সারি সারি থমকে ট্রেন, ভিতরে-বাইরে দুর্ভোগ যাত্রীদের
হাওড়ার মুখেই জমা জলে খাবি খেল রেল
খাস কলকাতায় শনিবার ভুগেছিলেন চক্ররেলের যাত্রীরা।
সোমবার পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের যাত্রীরা ভুগলেন হাওড়ায়।
খলনায়ক বৃষ্টি।
সোমবার সকালে হাওড়া স্টেশনে ঢোকার মুখে জলে আটকে পড়ল ট্রেন। জল ভেঙে তা স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছতেই পারল না। যাঁরা বয়সে তরুণ, তাঁরা নেমে পড়লেন জলের মধ্যেই। রেললাইন ধরে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই তাঁরা পৌঁছলেন স্টেশনে। কিন্তু প্রবীণদের পক্ষে ট্রেন থেকে নামার ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব ছিল না। ট্রেনের মধ্যেই কয়েক ঘণ্টা বসে থাকতে হল তাঁদের। শনিবার যেমন আটকে থাকতে হয়েছিল চক্ররেলের যাত্রীদের। এ দিন পরে হাওড়া পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হলেও জল জমে থাকা অংশে তা চলেছে অত্যন্ত ধীর গতিতে। লোকাল ট্রেন তো বটেই, দূর পাল্লার ট্রেন চলাচলও ব্যাহত হয়। পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেল দুই শাখাতেই বিপত্তি।
শনিবার দুপুরে মল্লিকঘাট হল্ট স্টেশনে বৃষ্টির জমা জলে আটকে গিয়েছিল চক্ররেল। পাঁচ ঘণ্টা পরে আটকে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করা হয়। দেখা যায়, মূলত রেলের নজরদারির অভাব আর কলকাতা পুরসভার সঙ্গে রেলের সমন্বয়ে ঘাটতির কারণেই ভুগতে হয়েছে ট্রেনযাত্রীদের। পরিস্থিতির মোকাবিলায় বেশি বৃষ্টি হলেই চক্ররেলের যাত্রাপথ ছেঁটে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রেল-কর্তৃপক্ষ। রবি ও সোমবার সেটাই করা হয়েছে।
কিন্তু হাওড়ার ক্ষেত্রে কী করবে রেল? সেখানে তো যাত্রাপথ ছাঁটা যাবে না। কারণ সব ট্রেনকে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছতেই হবে। এবং ছাড়তে হবে সেখান থেকেই। তা হলে উপায়?
এ দিনের বিভ্রাটের পরে একটি উচ্চ পর্যায়ের টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছে পূর্ব রেল। ব্যবস্থা রাখা হয়েছে টিকিট ফেরত দেওয়ারও। তবে ওই কমিটি তৈরি করেও এ দিন ট্রেনের দেরি আটকানো যায়নি। রাজধানী এক্সপ্রেসের মতো ট্রেনও ছেড়েছে দু’ঘণ্টা দেরিতে।
এ দিন বেলা ১১টায় টিকিয়াপাড়া কেঠোপোলের কাছে গিয়ে দেখা যায়, গোটা এলাকা জলে ভাসছে। রেললাইন হাঁটুজলের নীচে। ডুবে গিয়েছে সিগন্যাল বক্স। ডাউন ও আপ লাইনে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে লোকাল ও দূর পাল্লার ট্রেন। দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের পাশ দিয়ে ছাতা বা প্লাস্টিক মাথায় দিয়ে হাওড়া স্টেশনের দিকে হাঁটা দিয়েছেন ট্রেন থেকে লাফিয়ে নামা যাত্রীরা।
বৃষ্টিতে রেললাইন ডুবে থমকে গিয়েছে ট্রেন। হেঁটেই স্টেশনের
পথে নিত্যযাত্রীরা। সোমবার হাওড়ায়। ছবি রণজিৎ নন্দী
প্রায় এক ঘণ্টা ট্রেনে বসে থাকার পরে ট্রেন থেকে নেমে পড়েছিলেন কোন্নগরের বাসিন্দা দেবারতি ঘোষ। তাঁর অভিজ্ঞতা, “প্রায় দেড় ঘণ্টা ট্রেনে বসে রয়েছি। একটু করে ট্রেন এগোচ্ছে। তার পরেই দাঁড়িয়ে পড়ছে। তাই নেমে হেঁটেই যাচ্ছি হাওড়ার দিকে। জানি না, কখন অফিসে পৌঁছব।” বৃষ্টির মধ্যে রেললাইন ধরে হাওড়া স্টেশনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে সমর নায়েক বলেন, “প্রতি বছর টিকিয়াপাড়া কারশেডে জল জমে কেন? সেই জল নামেই না বা কেন? রেল-কর্তৃপক্ষকে জবাব দিতে হবে।” লিলুয়ার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ বর্মন বলেন, “লিলুয়া থেকে হাওড়া স্টেশনে আসতে সময় লাগল পাক্কা আড়াই ঘণ্টা। অফিসে এ কথা কেউ বিশ্বাস করতেই চাইবে না।”
হাওড়া স্টেশনে ঢোকার মুখে এমন অবস্থা হল কেন?
