|
|
|
|
বিসর্জনের গঙ্গা দূষণ |
পাড়েই প্রতিমা গলিয়ে ফেলা হবে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
গঙ্গার দূষণ রোধে এ বার বদলে যাচ্ছে কলকাতার দুর্গা প্রতিমার বিসর্জনের গোটা প্রক্রিয়াটাই। এ বার আর গঙ্গার জলে ফেলা হবে না প্রতিমা। তার বদলে পাড়ে রেখে হোস পাইপ দিয়ে গঙ্গার জলেই ধুয়ে প্রতিমা গলিয়ে দেওয়া হবে।
শহরে দুর্গাপুজোর ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার এ কথা জানিয়ে বলেন, “গত বছরই আমরা চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু হাতে যথেষ্ট সময় না থাকায় এ ভাবে বিসর্জনের ব্যবস্থা করা যায়নি। এ বছর আমরা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পুজো কমিটির সঙ্গে কথা বলেছি। কলকাতার বড় পুজো কমিটিগুলোর সংগঠন ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সদস্যদের সঙ্গেও এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইতিমধ্যেই শহরের অন্তত পঁচিশটি পুজোর উদ্যোক্তারা আমাদের প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন।” এ ভাবে বিসর্জনের ক্ষেত্রে যাবতীয় ধর্মীয় নিয়ম-কানুন মানা হবে বলে জানান দেবাশিসবাবু। তাঁর আশা, এ বছর শেষ পর্যন্ত আরও অনেক পুজো কমিটি প্রতিমা গঙ্গার জলে না ফেলে ডাঙায় হোস পাইপ দিয়ে গলিয়ে ফেলতে রাজি হবে।
প্রতিমার গায়ে যে রং ব্যবহার হয়, তাতে বিপজ্জনক মাত্রায় সীসা থাকে। বিসর্জনের পরে সেই সীসা গঙ্গার জলে মেশে। মাছের মাধ্যমে ওই বিষাক্ত ধাতু মানুষের শরীরে ঢোকে। গঙ্গাস্নান বা গঙ্গাজলের নানাবিধ ব্যবহারেও তা মানুষের শরীরে যায়।
সীসা নিয়মিত শরীরে ঢুকলে মানুষের বুদ্ধি কমে, স্মৃতি দুর্বল হয়, রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি হয়, কোষ্ঠকাঠিন্যও দেখা দেয়। কলকাতার মানুষের শরীরে নানা ভাবেই নিয়মিত সীসা ঢুকছে। কেবল প্রতিমার গায়ের রং-ই নয়, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সব রকম রঙেই বিপজ্জনক মাত্রায় সীসা রয়েছে।
বেশ কিছু দিন হল সব রকম রংকেই সীসামুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ রাজ্যে প্রতিমায় সীসাবিহীন রং ব্যবহারে উৎসাহিত করার পাশাপাশি এ বার প্রতিমা বিসর্জনের পদ্ধতি বদলে জলে সীসা মেশা রোখা শুরু হল। অবশ্য গত দু’বছর প্রতিমায় সীসামুক্ত রং ব্যবহারে উৎসাহিত করতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যতটা তৎপরতা দেখা গিয়েছিল, এ বছর ততটা এখনও দেখা যায়নি। ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’-এর সহ-সভাপতি তথা ‘শিবমন্দির’ পুজো কমিটির সম্পাদক পার্থ ঘোষ জানালেন, পর্ষদের তৎপরতা না থাকলেও বহু পুজো কমিটিই সীসামুক্ত রং ব্যবহারের পাশাপাশি নতুন ধরনের বিসর্জনে রাজি হয়েছে। তবে কারও কারও মনে এখনও দ্বিধা রয়েছে বলে জানালেন পার্থবাবু। বিসর্জনের প্রচলিত পদ্ধতি ছেড়ে নতুন একটা পদ্ধতি গ্রহণ করতে ওই উদ্যোক্তাদের খানিকটা সময় লাগবে বলে মনে করেন তিনি। পার্থবাবু বলেন, “ফোরামে এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মোটামুটি সবাই রাজি হয়েছে।”
ধর্মীয় কোনও বাধা বা আপত্তি কি এ ক্ষেত্রে উঠতে পারে?
পার্থবাবুর স্পষ্ট বক্তব্য, “আমরা তো নতুন কিছু করছি না। নৈহাটিতে বিশালাকার কালীপ্রতিমা বিসর্জন দেওয়া যায় না বলে বহু আগে থেকেই সেখানে প্রতিমা জল দিয়ে ধুয়ে গলিয়ে দেওয়ার রীতি চালু আছে। তা ছাড়া কোনও কোনও বাড়ির পুজোতেও প্রতিমা নদীতে নিয়ে যাওয়ার অসুবিধা থাকলে ওই পদ্ধতিতেই বিসর্জন হয়।” পুরোহিতদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানিয়েছেন, পুজোর বিধি অনুযায়ী দর্পণে বিসর্জন হয়ে যাওয়ার পরে প্রতিমায় আর প্রাণ থাকে না। তার পরে যা হয়, তা সংস্কার মাত্র। যেমন অনেকেই মনে করেন, বাড়ির প্রাত্যহিক পুজোর ফুল জলেই ফেলতে হয়। এই সংস্কার থেকেই লোকে পুকুরের জলে পুজোর ফুল ফেলে দূষণ ঘটায় বলে জানান পার্থবাবু।
নতুন পদ্ধতিতে বিসর্জনের গোটা প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে গঙ্গার ঘাটে যে পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে, তারও প্রস্তুতি শুরু করেছে পুরসভা। দেবাশিসবাবু বলেন, “এ কাজে দমকলের সাহায্য লাগবে। আমরা দমকলমন্ত্রী জাভেদ শামিমের সঙ্গে কথা বলব। তা ছাড়া প্রতিমা গলিয়ে দেওয়ার পরে রং এবং মাটি যাতে গঙ্গায় গিয়ে না পড়ে, তার জন্যও পৃথক ব্যবস্থা করতে হবে।” |
|
|
|
|
|