পুজোর মুখে বন্ধ কারখানা, বেকার শ’চারেক শ্রমিক
পুজোর মুখে বন্ধ হয়ে গেল ভদ্রেশ্বরের লগন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। ফলে, কর্মহীন হয়ে পড়লেন শ’চারেক শ্রমিক। সোমবার সকালের শিফ্টে কাজে এসে শ্রমিকেরা দেখেন কারখানার গেট বন্ধ। ঝুলছে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্কের’ নোটিস, যেখানে শ্রমিক অসন্তোষকেই কারখানা বন্ধ রাখার কারণ বলে উল্লেখ করেছেন মালিক পক্ষ। যদিও শ্রমিকদের দাবি, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তাঁদের ছিল ঠিকই। কিন্তু সে সব নিয়ে নানা সময়ে মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা হলেও গোলমাল কিছু ছিল না। এমন কোনও বড়সড় আন্দোলনও হয়নি সাম্প্রতিক সময়ে, যার জেরে উৎপাদনে প্রভাব পড়ে।
শ্রমিকদের মূল দাবি এখানে তিনটি। অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ, বেতন থেকে মহার্ঘ্য ভাতার টাকা কাটা বন্ধ করা এবং ওভারটাইমের মজুরি দ্বিগুণ করা। দীর্ঘ দিন ধরেই তাঁরা এই দাবিগুলি জানিয়ে আসছেন। একাধিক বার দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও হয়েছে। যদিও কোনও সমাধান সূত্রে পৌঁছনো যায়নি। গত ৪ অগস্ট কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, দাবিগুলি নিয়ে আপাতত কোনও পদক্ষেপ করা সম্ভব নয়। পুজোর পরে তাঁরা এ বিষয়ে ভাববেন। শ্রমিকদের দাবি, মালিক পক্ষের এই সিদ্ধান্তে অসন্তোষ থাকলেও তারপরে কোনও গণ্ডগোল হয়নি।
কারখানার সামনে উদ্বিগ্ন শ্রমিক। ছবি: তাপস ঘোষ।
২০০৮ সালে এই দাবি নিয়ে শ্রমিক আন্দোলনের জেরে আরও এক বার সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস ঝুলিয়েছিল কারখানা কর্তৃপক্ষ। টানা আট মাস বন্ধ থাকার পরে ২০০৯ সালের ১০ অগস্ট ফের খুলেছিল কারখানা। জুটমিলের যন্ত্রাংশ উৎপাদন হয় এখানে। স্বাভাবিক উৎপাদন তারপর থেকে ব্যাহত হয়নি বলে দাবি করেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনগুলি। তার পরেও আগাম কোনও বার্তা না দিয়েই সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস ঝোলানোর পিছনে কর্তৃপক্ষের ‘দূরভিসন্ধি’ দেখতে পাচ্ছেন তাঁরা।
কারখানার অস্থায়ী কর্মী সোমনাথ পালের কথায়, “গত ছ’বছর ধরে কাজ করছি। প্রথমে বলা হয়েছিল, দু’বছরেই স্থায়ীকরণ হবে। কিন্তু কোথায় কী! এ নিয়ে বহু আলোচনা করেও লাভ হয়নি। আর এ বার তো কারখানা বন্ধই করে দেওয়া হল।” অনুপ নিয়োগী নামে আর এক অস্থায়ী শ্রমিক বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে খামখেয়ালিপনা চলছে মালিক পক্ষের। নূন্যতম ৪০-৫০ টাকা বেতনেও এখানে অনেকে কাজ করেন। ১০ বছরেও অনেকের চাকরি পাকা হয়নি। পুজোর মুখে এতগুলো লোক বেকার হয়ে গেল। কী যে করব, কে জানে!”
কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। চন্দননগরের মহকুমাশাসক অভিজিৎ মিত্র বলেন, “পুজোর মুখে এত মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়লেন, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ওঁরা যদি প্রশাসনের দ্বারস্থ হন, তা হলে সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে জট কাটানোর চেষ্টা করা হবে।”
আইএনটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক এবং এই কারখানার উনত্রিশ বছরের কর্মী বিশ্বনাথ ধারা বলেন, “গত সপ্তাহে তিন দফা দাবি নিয়ে আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম। তাকে কর্তৃপক্ষ কোনও আশ্বাস দেয়নি। আমি যেহেতু আন্দোলন করছি, সে জন্য গত সপ্তাহে আমাকে নিরাপত্তা রক্ষীরা এক দিন কারখানায় ঢুকতে দেয়নি। তাতে শ্রমিকেরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। কিন্তু শ্রমিক অসন্তোষের জেরে কাজ বন্ধের মতো কোনও ঘটনা ঘটেনি।” আইএনটিটিইউসি-র সম্পাদক তথা কারখানা কর্মী সঞ্জীব দাস বলেন, “শ্রমিকেরা তাঁদের ন্যায্য দাবি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার করেছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বেআইনি ভাবে সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস ঝোলাল।”
Previous Story Next Story



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.