টানা বর্ষণে ডুবেছে বসিরহাটের বহু এলাকা,
ভেঙেছে বাড়ি, বিপর্যস্ত ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল
কে বহু জায়গায় নিকাশি বেহাল, তার উপর বৃষ্টির বিরাম না থাকায় উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমায় পাঁচ হাজারের উপরে ঘরবাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বহু এলাকায় ডুবে গিয়েছে রাস্তাঘাট। ভেঙে পড়েছে বেশ কিছু মাটির বাড়ি। টানা বৃষ্টির ফলে সুন্দরবন এলাকায় বহু নদীর বাঁধ রীতিমত বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিছুদিন আগে সন্দেশখালি-২ ব্লকের আতাপুরে রায়মঙ্গল নদীর বাঁধ ধসে প্লাবিত হয়েছে বেশ কিছু এলাকা। এখনও সেভাবে মেরামতির কাজ না হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই এলাকার মানুষকে। তার উপর গত দু’দিন ধরে টানা বর্ষণের ফলে পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুর্গতদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। যে শব এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে সেই সব এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে পেটের রোগ। যে সব বাড়িতে কম জল উঠেছে সেখানেও রান্না করার মতো ব্যবস্থা নেই। চৌকির উপরে গবাদি পশু আর পরিবার নিয়ে সহাবস্থান করছেন অনেকে।
বসিরহাটের মহকুমাশাসক অনামিকা মজুমদার বলেন, “ইতিমধ্যে দুর্গত মানুষের মধ্যে পাঁচ হাজার পলিথিন বিলি করা হয়েছে। প্লাবিত এলাকার মানুষের মধ্যে বিলি করার জন্য মহকুমার সবকটি ব্লকের আধিকারিকদের বলা হয়েছে।” মহকুমা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টিতে স্বরূপনগর এলাকার সগুণা, চারঘাট, তেপুল-মির্জাপুর এবং শাঁড়াপুল-নির্মাণ পঞ্চায়েত এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন। জলের তলায় চলে গিয়েছে বেশ কয়েক হাজার বিঘা জমির ফসল। ভেঙে গিয়েছে মাটির বাড়ি। সোমবার প্রশাসনের কর্তারা ওই সব এলাকায় গিয়ে দুর্গতদের খোঁজখবর নেন। স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, “গোটা ব্লকটাই প্রায় প্লাবিত হওয়ার অবস্থায় চলে গিয়েছে। তবে চারটি পঞ্চায়েতের ১৫টি গ্রামের অবস্থা রীতিমত খারাপ। প্রায় ২০০টি মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। দুর্গতদের জন্য ১২টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। দুর্গতদের মধ্যে ১০০০ কুইন্টাল চাল এবং ৯০০টি পলিথিন দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শহরের পাশ দিয়েই নদী, খাল বয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এবং বড় বড় নিকাশি নালা থাকা সত্ত্বেও বসিরহাট শহরের বেশিরভাগ মানুষ এই টানা বর্ষণে জলবন্দি অবস্থাতেই দিন কাটাচ্ছেন। বসিরহাটের সর্দারআটি, মোমিনপুর, ভবানীপুর, শ্রীকৃষ্ণপুর, উত্তর দেবীপুর, ট্যাটরা, নেওলা, ভ্যাবলা, দক্ষিণ দেবীপুর-বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় চলে গিয়েছে। ওই সব এলাকার মানুষের অভিযোগ, নিকাশি ব্যবস্থা বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই। যত্রতত্র মাছ চাষ, নিকাশি নালা বুজিয়ে নির্মাণ ঘর, দোকান নির্মাণের ফলে জল বের হওয়ার রাস্তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
অন্যদিকে, একটানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন জেলার শিল্প এলাকা ব্যারাকপুর। শিল্পাঞ্চলের প্রধান রাস্তা বি টি রোডের একটা বড় অংশ জলের তলায়। জলবন্দি বরাহনগর থেকে বীজপুর পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। নিকাশি নালা উপচে জল ঢুকে গিয়েছে বাড়ির একতলায়। সোমবার সকাল থেকে এক কোমর জল ভেঙে অনেকেই জিনিসপত্র অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। পানিহাটি, খড়দহ, কামারহাটি ও বরাহনগরের কিছু অংশে পানীয় জলের কলও ডুবে গিয়েছে। আগরপাড়ার বাসিন্দা সুনীল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ঘর ডুবে গিয়েছে। কিন্তু ছেড়ে যেতে পারছি না চোরের ভয়ে। বাড়ির অন্যদের পাঠিয়ে দিয়েছি আত্মীয়ের বাড়িতে। বাজার-হাট দূরঅস্ত, বাথরুমের দরজা খুলতে পারছি না। সেপটিক ট্যাঙ্ক উপচে নোংরা জলে ঘর ভেসে যাচ্ছে। পুরসভাকে বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।’’
সোমবার এমনিতেই ২২শে শ্রাবণের ছুটি থাকায় অফিস, স্কুল বন্ধ ছিল। কিন্তু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও কল-কারখানাতেও হাজিরার সংখ্যা ছিল অপেক্ষাকৃত কম। বৃষ্টির গতি বেশি না থাকলেও এক নাগাড়ে হয়ে যাওয়া বৃষ্টিতে জমা জল নামতে পারেনি। শিল্পাঞ্চলের বি টি রোড লাগোয়া পুরসভাগুলি পাম্প চালিয়ে জল বার করার চেষ্টা করলেও তাতে বিশেষ লাভ হয়নি।
খড়দহে এ দিন ঘরের মধ্যেই জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে দু’বছরের এক শিশুর। বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়েছে। ফলে লোডশেডিংও চলছে সমানে। এ দিন সকাল থেকে বাজারগুলিও একদম ফাঁকা ছিল। শহরতলির বহু দোকানে জল ঢুকে যাওয়ায় জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন জলমগ্ন এলাকায় নৌকা নামানো হয়।
মহকুমা প্রশাসন সূত্রে খবর, জলবন্দি এলাকাগুলিতে চিড়ে, গুড়, ওষুধপত্র পাঠানো হয়েছে। বরাহনগর, কামারহাটি, পানিহাটি এমনকি ব্যারাকপুর শহরের বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন গত দু’দিন ধরে। জলবন্দি বাসিন্দাদের অভিযোগ, একটু বৃষ্টিতেই এই এলাকাগুলো জলে ডুবে যাওয়ার চিত্রটা নতুন নয়। কিন্তু প্রশাসন গোটা বছর হাত গুটিয়ে বসে থাকে। জলে ডুবে গেলে বিক্ষিপ্ত ভাবে চিড়ে, গুড় পাঠিয়ে ফের হাত গুটিয়ে নেয়।
একটানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন বি টি রোডের বেশ কিছু অংশ।
ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক অজয় পাল বলেন, ‘‘জলে ডুবে শিশুর মৃত্যুর ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সমস্ত পুরসভা ও ব্লকের আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, জলবন্দি মানুষদের সাহায্য করতে। গঙ্গার বিভিন্ন ঘাট থেকে ছোট নৌকা তুলে নিয়ে জলমগ্ন এলাকায় চালাতে বলা হয়েছে। খাবার ও ওষুধপত্র সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে।’’
Previous Story Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.