|
|
|
|
‘স্বচ্ছতা’র স্বার্থেই সিদ্ধান্ত |
প্রাক্তন অধিকর্তার বিতর্কিত নতুন পদ কাড়লেন কৃষিমন্ত্রী
|
অজয় বিশ্বাস • কলকাতা |
মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই জাতীয় খাদ্য-সুরক্ষা মিশনের উপদেষ্টার পদ থেকে প্রাক্তন কৃষি-অধিকর্তা শুভেন্দুদেব চট্টোপাধ্যায়কে সরিয়ে দিল রাজ্য।
বাম জমানার কৃষিমন্ত্রী নরেন দে’র ‘ঘনিষ্ঠ’ ওই অফিসারকে সম্প্রতি মহাকরণে ডেকে পাঠিয়ে পদত্যাগ করতে বলেন কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। কেন, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী। রবীন্দ্রনাথবাবুর কথায়, “পূর্বতন সরকার অর্থ দফতরকে পাশ কাটিয়ে বেআইনি ভাবে শুভেন্দুদেববাবুকে দু’বছরের জন্য উপদেষ্টা নিয়োগ করেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতিরও নানা অভিযোগ। পরিচ্ছন্ন প্রশাসনের স্বার্থেই ওঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
মহাকরণের খবর: প্রশাসনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে যে ‘শুদ্ধকরণ’ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এই কৃষি-আমলার অপসারণ তারই জের। যে প্রক্রিয়ারই অঙ্গ হিসেবে রবীন্দ্রনাথবাবু দফতরের দায়িত্ব নিয়েই বীরভূমের শিশল ফার্মের ছয় কর্মীর অবসরকালীন ভাতা ও ছুটি বিক্রির টাকা তছরুপ নিয়ে বিশেষ অডিটের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আর তাঁর নির্দেশেই ওই ঘটনায় জড়িত এক কর্মীর পদোন্নতির সুপারিশ আটকে দেওয়া হয়েছে। শুধু কৃষি নয়, খাদ্য দফতরে ‘নিয়োগ কেলেঙ্কারি’র জেরে এক উপ-সচিবকে সরানো হয়েছে। সরতে হয়েছে শিল্প-বাণিজ্য দফতরের এক আমলাকেও। নতুন সরকারের এ হেন ‘দুর্নীতি-বিরোধী’ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে ইউনাইটেড রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশন।
শুভেন্দুদেববাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ কী কী?
কৃষি-সূত্রের খবর: অন্যের বই নকল করে ছাপানো (যা নিয়ে মামলাও চলছে), বস্তা খরিদ সংক্রান্ত কেলেঙ্কারি, এমনকী আদালতে মিথ্যে হলফনামা দাখিল করে সরকারকেই মামলায় হারানোর মতো নানান অভিযোগ উঠেছে প্রাক্তন কৃষি-অধিকর্তার বিরুদ্ধে। এবং অভিযোগ, তদানীন্তন মন্ত্রীর সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠতা’র সুবাদেই তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রবীন্দ্রনাথবাবু দায়িত্ব নেওয়ার পরে মিথ্যে হলফনামার ঘটনাতেও তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
তদানীন্তন মন্ত্রী ওই ‘ঘনিষ্ঠতা’ প্রসঙ্গে কী বলছেন?
প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী নরেনবাবু এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি। অন্য দিকে যাঁকে ঘিরে এত বিতর্ক, সেই শুভেন্দুদেববাবু আদৌ মানতে চান না যে, তাঁকে পদচ্যুত করা হয়েছে। তাঁর যুক্তি, “আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে যা বলা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। আমি নিজেই পদত্যাগ করেছি। কারণ, রাজ্য প্রশাসনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ওই পদে কাজ করা আমার পক্ষে আর সম্ভব নয়।”
কিন্তু এত যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে?
প্রাক্তন কৃষি-অধিকর্তার জবাব, “ও সব তো অনেক আগেই মিটে গিয়েছে! নতুন করে বলার কিছু নেই।”
কৃষি দফতর-সূত্রের খবর, ২০০৯-এর এপ্রিলে কৃষি-অধিকর্তার পদ থেকে অবসর নেওয়ার পরে শুভেন্দুদেববাবুকে জাতীয় খাদ্য-সুরক্ষা মিশনের প্রকল্প-অধিকর্তা পদে ছ’মাসের জন্য নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থ দফতর তা খারিজ করে দেয়। তখন অর্থ দফতরকে পাশ কাটিয়ে তাঁকে ১৫ মাসের জন্য মিশনের উপদেষ্টা করা হয়। সেটা ২০১০-এর ডিসেম্বর।
এ বার শুভেন্দুদেববাবুর সেই নিয়োগই খারিজ করে তাঁকে পদত্যাগ করতে বলেছেন বর্তমান কৃষিমন্ত্রী। |
|
|
 |
|
|