ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে গোলমালের জেরে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধল জনতার। সোমবার সকালে গোঘাটের টাঁরুই গ্রামে পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠি চালাতে হয় পুলিশকে। কয়েক জন মহিলা-সহ এই ঘটনায় জনা ২০ গ্রামবাসী জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। পাল্টা হামলায় জখম হয়েছেন ৩ জন পুলিশ কর্মী। এই ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, টাঁড়ুই গ্রামের ওয়াকফ সম্পত্তির প্রায় ৭ বিঘা জমি নিয়েই গোলমালের সূত্রপাত। বংশানুক্রমে ওই জমি চাষ করে আসছিলেন নাজির আহমেদ। ২০০৮ সালে গ্রামবাসীদের একাংশ দাবি তোলে, অবৈধ ভাবে ওই ওয়াকফ সম্পত্তি ভোগদখল করছেন নাজির। শেখ আনোয়ার আলি নামে গ্রামের আর এক জনকে সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্ব দিতে হবে বলে দাবি ওঠে। যার সমর্থনে একটি কমিটিও তৈরি হয়। বিষয়টি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা শুরু হয়। ওয়াকফ ট্রাইবুনালে তার ফয়সালা এখনও হয়নি।
ইতিমধ্যে গ্রামবাসীদের ওই অংশটি জমির দখল নিয়ে নেয়। তাতে স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্বের মদত ছিল বলে অভিযোগ। নাজির আবার তৃণমূল-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। বিএলএঢ়আরও-র রিপোর্ট খতিয়ে দেখে মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “৩.১৭ একর (প্রায় ৭ বিঘা) জমি নিয়ে বছর দু’য়েক ধরে গোলমাল চলছিল। ওই জমি জোর করে দখল করা হয়েছিল। এ দিন রেকর্ড-ভুক্ত মালিকের হাতে জমি তুলে দেওয়া হয়েছে।” মহকুমাশাসক জানান, বিষয়টি নিয়ে ওয়াকফ ট্রাইবুনালে একটি মামলা চলছে। এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। পরবর্তীকালে যা সিদ্ধান্ত হবে, সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।” আরামবাগের এসডিপিও রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়, মহকুমাশাসক অরিন্দমবাবু দু’জনেই ছিলেন এ দিনের ‘অপারেশনে।’ জনতার সঙ্গে সংঘর্ষের পরেও পুলিশ অবশ্য জমিটি নাজিরের হাতে ফিরিয়ে দিতে পেরেছে। জমিতে চাষ শুরু করেন তিনি। জখম পুলিশকর্মীদের চিকিৎসা করানো হয় কামারপুকুর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
নাজির বলেন, “পারিবারিক ওয়াকফ সম্পত্তি অন্যায় ভাবে সিপিএমের নেতৃত্বে দখল হয়ে গিয়েছিল। এত দিন প্রশাসনও পুনরুদ্ধারে সাহস পাচ্ছিল না।” অন্য দিকে, গ্রামবাসীদের তরফে কাজি আবিদ আলি, আবদুল রহিম, গোলাম কুদ্দুস প্রমুখের বক্তব্য, “গ্রামের ৬৪টির মধ্যে ৬৩টি পরিবারই চেয়েছিল অবৈধ ভাবে দখল হয়ে যাওয়া ওয়াকফ সম্পত্তি মসজিদ-সহ গ্রামের উন্নয়নে কাজে লাগুক। তা না করে অন্যায় ভাবে ওই জমি দখল করা হল।” সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, এই সম্পত্তি-সংক্রান্ত গোলমালের সঙ্গে তাঁদের কোনও যোগ নেই। |