|
|
|
|
সুপারিশ কুলুঙ্গিতে রেখেই ট্রাম বাঁচাতে আজ বৈঠক |
অশোক সেনগুপ্ত |
বিদ্যুতে লোকসান ঠেকাতে রাজ্য ‘সব পথ’ খোলা রাখলেও পরিবহণে ভর্তুকির দিন শেষ হতে চলেছে। রুগ্ণ সরকারি পরিবহণ সংস্থাগুলোকে স্পষ্ট বলে দেওয়া হয়েছে, টিকে থাকার রাস্তা তাদের নিজেদেরই খুঁজে নিতে হবে।
সেই রাস্তা খুঁজতেই আজ, মঙ্গলবার বৈঠকে বসছে কলকাতা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি)-র পরিচালন পর্ষদ।
প্রায় দেউলিয়া ট্রাম কোম্পানি বেশ ক’বছর ধরেই কার্যত সরকারি ভর্তুকির ভরসায় করে চলছে সিটিসি। যেমন চলছে আরও চারটি সরকারি পরিবহণ নিগম কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ (সিএসটিসি), দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ (এসবিএসটিসি), উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ (এনবিএসটিসি) এবং পশ্চিমবঙ্গ ভূতল পরিবহণ (ডব্লিউবিএসটিসি)। পাঁচটির পিছন থেকেই ভর্তুকির খুঁটি সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নতুন সরকার জানিয়ে দিয়েছে, সংস্থাগুলোকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। টিকে থাকতে তাদের আয় বাড়ানোর উপায় খুঁজতে বলেছেন পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সি।
কিন্তু সরকার চাইলেও কী ভাবে আয় বাড়ানো যায়, তার দিশা এখনও খুঁজে পাননি সিটিসি-র কর্তারা। এই মুহূর্তে সংস্থার কী অবস্থা?
সিটিসি-সূত্রের খবর: সংস্থার সাড়ে ছ’হাজার কর্মীর প্রায় অর্ধেককে কার্যত বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হচ্ছে। কলকাতা পুরসভা এবং এইচআরবিসি-র কাজের জন্য মোট ২৯টি রুটের মধ্যে অর্ধেকের বেশি বন্ধ। ২৬৫টি ট্রামের মধ্যে চলছে সাকুল্যে ৮০টি। আর এ হেন ‘মুমূর্ষু’ ট্রাম কোম্পানিকে ‘অক্সিজেন’ জোগাতে রাজ্যকে ফি বছর ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে অন্তত দেড়শো কোটি টাকা।
ভর্তুকি ছাড়া ট্রাম বাঁচানোর উপায় কী?
|
টিকে থাকার দাওয়াই |
|
• অলাভজনক রুট বন্ধ হোক
• কাজ না-থাকলে স্বেচ্ছাবসর
• জমি থেকে আয়ের চেষ্টা চাইএখন দেখার। |
সুপারিশ: ডেলয়েট অ্যান্ড টুশে কনসাল্টিং ইন্ডিয়া |
|
সিটিসি’র চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন বলেন, “নতুন নতুন রুট খুঁজে বার করতে হবে। ১ অগস্ট যেমন হাওড়া থেকে বিধাননগর পর্যন্ত একটা নতুন রুট চালু হয়েছে। বন্ধ রুটগুলো তাড়াতাড়ি চালু করার চেষ্টা চলছে।”
তবে সিটিসি-র কর্তাদেরই কেউ কেউ বলছেন, শুধু নতুন রুটে ট্রাম চালিয়ে বিশেষ লাভ হবে না। তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে সব মিলিয়ে দৈনিক ক’হাজার টাকা আয় বাড়তে পারে। খরচের বিপুল বোঝার তুলনায় যা কিছুই নয়। “যে কোনও উপায়ে খরচে রাশ টানতে হবে। নচেৎ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।” বলেন এক অফিসার।
তেমন কোনও উপায় অবশ্য বৈঠকের প্রাক্কালেও ভেবে উঠতে পারেননি সিটিসি-র কর্তারা। অথচ এ ব্যাপারে পরামশর্দাতা সংস্থার সুপারিশ-রিপোর্ট তাঁদের নাগালেই রয়েছে। যাতে সিটিসি-কে লাভজনক করে তোলার বেশ কয়েকটি পথ বাতলেছিল ‘ডেলয়েট অ্যান্ড টুশে কনসাল্টিং ইন্ডিয়া’ নামের সংস্থাটি। তার মধ্যে অলাভজনক রুট বন্ধ, সিটিসি-র জমি মারফত আয়ের রাস্তা খোঁজা থেকে আরম্ভ করে কর্মীদের স্বেচ্ছাবসরের মতো ‘কড়া সিদ্ধান্ত’ নেওয়ার পরামর্শও ছিল। কিন্তু পূর্বতন বাম সরকার সে পথে হাঁটেনি।
অগত্যা সুপারিশগুলো ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে মহাকরণে। গত দেড় বছর যাবৎ তার উপরে শুধু ধুলোই জমছে। সিটিসি-সূত্রে বলা হচ্ছে, রিপোর্টটি তৈরি হয়েছিল বেঙ্গালুরুর পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে কলকাতার ট্রামের তুলনা করে। আগের সরকার তা প্রয়োগ করতে চায়নি। এবং নতুন সরকারও তা নিয়ে এখনও বিশেষ ভাবনাচিন্তা শুরু করেনি বলে সিটিসি-সূত্রের ইঙ্গিত।
ফলে খরচ কমানোর ব্যাপারটা কার্যত ‘সোনার পাথরবাটি’ হয়ে রয়েছে বলে মনে করছে সিটিসি-র অফিসারমহলের একাংশ। এরই মধ্যে সিটিসি ফের অর্থসাহায্য চেয়ে বসেছে। এক অফিসারের কথায়, “দেনা বাড়তে বাড়তে প্রায় চার কোটি টাকায় ঠেকেছে। পাওনাদারদের অনেকেই জানিয়ে দিয়েছে, বকেয়া না-পেলে নতুন বরাত নেবে না। টাকা না-চেয়ে উপায় কী?”
এই সঙ্কট মাথায় নিয়ে আজ বৈঠকে বসছে সিটিসি-র পরিচালন পর্ষদ। পরামর্শদাতার সুপারিশ ফাইলবন্দি রেখে পরিত্রাণের দিশা সেখানে মেলে কি না, সেটাই এখন দেখার। |
|
|
|
|
|