|
|
|
|
সাঁঝ নামতেই ‘চাঁদ’ উঠছে নাসিরেরপাড়ায় |
গৌরব বিশ্বাস • নাসিরেরপাড়া |
ষাট ওয়াটের বাল্বটা দপ করে জ্বলে উঠতেই সেকেন্ড দশেকের স্তব্ধতা। তার পর গ্রামের আকাশ গম গম করে উঠল সোল্লাশ, “আলো এসে গেছে!’’ ‘ওরিদাতু’ (একটি গ্রাম) মনে আছে? পঁচিশ বছর আগে কেরলের একটি অখ্যাত গ্রামে বিদ্যুতের ‘পদার্পণ’ নিয়ে জি অরবিন্দনের সেই ছবি? ভরা বাদলের এক সন্ধ্যায় নদিয়ার নাসিরেরপাড়া ভূগোলের সব সীমানা মুছে কেরলের সেই গ্রামটিকে ছুঁয়ে ফেলল। আর রাতভর ব্রজেন মণ্ডল কিংবা ফকির শিলের উল্লাস সীমান্ত উজিয়ে ভেসে গেল বাংলাদেশের অন্ধকার গ্রামগুলির দিকে।
শেকড়ের খোঁজে ‘অন্ধকার’ গ্রামে ফিরে নাসার বিজ্ঞানী মোহন ভার্গবও (শাহরুখ খান) তাঁর সাধের গ্রাম চরণপুরে আলো এনেছিলেন। বছর কয়েক আগে সেই প্রেক্ষাপটে ছবি (স্বদেশ) করেছিলেন আশুতোষ গোয়ারিকর। তবে নাসিরেরপাড়ায় কখনও সখনও পরিচয় ঘটেছে ব্যাটারির সঙ্গে। করিমপুরের বাজার থেকে পুরনো ব্যাটারি কিনে তাতে ঘরের এক-আধটা আলো কিংবা মিনিট কুড়ির টিভি দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে রিনাদেবীদের। “সে তো হাতে গোনা খান পাঁচেক বাড়িতে। তা ছাড়া বিদ্যুতের আলোর সঙ্গে ব্যাটারির তুলনা হয়? গোটা একটা খেলা কিংবা সিরিয়াল, কিছুই দেখতে পেতাম না আমরা। এ বার দেখব”, বলেন তিনি। |
|
বিদ্যুৎ বদলে দিয়েছে নাসিরেরপাড়ার সন্ধে। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক। |
সে দিন নাসিরেরপাড়া তাই রাত জেগে নিজেদের ঘরে বসে টিভিতে দেখল ভারত-ইংল্যান্ড ম্যাচ। দেশের সঙ্গে সে রাতে নাসিরেরপাড়াও যেন জিতল সারা রাত ধরে। টাটকা ম্যাচ দেখার আনন্দে সারা রাত বৃষ্টিতেও ভিজল গোটা গ্রাম। ‘ওরিদাতু’র সেই অনামী বৃদ্ধের মতো ফকিরবাবুরও চোখ কুঁচকে গিয়েছিল আলো জ্বলতেই। তার পর ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে তিনি বলে উঠেছিলেন, “বিশ্বাসই হচ্ছে না!” সে রাতে গোটা গ্রামই যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল সদ্য পাওয়া বিদ্যুতের আনন্দে। গ্রামের গোপাল মণ্ডল বললেন, “ভাবতে পারেন, স্বাধীনতার কত বছর পরে গ্রামে বিদ্যুৎ এল?” আর, হোগলবেড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের প্রতীমা প্রামাণিক বলছেন, “কত দিনের যে স্বপ্ন ছিল, ছেলে-মেয়েগুলো এ বার রাতেও পড়তে পারবে।” করিমপুর ১ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংগ্রেসের সুরপতি প্রমাণিক বলেন, “গ্রামের ৪৯১টি পরিবারকে প্রাথমিকভাবে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। বাকি বাড়িগুলিতেও কিছুদিনের মধ্যেই সংযোগ দেওয়া হবে।”
রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার তেহট্ট ডিভিশনাল ম্যানেজার দ্বৈপায়ন আচার্য বলেন, “নদিয়ার সব গ্রামেই আলো জ্বলবে, এমনই পরিকল্পনা আমাদের। সীমান্তের অধিকাংশ গ্রামেই আলো এসে গিয়েছে। নাসিরেরপাড়া তারই একটি। ওঁদের মতো আমাদেরও মনে হচ্ছে চাকরিটা সার্থক হল!”
আর, বাড়ির উঠোনে ছড়িয়ে থাকা আলোয় নাসিরেরপাড়ার বছর আটেকের ছেলেটা তাই বলেছিল, “এখন রোজ রাতে চাঁদ ওঠে আমাদের!” |
|
|
|
|
|