|
|
|
|
আমেরিকার রেটিং কমার জের |
বিশ্ব জুড়ে আতঙ্কে কাঁপছে সূচক |
নিজস্ব প্রতিবেদন
|
মার্কিন অর্থনীতি নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন সোমবারও বিশ্ব জুড়ে পাল্টা আঘাত হানল শেয়ার বাজারে। উল্টো দিকে নিরাপদ লগ্নির মাধ্যম হিসাবে সোনার চাহিদা বাড়ায় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতেও পাকা সোনা ছাড়িয়ে গেল ২৫ হাজার টাকা। শেয়ার বাজারের পরিস্থিতি দেখে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের বিলগ্নিকরণ পরিকল্পনা পিছিয়ে দিতে পারে বলেও ইঙ্গিত মিলেছে।
মূল্যায়ন সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস (এস অ্যান্ড পি) লগ্নির ক্ষেত্র হিসাবে আমেরিকার যোগ্যতা-মান কমিয়ে দেওয়ার প্রভাব সোমবারই প্রথম পড়ে বিশ্ব বাজারে। আতঙ্কের ঢেউ নতুন করে গ্রাস করে এশিয়া-ইউরোপ-আমেরিকার বাজারকে। ভারতের বাজারে যার জেরে সকালেই ৫৪৬ পয়েন্ট পড়ে ১৬,৭৫৯ পয়েন্টে নেমে যায় সেনসেক্স। শুক্রবারের মতোই অবশ্য দিনের শেষে ঘুরে দাঁড়ায় সেনসেক্স। সর্বসাকুল্যে পতন সীমিত থাকে ৩১৬ পয়েন্টের মধ্যে। বাজার বন্ধের সময় সূচক ছিল ১৬,৯৯০ অঙ্কে। এ দিনও চালিকাশক্তির কাজ করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আশ্বাসবাণী। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী মাস তিনেক শেয়ার বাজার চূড়ান্ত ভাবে অনিশ্চিত থাকবে।
শুক্রবারের পতনের মূল কারণ ছিল মার্কিন অর্থনীতি ফের মন্দার কবলে পড়ার আতঙ্ক। ঋণের ঊর্ধ্বসীমা বিল মার্কিন কংগ্রেসে পাশ হলেও সরকারের ব্যয় সঙ্কোচের শর্ত মেনে নিতে হয় প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে। আর, তাতেই দ্বিতীয় দফার মন্দার ভয়ে শেয়ার দর পড়তে থাকে বিশ্ব জুড়ে। এক সময়ে সেনসেক্স নেমে যায় ৭০২ অঙ্ক, পরে অবশ্য তা দাঁড়ায় ৩৮৭ পয়েন্টের পতনে। সোমবারের পতনের জন্য দায়ী এস অ্যান্ড পি-র তরফে মার্কিন অর্থনীতির রেটিং কমানো। তারা শুক্রবার রাত্রে ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তার প্রভাব পড়ে সোমবারই। তবে এই রেটিং কমানোকে মেনে নিচ্ছে না সব মূল্যায়ন সংস্থা। লগ্নির ক্ষেত্র হিসাবে আমেরিকার বাজারের নির্ভরযোগ্যতার মান ‘এএএ’ থেকে এক ধাপ কমিয়ে এস অ্যান্ড পি ‘এএ+’ করলেও অপর আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা মুডিজ এ দিন বলেছে আমেরিকা যে ‘এএএ’ রেটিং-এরই যোগ্য, তা নিয়ে তাদের সংশয় নেই। একমাত্র আমেরিকা যদি ভবিষ্যতে রাজকোষ ঘাটতি কমাতে ব্যর্থ হয়, তবেই তারা মূল্যায়ন কমানোর বিষয়টি খতিয়ে দেখবে, তার আগে নয়। পাশাপাশি, ভারতের রেটিং বাড়িয়ে দিয়েছে মূল্যায়ন সংস্থা গোল্ডম্যান স্যাক্স। পিটিআইয়ের খবর অনুযায়ী ওই রেটিং সংস্থার মতে, স্বল্প মেয়াদে ভারতের শেয়ার বাজার তেজী থাকবে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমা ছাড়াও ভারত সরকার আর্থিক সংস্কারের যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, সে কথা মাথায় রেখেই তারা রেটিং বাড়িয়েছে।
ভারতের শেয়ার সূচক যেখানে মাত্র গত পাঁচ দিনে পড়েছে ১৩২৪ পয়েন্ট সেখানে সোনার বাজারে ২৪ ক্যারাট সোনার দাম প্রতি ১০ গ্রামে বেড়েছে ১৭৮০ টাকা। শেয়ার বাজার গত কয়েক মাস ধরেই অনিশ্চিত। তাই লগ্নির ক্ষেত্রে বদল করে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকেছেন সোনার বাজারের দিকে।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় এ দিন এক বিবৃতিতে বলেন, ভারতের অর্থনীতির মৌলিক উপাদনগুলি যথেষ্ট মজবুত জমিতে দাঁড়িয়ে আছে। পাশাপাশি, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, নগদের পর্যাপ্ত জোগান বজায় রাখতে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবে। এই আশ্বাসে ভর করে এবং পড়তি বাজারে শেয়ার কেনার জেরে সূচকের পারা পরের দিকে অনেকটাই উপরে উঠে যায়।
গত কয়েক মাস ধরেই আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু বিষয় শেয়ার বাজারকে ক্রমশ অনিশ্চিত করে তুলছিল। শুরু গ্রিসের আর্থিক সমস্যা দিয়ে। দ্বিতীয় আঘাত আসে দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক বিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে। মুদ্রাস্ফীতির মোকাবিলা করতে গিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার ৫০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ায়। এর ফলে লগ্নিকারীদের মনে যে আশঙ্কার সৃষ্টি হয় তা হল, সুদ বাড়ানোর ঘটনা এবার দেশের উৎপাদন শিল্পের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে। তৃতীয় এবং আপাতত সর্ব শেষ আঘাত হল আমেরিকার ক্রেডিট রেটিং কমে যাওয়া।
তবে শেয়ার বাজারের এই পতনের সঙ্গে ভারতে আর্থিক অবস্থাকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেছেন পিয়ারলেস মিউচুয়াল ফান্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অক্ষয় গুপ্ত। লগ্নির অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হিসাবে ভারতই বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির কাছে প্রাধান্য পাবে বলে মনে করেন গুপ্ত। তবে দুটি জিনিস বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এক, ভারতীয় শিল্প সংস্থাগুলি কেমন আর্থিক ফলাফল করে
দুই ঋণনীতির পরবর্তী পর্যলোচনার সময় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ফের সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটে কি না।
এই অবস্থায় সাধারণ ক্ষুদ্র লগ্নিকারীদের কী করণীয়? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বিএনকে ক্যাপিটাল মার্কেটসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অজিত খান্ডেলওয়াল বলেন, “পড়তি বাজারে ভাল শেয়ারে অন্তত বছর দুয়েকের মেয়াদে বিনিয়োগ করতে হবে। স্বল্প মেয়াদে বিনিয়োগের পরিকল্পনা থাকলে আপাতত শেয়ার বাজার থেকে তাঁদের দূরে থাকাই বাঞ্ছনীয়।” |
|
|
|
|
|