রেল-কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, টিকিয়াপাড়া কারশেড ও হাওড়া ইয়ার্ডের রেললাইন জলে ডুবে যাওয়াতেই এই বিপত্তি। রেলকর্তাদের কথায়, হাওড়া স্টেশনের পরেই বাঁ দিকে পরপর ইএমইউ কারশেড ও টিকিয়াপাড়া কারশেড। আর তার উল্টো দিকে ঝিল সাইডিং। যে-বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এই তিনটি শেড রয়েছে, সেটা বেশ নিচু (অনেকটা গামলার মতো)। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে যায়। হাওড়ার ডিভিশনাল ম্যানেজার পার্থসারথি মণ্ডল বলেন, “আমাদের ২২টি পাম্প জল বার করার কাজ করছে। কিন্তু লাভ বিশেষ হচ্ছে না। যেখানে জল ফেলা হচ্ছে, সেখান থেকে ফের ‘ব্যাক ফ্লো’ করে ঢুকে পড়ছে। আসলে টিকিয়াপাড়ার কাছে নন্দ ঘোষ লেনে নিকাশির ব্যবস্থা না-থাকায় এবং পচা খাল সংস্কার না-হওয়ায় বারবার এই সমস্যা হচ্ছে। তবু আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
নিকাশি বা খাল সংস্কারের ব্যাপারে হাওড়া পুরসভা কী বলছে?
পুরো দায় রেলের ঘাড়েই চাপিয়ে দিয়েছে ওই পুরসভা। হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “রেলের সঙ্গে আমাদের বারবার বৈঠক হয়েছে। ওদের যে-সব নিকাশি নালা পুরসভার নিকাশি নালার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, আমরা সেগুলি বারবার পরিষ্কার করতে বলেছি। কিন্তু ওরা করেনি। তার উপরে লিলুয়া কারশেডে পোড়া মোবিল ফেলে নিকাশি নালাই বন্ধ করে দিয়েছে রেল। ওদের জন্যই আমাদের নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জল বেরোচ্ছে না।”
রেল সূত্রের খবর, এ দিন সব থেকে বেশি সমস্যা হয় দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর শাখায়। এক দিকে টিকিয়াপাড়া কারশেডে জল। অন্য দিকে নড়তে না-পেরে লাইনে ও প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন। এই দু’টি কারণে নাজেহাল হন ট্রেনযাত্রীরা। ওই শাখায় বাতিল হয় মোট ২১ জোড়া লোকাল ট্রেন। পাঁচটি দূর পাল্লার ট্রেন হাওড়ার বদলে সাঁতরাগাছি স্টেশনে দাঁড় করিয়ে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়। সেই যাত্রীরা লোকাল ট্রেন ধরে কয়েক ঘণ্টা পরে হাওড়ায় পৌঁছন। সাঁতরাগাছিতে নেমে যাঁরা সড়কপথে কলকাতায় পৌঁছনোর চেষ্টা করেন, তাঁদেরও ভোগান্তির শেষ ছিল না। বৃষ্টির জন্য সেখান থেকে কোনও বাস মেলেনি। আর মওকা বুঝে ধর্মতলায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য ট্যাক্সি ভাড়া হেঁকেছে ৭০০ টাকা!
পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ঘটনাস্থলে যান পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার বরুণ ভরদ্বাজ। কী ভাবে ভবিষ্যতে এই ধরনের বিপর্যয় ঠোকানো যায়, তা নিয়ে রেলকর্তাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনাও করে তিনি। ২০-২২ বছর ধরে এই সমস্যা কেন মিটল না, সেই প্রশ্ন উঠেছে। পূর্ব রেল না দক্ষিণ-পূর্ব রেল, নাকি হাওড়া পুরসভা কে এই নিকাশির কাজটা করবে? চলছে চাপান-উতোর।
আর ভুগতে হচ্ছে যাত্রীদেরই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.