সম্পাদকীয় ১...
গণতন্ত্রের পরিসর
কৃষ্ণাঙ্গ যুবক মার্ক দুগ্গান-এর পুলিশের গুলিতে মৃত্যু এবং তাহার প্রতিবাদে বাহির হওয়া শান্তি মিছিলের সহসা হিংসাত্মক হইয়া ওঠার মধ্য দিয়া উত্তর লন্ডনে যে দাঙ্গা সহসা ছড়াইয়া পড়িয়াছে, তাহা রীতিমত উদ্বেগের। দাঙ্গায় লিপ্ত হইয়া যাহারা অগ্নিসংযোগ করিতেছে, দোকানপাট ভাঙচুর করিতেছে এবং লুঠপাট চালাইতেছে, তাহারা সকলেই যে পুলিশি অভিযানের রাজনৈতিক নিন্দায় মগ্ন, এমন নয়। কেননা এই অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর বা লুঠতরাজ কোনওটাই কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি হইতে পারে না, এমনকী প্রতিবাদও নয়, সমাজবিরোধীদের কাজ, যাহারা সর্বদা এবং সর্বত্র আন্দোলনকারীদের আড়ালে আত্মগোপন করিয়া থাকে এবং দাঙ্গা-পরিস্থিতির সুযোগ লয়। লন্ডনের টটেনহ্যাম অঞ্চলে যে দাঙ্গায় হিংসার আগুন জ্বলিতেছে, তাহাকে আক্ষরিক অর্থে কোনও জাতিদাঙ্গা বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলা যাইবে না। কিন্তু যে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ সম্প্রদায় প্রধানত পুলিশের বিরুদ্ধে তাহাদের ক্রোধ উগরাইয়া দিতেছে, তাহাদের কাছে ব্রিটিশ পুলিশই শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য ও বৈষম্যনীতির প্রতীক।
দাঙ্গার কারণ হিসাবে অনেকে ব্রিটেনবাসী কৃষ্ণাঙ্গদের বেরোজগারি, ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস এবং অথর্নৈতিক পরিস্থিতির অবনতিজনিত দারিদ্র ও অনিশ্চয়তাকে শনাক্ত করিয়াছেন। এই মূল্যায়ন পরিস্থিতির বাস্তবতার সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ, সন্দেহ নাই। আবার অনেকের ধারণা, শ্বেতাঙ্গ বনাম কৃষ্ণাঙ্গদের চিরাচরিত জাতিবৈর, কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি শ্বেতকায়দের ইতিহাসসিদ্ধ বর্ণবৈষম্যবাদী মনোভাব ও তাহার প্রতিক্রিয়া ব্রিটিশ সমাজের অভ্যন্তরে চাপা ছিল, পুলিশের গুলিতে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণের মৃত্যুতে তাহাই বিস্ফোরিত হইয়াছে। উভয় ধারণার মধ্যেই কিছু সত্য থাকা সম্ভব। তবে কৃষ্ণাঙ্গদের সহিত ব্রিটিশ পুলিশের সম্পর্ক যে ব্রডওয়াটার ফার্ম-এর দাঙ্গার সিকি শতাব্দী পরেও বিশেষ সহজ, স্বাভাবিক ও মসৃণ হয় নাই, এ ঘটনায় তাহা স্পষ্ট। এমনকী ১৯৯৮ সালে প্রাতিষ্ঠানিক বর্ণবৈষম্য ঘুচাইবার জন্য স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের তরফে যে সক্রিয় তৎপরতা শুরু হয়, তাহার সুফলও যথেষ্ট ফলে নাই। মার্ক দুগ্গানকে ব্রিটিশ পুলিশের সেই স্কোয়াডই গুলি করিয়া হত্যা করে, ‘ট্রাইডেন্ট’ নামধারী যে-স্কোয়াড কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মধ্যে বন্দুকের সংস্কৃতি দমন করার দায়িত্বে ছিল। দুগ্গানকে গুলি করার আগে বেশ কিছু কাল ধরিয়া এই স্কোয়াড তাহাকে অনুসরণ করিতেছিল। দুগ্গানের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল এবং সে-ই প্রথমে গুলি চালায়, ইহা যদি বিশ্বাসযোগ্য হয়ও, তাহার গুলিতে কেহ হতাহত হয় নাই। ব্রিটিশ পুলিশের যে বন্দুকবাজ তাহাকে হত্যা করে, হত্যা করার জন্য চাঁদমারি করার কোনও অনিবার্যতা কিন্তু তাহার ছিল না।
হয়তো এই সব কিছুর পিছনে ব্রিটিশ রাষ্ট্রনীতিরও অপ্রত্যক্ষ ক্রিয়া রহিয়াছে। ব্রিটেন সহ পশ্চিমের অবাধ গণতন্ত্রের দেশগুলি ইদানীং বহুসংস্কৃতিবাদের অনুশীলন অপেক্ষা জাতীয়তাবাদের অনুশীলনে অধিকতর মনোযোগী হইতেছেন। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের মতো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও বহুসংস্কৃতিবাদের সম্পর্কে বড় রকমের প্রশ্ন তুলিতেছেন। গণতন্ত্রের উদার পরিসর ইউরোপের দেশে দেশে ক্রমেই সংকীর্ণ, সঙ্কুচিত হইয়া আসিতে পারে, এমন আশঙ্কা বাড়িতেছে। তাহার সহিত যুক্ত হইয়াছে কঠিন আর্থিক পরিস্থিতি, এবং তাহার মোকাবিলায় ক্যামেরন সরকারের কঠোর আর্থিক নীতি, যে নীতির প্রবল প্রকোপ পড়িতেছে সমাজের অ-সচ্ছল বর্গগুলির উপর, যাহাদের মধ্যে অ-শ্বেতাঙ্গের অনুপাত বিপুল। এই অবস্থায় যে সঙ্ঘাত অনিবার্য হইয়া ওঠে, টটেনহ্যাম কাণ্ড তাহারই একটি প্রকরণ কি না, সেই প্রশ্ন উঠিবেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.