাম্প চালানো হয়েছে। এ বার বাঙুর বা লেকটাউন এলাকায় অতিবৃষ্টিতেও জল সে ভাবে জমতে পারেনি।”
লাগাতার বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে সল্টলেকের বেশ কিছু জায়গাও। পাঁচ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন জায়গাতেও বিকেল পর্যন্ত জল ছিল। নবদিগন্ত কর্তৃপক্ষ পাঁচটি পাম্পের মাধ্যমে জল নামানোর ব্যবস্থা করেন।
রাতভর বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়ে বেহালা-ঠাকুরপুকুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় ডায়মন্ড হারবার রোডের একটি দিকে।
অন্য দিকে, রবিবার রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে এতটুকু বদলায়নি হাওড়া শহরের জল-ছবি। জমা জল বার করতে হাওড়া পুরসভা পাম্প বসালেও সেই জল কোথায় ফেলা হবে, তা নিয়ে অন্ধকারে খোদ পুর-কর্তৃপক্ষই। জি টি রোডে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। বৃষ্টিতে বাঁধাঘাটের বাজন পাড়ায় একটি বাড়ির ছাদ ভেঙে পড়ায় জখম হন এক মহিলা। কালীকুমার মুখার্জি লেনে একটি তিনতলা বাড়ির ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে। বেনারস রোড, দাশনগর বা বেলগাছিয়া সর্বত্র একই জল-চিত্র। মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “২১টি পাম্প চালানো হয়েছে। কিন্তু পাম্পই জলের তলায়। আরুপাড়া, ইছাপুরের পাম্প ঠিক মতো কাজ করছে না। গঙ্গার জলস্তর বেশি থাকায় জল ফেলার ক্ষেত্রেও সমস্যা হচ্ছে।”
সব চেয়ে খারাপ অবস্থা বেলুড় ও লিলুয়ার ওয়ার্ডগুলির। পুর-প্রধান অরুণাভ লাহিড়ী বলেন, “গঙ্গার দিক উঁচু হওয়ায় জোয়ার এলেই এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। একটি পাম্প হাউস বানানোর পরিকল্পনা করে ঊধ্বর্র্তন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।”
এর পাশাপাশি দু’দিনের বৃষ্টির জেরে বারাসত পুরসভার দু’নম্বর ওয়ার্ডের পালপাকুড়িয়া, নিবেদিতাপল্লি এলাকায় জলবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় দেড় থেকে দু’হাজার মানুষ। এলাকায় ত্রাণ না-পৌঁছনোর অভিযোগে সোমবার এলাকাবাসী আধ ঘণ্টা ট্রেন অবরোধ করেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.