|
|
|
|
চা-শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে সঙ্কট |
ধর্মঘট থেকে পরিষদকে নিরস্ত করতে বৈঠকে মন্ত্রী |
নিজস্ব প্রতিবেদন
|
প্রভেদ গুণমানে। সে জন্যই দার্জিলিং চায়ের সঙ্গে বাজারদরে প্রচুর ফারাক অন্য চায়ের। অর্থনৈতিক এই কারণেই দার্জিলিঙের চা-শ্রমিকদের জন্য যে হারে মজুরি বৃদ্ধি সম্ভব, তরাই-ডুয়ার্সের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয় বলে যুক্তি দিচ্ছেন মালিকপক্ষ। কিন্তু অর্থনৈতিক এই যুক্তি আপাত ভাবে কানে তোলা হচ্ছে না। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিমল গুরুঙ্গ সম্প্রতি দার্জিলিং পাহাড়ে চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৬৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯০ টাকা করিয়েছেন। ওই ‘দৃষ্টান্ত’ দেখিয়েই তরাই-ডুয়ার্সের চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আজ, মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লাগাতার সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দিয়ে আসরে নেমেছে আদিবাসী বিকাশ পরিষদ। বাধা দেওয়া হচ্ছে বাগান থেকে চা পাতা বেরনোতেও। আর তাতেই পাকিয়েছে জট।
এই পরিস্থিতিতে পরিষদের নেতাদের সঙ্গে আজ মহাকরণে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসুর। শ্রমমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘বৈঠকে পরিষদ নেতাদের ধর্মঘট থেকে সরে আসার অনুরোধ করব। বৈঠকে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিদেরও আনার চেষ্টা হচ্ছে। তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান করতে সব রকম প্রয়াস চলছে।”
এমনিতেই তরাই-ডুয়ার্সের ২৬৪টি চা বাগানের অর্ধেকের বেশি আর্থিক সঙ্কটে রয়েছে। তদুপরি মজুরি সংক্রান্ত এই জটিলতায় কাজকর্ম থমকে গেলে পুজোর মুখে মালিকদের অনেকেই বাগান বন্ধ করে দেবেন বলেও চা-মহলে আশঙ্কা রয়েছে। ‘ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর উত্তরবঙ্গের আহ্বায়ক অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, “দীর্ঘ দুর্দশার পরে চা শিল্প কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এমন একটা সময়ে মজুরি বাড়ানোর বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে না মিটিয়ে ধর্মঘট হলে চা শিল্প সঙ্কটে পড়বে।” |
|
করলাভ্যালি চা বাগানে সোমবার চা শ্রমিকদের জমায়েত। ছবি: সন্দীপ পাল |
বস্তুত, চায়ের বাজারভিত্তিক স্বীকৃতির প্রেক্ষিতে দার্জিলিঙের চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির কথা বলা হলেও, ঘটনা হল ওই বাগানগুলির শ্রমিকদের মজুরি ফের কবে পুনর্বিবেচনা করা হবে তা স্পষ্ট নয়। পক্ষান্তরে তরাই-ডুয়ার্সের শ্রমিকদের দাবি মেনে পরবর্তী ৩ বছরে ৮ টাকা করে মোট ২৪ টাকা দৈনিক মজুরি বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন তরাই-ডুয়ার্সের চা বাগান মালিকেরা। ওই হার মানা হলে দু’বছরের মাথায় পাহাড়ের শ্রমিকদের চেয়েও দৈনিক ১ টাকা (৯১টাকা) বেশি হবে তরাই-ডুয়ার্সের চা-শ্রমিকদের মজুরি। শুধু তা-ই নয়, তিন বছর পেরনোর পরে ফের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে নয়া চুক্তি হবে বলেও বাগান মালিকদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিষদ নিজেদের অবস্থানে ‘অনড়’ থাকায় জটিলতার নিষ্পত্তি হচ্ছে না।
অন্য দিকে, তরাই-ডুয়ার্সে ধর্মঘটের ডাক দেওয়ার পাশাপাশি, পরিষদের চা-শ্রমিক সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ টি ওয়ার্কাস ইউনিয়ন’ রাস্তা এবং রেল অবরোধ করে জনজীবন স্তব্ধ করে দেওয়া হবে বলেও ‘হুমকি’ দিয়েছে। এই ‘পরিস্থিতি’তে উদ্বিগ্ন পুলিশ-প্রশাসন। মহাকরণ থেকেও তরাই-ডুয়ার্সের জনজীবন স্বাভাবিক রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।
মহাকরণ সূত্রের খবর, শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সমস্যার সমাধানের ইঙ্গিত মিললেই ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে বলে পরিষদের নেতারা রাজ্য সরকারকে আশ্বস্ত করেছেন। পরিষদের রাজ্য সভাপতি বিরসা তিরকে ও রাজ্য সম্পাদক তেজকুমার টোপ্পো বলেন, “দাবিপূরণের ইঙ্গিত পেলে ধর্মঘট তোলার কথা ভাবব।” |
|
|
|
|
|