|
|
|
|
জঙ্গলমহলে এসে গ্রেফতার বন্দিমুক্তির কর্মীরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঝাড়গ্রাম |
গত দু’-আড়াই বছরে রাজনৈতিক আন্দোলনের জেরে জঙ্গলমহল থেকে যাঁরা ধরা পড়েছেন, তাঁদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে এসে এ বার গ্রেফতার ও হেনস্থার শিকার হলেন বন্দিমুক্তি আন্দোলনের কর্মীরাই।
রবিবার কলকাতা থেকে বেলপাহাড়িতে এসেছিলেন অরুণ চক্রবর্তী, অর্ঘ্য সাহা ও শুভময় গঙ্গোপাধ্যায়। অরুণবাবু বন্দিমুক্তি কমিটির সঙ্গে যুক্ত। কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র অর্ঘ্য ও শুভময় ছাত্র সংগঠন ইউএসডিএফ-এর সদস্য। রবিবার দুপুরে বেলপাহাড়ির তামাজুড়িতে তাঁদের গাড়ি আটকায় সিআরপিএফ। জঙ্গলমহলে তাঁরা কেন এসেছেন, সেই কৈফিয়ৎ তলব করা হয়। জামতলগড়া সিআরপিএফ ক্যাম্প এবং বেলপাহাড়ি থানায় নিয়ে গিয়ে দফায় দফায় জেরা করা হয় তাঁদের। পুলিশের দাবি, অরুণবাবুদের গাড়ি থেকে ‘আপত্তিকর’ প্রচারপত্র মেলে। শেষ পর্যন্ত ওই তিন জন এবং ঝাড়গ্রাম থেকে ভাড়া নেওয়া তাঁদের গাড়ির চালককে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৫১ ধারায় (নিবর্তনমূলক) গ্রেফতার করে সোমবার হাজির করা হয় ঝাড়গ্রাম আদালতে। |
 |
জামিনে মুক্তির পরে অরুণ চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র। |
বিচারক ৪ জনেরই জামিন মঞ্জুর করেন। তবে গাড়িটি এবং ৪ জনের মোবাইল ফোন ও অন্য জিনিসপত্র আটক করেছে পুলিশ। ধৃতদের আইনজীবী কৌশিক সিংহ এ ব্যাপারে বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মঙ্গলবার তদন্তকারী অফিসারকে আদালতে হাজির হয়ে কারণ ব্যাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরে অরুণবাবু বলেন, “জঙ্গলমহলে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা করার অধিকারটুকুও নেই বলে শুনেছিলাম। বাস্তব অভিজ্ঞতাও তাই হল। মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলের জন্য প্যাকেজের কথা বলছেন, কিন্তু যৌথ বাহিনী প্রত্যাহার না হলে কখনওই শান্তি আসবে না।” এই ঘটনার পর যৌথ বাহিনী প্রত্যাহারের দাবিতে আরও জোরালো আন্দোলন হবে বলে জানিয়েছেন ‘সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন-বিরোধী গণতান্ত্রিক মঞ্চে’র সম্পাদক অশোক জীবনও। অরুণবাবু জানান, রবিবার সকালে ট্রেনে কলকাতা থেকে তাঁরা ঝাড়গ্রামে পৌঁছন। ঝাড়গ্রাম থেকে গাড়ি ভাড়া করে বেলপাহাড়ির ভুলাভেদায় যান। ফেরার সময়ে দুপুর একটা নাগাদ তামাজুড়ির কাছে টহলরত সিআরপি জওয়ানেরা অরুণবাবুদের গাড়িটি থামায়। নিজেদের পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও গাড়ি তল্লাশি করা হয়। গাড়িটিতে সন্ত্রাস-বিরোধী মঞ্চের কয়েকটি প্রচারপত্র ছিল। জনগণের কমিটির জেলবন্দি নেতা ছত্রধর মাহাতোর স্ত্রী নিয়তি মাহাতোর তরফে প্রকাশিত ওই প্রচারপত্রে যৌথবাহিনী প্রত্যাহার, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি ও ইউএপিএ বাতিলের দাবিতে ১৫ অগস্ট ‘ধিক্কার দিবস’ পালনের কথা বলা হয়েছিল। ওই প্রচারপত্রের বয়ানের ভিত্তিতে অরুণবাবুদের মাওবাদী-ঘনিষ্ঠ সন্দেহে টেনেহিঁচড়ে জামতলগড়া সিআরপি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। এক সিআরপি অফিসারকে ‘দাদা’ সম্বোধন করায় অরুণবাবুর পিঠে এক জওয়ান থাপ্পড়ও মারেন বলে অভিযোগ। বিকেল পর্যন্ত টানা জেরা করার পরে বেলপাহাড়ি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও রাত পর্যন্ত কখনও একসঙ্গে, আবার কখনও আলাদা ভাবে তাঁদের জেরা করা হয়। অরুণবাবুদের মোবাইল ফোন, সঙ্গে থাকা কাগজপত্র, মানিব্যাগ, ব্যাঙ্কের এটিএম কার্ড ইত্যাদি ‘সিজ’ করে পুলিশ। কলকাতা ও মেদিনীপুর থেকে মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা জেলা পুলিশে ফোন করেও অরুণবাবুদের সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু জানতে পারেননি। |
|
|
 |
|
|