|
|
|
|
সম্পাদকীয় ২... |
পরাজিত অর্থনীতি |
রাজনীতির হাতে গোহারান হারিতে হইবে ভারতে ইহাই অর্থনীতির নিয়তি। মাঝেমধ্যে এমন কিছু পরিস্থিতি তৈরি হয়, যখন আশা জাগে যে হয়তো অর্থনীতি তাহার প্রাপ্য মর্যাদা পাইতেও পারে। কিন্তু, তাহার অব্যবহিত পরেই স্পষ্ট হয়, তাহা আশামাত্র। বাস্তব বদলাইবার নহে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন বলিলেন যে ব্যক্তিগত গাড়িতে ব্যবহারের জন্য ডিজেল কেনা হইলে তাহাতে সরকার আর ভর্তুকি দিবে না, তখন অর্থনীতির যুক্তি প্রতিষ্ঠার আশা জাগিয়াছিল। কিন্তু, দুই দিন না কাটিতেই অর্থমন্ত্রী জানাইয়া দিলেন, সরকার সেই পথে হাঁটিবে না। যেমন ভর্তুকি, তেমনই থাকিবে। অর্থমন্ত্রী এই সিদ্ধান্তের একটি কারণ দর্শাইয়াছেন বটে, কিন্তু অনুমান করা চলে, মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে চটাইবার সাহস সরকারের হইল না। তাহার ফলেই পিছু হঠা। অর্থমন্ত্রী যে কারণটি দর্শাইয়াছেন, তাহা এতই ছেঁদো যে বিশ্বাস করা কঠিন। তিনি বলিয়াছেন, ব্যক্তিগত গাড়ির ক্ষেত্রে ডিজেলে ভর্তুকি থাকিবে না, কিন্তু গণপরিবহণে থাকিবে, এমন ব্যবস্থা হইলে দুই রকম দামে ডিজেল বেচিতে হইবে। তাহাতে কালোবাজারির বাড়বাড়ন্ত হইবে। অর্থমন্ত্রী কি সত্যই ভাবেন যে গণপরিবহণকে ভর্তুকি দিতে হইলে তাহা ডিজেলের দামের মাধ্যমেই দিতে হইবে? বাজারে একই পণ্য দুই দামে বেচা যে কোনও সুস্থ এবং সুস্থায়ী ব্যবস্থা নহে, তাহা অর্থনীতির প্রাথমিক স্তরের ছাত্ররাও জানেন। বাজারের নিয়ম মানিয়া ডিজেলের যা দাম হওয়া উচিত, সেই দামেই তাহা বিক্রয় করিতে হইবে। গণপরিবহণে ভর্তুকি নগদে সরাসরি দেওয়ার ব্যবস্থা করাই বিধেয়। আর্থিক সংস্কারের মূল লক্ষ্য স্বচ্ছতা পণ্যমূল্যে ভর্তুকির অস্বচ্ছ ব্যবস্থাটিকে সমূল উৎপাটন না করিতে পারিলে সেই স্বচ্ছতার প্রতিষ্ঠা সম্ভব নহে। অর্থমন্ত্রী এই কথাগুলি জানেন না, ভাবিবার কোনও কারণ নাই।
ব্যক্তিগত ডিজেল গাড়ির ক্ষেত্রে প্রশ্নটি অবশ্য শুধু ভর্তুকিতেই ফুরায় না। বেশির ভাগ ডিজেল গাড়িই পরিবেশের পক্ষে অধিকতর বিপজ্জনক। কাজেই, সেই গাড়ির ব্যবহার যত কমে, ততই মঙ্গল। বাজারের দামেও যদি ডিজেল কিনিতে হয়, তবুও তাহার দাম পেট্রোলের তুলনায় ঢের কম পড়িবে। অর্থাৎ, মানুষ যে যুক্তিতে ডিজেল গাড়ি ব্যবহার করেন, সেই যুক্তিটি অপরিবর্তিতই থাকিবে। পরিবেশের কথা ভাবিয়া সরকার যদি ডিজেল গাড়ির সংখ্যা কমাইতে চাহে, তবে দুইটি পন্থা আছে। এক, ডিজেল গাড়ি নিষিদ্ধ করা; দুই, ডিজেল গাড়ি ব্যবহারকে আর্থিক ভাবে অগ্রহণযোগ্য করিয়া তোলা। প্রথম পথটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নসুলভ, অতএব পরিত্যাজ্য। দ্বিতীয় পথটি বাজারের পথ। সেই পথে চলাই বিধেয়। ডিজেল গাড়ির উপর সরকার প্রভূত বিক্রয়কর আরোপ করিতে পারে, পরিবেশ সেস আদায় করিতে পারে। তাহাতে গাড়ির দাম বাড়িবে। (অর্থমন্ত্রী অবশ্য এই প্রস্তাবেও নারাজ। দুর্জনে বলিতে পারে, তাঁহার উপর বিভিন্ন স্বার্থগোষ্ঠীর চাপ আছে।) গাড়ি চালাইতে গেলে পথ কর দিতে হয়। ডিজেল গাড়ির পথ কর পেট্রোল গাড়ির তুলনায় অনেক বেশি করিতে হইবে। টোল ট্যাক্স ইত্যাদিও ডিজেল গাড়ির ক্ষেত্রে বেশি ধার্য করিতে হইবে। শহরের প্রাণকেন্দ্রের এলাকায় ডিজেল গাড়ির প্রবেশ নিষিদ্ধ করা যাইতে পারে। মোট কথা, ডিজেল গাড়ির উপর এমন ভাবে আর্থিক এবং অন্যান্য বোঝা চাপাইয়া দিতে হইবে, যাহাতে জ্বালানির খরচের সুবিধার তুলনায় অন্যান্য অসুবিধা বেশি হয়। তবে, একই সঙ্গে স্মরণে রাখা প্রয়োজন যে প্রযুক্তি বদলাইতেছে। নূতন প্রযুক্তির ডিজেল গাড়ি পরিবেশের পক্ষে পূর্বের তুলনায় কম ক্ষতিকারক। কাজেই, আর্থিক বোঝা চাপাইবার পূর্বে প্রযুক্তিগত বিচারও প্রয়োজন। |
|
|
 |
|
|