ঘূর্ণাবর্তের জেরে দফায় দফায় বৃষ্টিতে সোমবারও ভুগতে হল হাওড়া ও হুগলি দুই জেলার মানুষকে। সপ্তাহের প্রথম দিন কাজে বেরোতে পারলেন না অনেকে। শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই বৃষ্টি ডোবাল দুই জেলার বহু গ্রামীণ এলাকাকে। মূলত, নিকাশি খালগুলির দীর্ঘদিন সংস্কার না-হওয়ার ফলেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
হাওড়ার ডোমজুড়ের বাঁকড়া-২ পঞ্চায়েতের কবরপাড়া, শেখপাড়া, পশ্চিমপাড়া, বাগপাড়া, মল্লিকপাড়া, বাঁকড়া-৩ পঞ্চায়েতের পেয়াদাপাড়া, বালি-জগাছা ব্লকের সাঁপুইপাড়া, বসুকাটি, বালি-ঘোষপাড়া, আনন্দনগর-চকপাড়া সর্বত্রই জলমগ্ন। এর মধ্যে বাগপাড়া এবং পেয়াদাপাড়ার অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। বহু বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে। বাঁকড়া খাল দীর্ঘদিন সংস্কার না-হওয়ার জন্যই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে অভিমত সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের। অন্য দিকে, বালি-জগাছা ব্লকের উপর দিয়ে যে সব নিকাশি খাল হাওড়া ড্রেনেজ ক্যানালে এসে মিশেছে, সেগুলিও দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি।
ডোমজুড়ের তৃণমূল বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বালি-জগাছা এবং ডোমজুড়ের জলমগ্ন এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, “নিকাশি খালগুলি যাতে সংস্কার করা হয়, তার জন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা আমি সেচ দফতরে জমা দিয়েছি। তবে বর্ষায় এই সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়। বর্ষার পরেই কাজ শুরু হবে।” বাঁকড়ার পেয়াদাপাড়ায় একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে তিনি নিজের উদ্যোগে ত্রাণ শিবির খুলেছেন বলে রাজীববাবু জানান। সেখানে কয়েকটি নিচু এলাকার দুর্গত মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
বাগনানের বেড়াবেড়িয়া, এনডি ব্লক প্রভৃতি এলাকায় একহাঁটু করে জল জমে গিয়েছে। এখানেও একই সমস্যা। নিকাশি খালগুলির দীর্ঘদিন সংস্কার না-হওয়া। বাগনান থানা গণতান্ত্রিক নাগরিক সমিতির পক্ষে প্রসূন রায়ের অভিযোগ, “শহরের নিকাশি খালগুলি সংস্কারের জন্য আমরা পঞ্চায়েত সমিতির কাছে বারাবার আবেদন করলেও কোনও কাজ হয়নি।” বাগনান গ্রামীণ হাসপাতালের সামনের মাঠেও জল জমে যায়। সুপার ইন্দ্রনীল মিত্র জানান, আর সামান্য জল জমলেই হাসপাতালে ঢুকে যাবে। সেই আশঙ্কায় তিনি নিজেই হাসপাতাল সংলগ্ন নিকাশি খালটি সংস্কার করিয়েছেন।
বাগনান-১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কমার্ধ্যক্ষ দেবানন্দ ঘোষ বলেন, “বাগনান স্টেশন রোডে নিকাশি খালের উপরে একটি কালভার্ট করলে জল জমার সমস্যা অনেকটাই মিটবে। ওই খাল আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। খালটি সংস্কার এবং তার উপরে কালভার্ট হলে তবু নোংরা জল বেরোতে পারবে। তবে জমিটি রেলের। এবং ওই কাজের জন্য অনেক টাকার দরকার। সেই কারণে আমরা রেলকে চিঠি লিখে কালভার্ট বানাতে অনুরোধ করেছি।”
আমতা-২ ব্লকের অমরাগড়ি, ঝামটিয়া, গাজিপুর, প্রভৃতি পঞ্চায়েত এলাকায় মাঠ এবং পুকুর সমান হয়ে গিয়েছে। ফলে, পণ্ড আমন ধানের চারা রোপণের কাজ। খড়িয়প গ্রামের বাসিন্দা লিয়াকত আলি বলেন, “চার বিঘা জমিতে ধান রোপণের জন্য বীজতলা বানিয়েছিলাম। জমিতে এখন এক হাঁটু জল। চারা রোপণ করতে পারলাম না।” মহকুমা কৃষি দফতরের ধারণা, নিচু এলাকাগুলির খেত থেকে দ্রুত জল না শুকোলে আমন চাষের ক্ষতি হতে পারে। জলমগ্ন উদয়নারায়ণপুর এবং জগৎবল্লভপুরের কয়েকটি এলাকাও। বাগনান, শ্যামপুর এবং উলুবেড়িয়ায়া গঙ্গা ও রূপনারায়ণের নদীবাঁধগুলির অবস্থা আরও খারাপ। এ দিন হুগলির হরিপালের ডাকাতিয়া খালের কনকপুর বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ফলে জল ঢুকে পড়ে ব্লকের দ্বারহাটা, কৈকালা এবং সহদেব গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু গ্রামে। ১০ হাজার একর ধানজমিতেও জল জমে যায়। জলবন্দি হওয়ার আগেই অবশ্য গ্রামবাসীদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বিভিন্ন স্কুলের ত্রাণ শিবিরে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে খালটির সংস্কার না হওয়ার ফলেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ দিন দুপুরে পরিস্থিতি দেখতে আসেন চন্দননগরের মহকুমাশাসক অভিজিৎ মিত্র। তিনি বলেন, “মহকুমার বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে। ধানজমিও জলের তলায়। দ্রুত খালটি সংস্কার করা হচ্ছে।” |