|
|
|
|
ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা পড়শি তিন রাজ্যেও, ডিভিসি জল ছাড়ায় সতর্কিত প্রশাসন |
লাগামছুট ধারাবর্ষণে বন্যার হুঙ্কার বাংলায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
একা ঘূর্ণাবর্তে রক্ষা নেই, দোসর এ বার মধ্য ভারতের নিম্নচাপ!
ফলে শুধু এ রাজ্যেই যে অতি ভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে তা নয়, মধ্যপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড আর ছত্তীসগঢ়েও লাগামছাড়া বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। ডিভিসি-র বিভিন্ন জলাধারে রবিবার রাতেই বিপদসীমা ছাড়িয়েছে জল। একটু একটু করে জল ছাড়ার মাত্রা বাড়াচ্ছে ডিভিসি।
একেই তো রাজ্যে অতিবৃষ্টি। তার উপরে পার্শ্ববর্তী রাজ্যের জলের চাপ। দক্ষিণবঙ্গ কতটা সইতে পারবে? সেটাই চিন্তায় ফেলেছে রাজ্য সরকারকে। বৃষ্টি থামার লক্ষণ তো নেই-ই। বরং তা বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে। চিন্তা বেড়েছে সেই কারণে। উৎসমুখে ভারী বর্ষণ হলে ডিভিসি-র বিভিন্ন জলাধার থেকে জল ছাড়ার মাত্রা যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে আশঙ্কার বার্তা পৌঁছেছে মহাকরণে। রাজ্যের সব দফতরকে সম্ভাব্য বন্যার মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মহাকরণে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম।
শনিবার থেকে মধ্যপ্রদেশ, বিহার এবং ঝাড়খণ্ডে ব্যাপক বৃষ্টি চলছে। আজ, মঙ্গলবারেও সেখানে ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস রয়েছে। পাশাপাশি গোটা পশ্চিমবঙ্গে মঙ্গলবার অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পরিস্থিতি এতটা আশঙ্কাজনক হয়ে উঠল কেন? |
জলাধারের ছাড়া জল |
আবহবিদদের বক্তব্য, ঘূর্ণাবর্তটি নিম্নচাপের চেহারা নেওয়াতেই পরিস্থিতি ঘোরালো হয়েছে। ওই ঘূর্ণাবর্ত শক্তি না-হারালে পশ্চিমবঙ্গ বন্যার মুখে পড়তে পারে বলেও সতর্কতা জারি করেছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
ডিভিসি থেকে জানানো হয়েছে, মাইথন ও পাঞ্চেতে জলস্তর বিপদসীমার উপরে উঠে গিয়েছে। ফলে ওই সব জলাধারে বাড়তি যে-জল এসে পড়ছে, তার পুরোটাই ছেড়ে দিতে হচ্ছে। এবং সেটা নেমে আসছে পশ্চিমবঙ্গের দিকে। মাইথন ও পাঞ্চেত জলাধার থেকে ৩৫ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া শুরু হয়েছে। দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে জল ছাড়া হয়েছে ৪৫ হাজার কিউসেক হারে। জলের চাপে পাঞ্চেতের সব গেটই খুলে দিতে হয়েছে। সেখানে জলস্তর বিপদসীমার ছ’ফুট উপরে। মাইথনে বিপদসীমার ১৩ ফুট উপরে রয়েছে জলস্তর। ডিভিসি সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তীসগঢ়ে প্রবল বৃষ্টি হওয়ায় তেনুঘাট থেকেও ১৬ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া শুরু হয়েছে। সেই জল এসে পড়বে পাঞ্চেতে। ফলে পাঞ্চেত থেকে আরও বেশি জল ছাড়তে হবে ডিভিসি-কে।
জুলাইয়ে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে আশানুরূপ বৃষ্টি হয়নি। ঘাটতি ছিল ৩৪ শতাংশ। এত দিন বৃষ্টির জন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন চাষিরা। কিন্তু পরিস্থিতি হঠাৎ পাল্টে যাওয়ায় খরার বদলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নদীনালাগুলি শনিবার শুরু হওয়া প্রবল বৃষ্টির জল ধরে রাখতে পারছে না। বৃষ্টি কবে থামবে, চাষি থেকে রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা সেটাই জানতে চাইছেন। আবহাওয়া দফতর জানিয়ে দিয়েছে, আগামী কয়েক দিন দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি চলবে। বৃষ্টি হবে উত্তরবঙ্গেও।
কেন এই অবস্থা?
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে থাকা শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্তটি একই জায়গায় রয়ে গিয়েছে। তার শক্তি কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। অন্য দিকে মধ্য ভারতের উপরে তৈরি হয়েছে একটি নিম্নচাপ। যা গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপরে থাকা ঘূর্ণাবর্তটিকে সরতে দিচ্ছে না। শক্তিও কমাতে দিচ্ছে না। গোকুলবাবুর ব্যাখ্যা, “দু’টি প্রাকৃতিক অবস্থার যুগলবন্দিতে পশ্চিমবঙ্গ ও সংলগ্ন এলাকায় ভারী বৃষ্টির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।”রবিবার রাত থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনা, কলকাতা, হুগলি, হাওড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া ও পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বর্ষণ হয়েছে। হাওয়া অফিস জানাচ্ছে, মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বর্ধমানের একাংশ এবং হুগলিতে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হবে কলকাতা এবং সংলগ্ন অঞ্চলেও। উত্তরবঙ্গের মালদহ এবং দুই দিনাজপুরেও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে ওই জেলা প্রশাসনগুলিকে সতর্ক করে দিয়েছেন আবহবিদেরা।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য প্রশাসন কতটা তৈরি? শনিবার কলকাতার প্রাণকেন্দ্রে জমা জলে চক্ররেল আটকে পড়ার ঘটনায় বিপর্যয় মোকাবিলার করুণ চেহারাটা প্রকট হয়ে গিয়েছিল। বন্যা হলে ফের যাতে তা বেআব্রু হয়ে না-পড়ে, সেই জন্য সোমবার দুপুরে উদ্যোগী হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই। রাজ্যের সব দফতরকে সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে। দুই ২৪ পরগনার জন্য ২৪ ঘণ্টার বিশেষ হেল্পলাইন (২৩২১-৮৩৪১) চালু করা হয়েছে বলে জানান মানসবাবু। বাঁধ ও রাস্তা সারাতে এক কোটি টাকা দরকার বলে জানান তিনি। বলেন, “কেন্দ্রের কাছে সাহায্য চাইবে রাজ্য। সেচ দফতরের সঙ্গে কথা না-বলে ডিভিসি-কে বাড়তি জল ছাড়তে নিষেধ করা হয়েছে।” মুখ্যসচিব সমর ঘোষ বলেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনার নদীবাঁধগুলির উপরে বিশেষ ভাবে নজর রাখতে বলা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার জন্য দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাশাসককে নির্দেশ দিয়েছে মহাকরণ।
|
বিপদসঙ্কেত |
ভারী বৃষ্টি
ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়, মধ্যপ্রদেশ |
অতি ভারী বৃষ্টি
দক্ষিণবঙ্গ, মালদহ, দুই দিনাজপুর |
বিপদের কারণ
দক্ষিণবঙ্গে ঘূর্ণাবর্ত+
মধ্য ভারতে নিম্নচাপ |
|
|
|
|
|
|