|
|
|
|
বালি খাদানের রমরমায় বিপন্ন বাঁধ, সেতু, জনপদ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
কোথাও সঙ্কটে সেতু। কোথাও বা নদীবাঁধ।
জেলার বিভিন্ন নদনদীর পাড়ে রমরমিয়ে চলা বালি খাদানগুলি নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। নিয়ম না মেনে যথেচ্ছ বালি কাটা হচ্ছে এই সব এলাকায়। ধরপাকড় প্রায় হয় না। অনেক ক্ষেত্রে ‘লিজ’ দেওয়ার পরে নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে থেকেও বালি তোলা হয়। সে দিকেও বিশেষ নজর নেই প্রশাসনের। প্রাপ্য রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হয় সরকার। তা ছাড়া, এই সব বালি খাদানের জেরে বিপন্ন জনপদও, অভিযোগ নদীর পাড় সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের।
বর্ধমানে দামোদরের উপরে কৃষক সেতুর স্তম্ভের গায়ের বালি খুঁড়ে নেওয়া থেকে দুর্গাপুরের ডিভিসি ব্যারাজের কাছে বিপজ্জনক এলাকার বালি তুলে নেওয়া নতুন ঘটনা নয়। ব্যতিক্রম নয় ইলামবাজার বা কেতুগ্রামের চড়কির অজয়ের সেতুও। বালি মাফিয়াদের হাত থেকে রেহাই পায় না ডিভিসি-র বাঁধও। এ নিয়ে অভিযোগও উঠেছে বারবার। কিন্তু খাদান বন্ধ করতে বিশেষ উদ্যোগ দেখা যায়নি কখনও। অভিযোগ, অজয় হোক বা দামোদর, বেআইনি ভাবে নদী থেকে বালি তুলে বিক্রি করার রমরমা ব্যবসা চলছে জেলার বহু জায়গাতেই। ‘লিজ’ এলাকার বাইরে গিয়ে বালি তোলার নজিরও ভুরিভুরি। এমনও দেখা গিয়েছে, এক বার লিজ নেওয়ার পরের বছরেও সেই জায়গা থেকে বালি তোলা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট দফতরকে এ ব্যাপারে বলেও পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয় না। ফলে, ক্ষতি হচ্ছে রাজস্বের। |
|
বর্ধমানের কৃষক সেতুর কাছে উদিত সিংহের তোলা ছবি। |
সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, বালি খাদানের ব্যাপারে উদ্যোগ হচ্ছে। প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এত দিন বিষয়টি ছিল ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের দায়িত্বে। কিন্তু এই দফতরের পক্ষ থেকে বালির বেআইনি কারবার নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাজ্য সরকারের নতুন নির্দেশ অনুযায়ী এখন থেকে বিষয়টি দেখবেন মহকুমাশাসক। বৈধ বালি খাদানগুলি চিহ্নিত করে বন্ধ করে দেওয়া হবে সমস্ত বেআইনি খাদান। তার পরে শুরু হবে তল্লাশি অভিযান। প্রয়োজনে পূর্ত ও সেচ দফতরের সাহায্য নেওয়া হবে।
সম্প্রতি জেলাশাসকের দফতরে মহকুমাশাসক ও সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির আধিকারিকদের নিয়ে একটি বৈঠক হয়। জেলাশাসক ওঙ্কারসিংহ মিনা জানান, সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রতিটি বালি খাদানের ‘লিজ হোল্ডার’ বরাদ্দ এলাকায় বোর্ড লাগাবেন। তাতে কতটা জমিতে কত দিনের জন্য তিনি বালি তোলার ‘লিজ’ পেয়েছেন তা লেখা থাকবে। শুধু তাই নয়, সীমানা বরাবর খাম্বা পুঁততে হবে, যাতে এলাকার বাসিন্দারা জানতে পারেন ঠিক কোন অংশে ওই ব্যক্তি বালি তোলার অনুমতি পেয়েছেন। সেক্ষেত্রে বেনিয়ম হলে বাসিন্দারাও বুঝতে পারবেন। জেলাশাসকের আশ্বাস, “বালি নিয়ে অনিয়ম বন্ধ করা হবে।” কোনও সেতুর দু’শো মিটারের মধ্যে বালি তোলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলেও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
সম্প্রতি দুর্গাপুরের ডিভিসি ব্যারাজের কাছে বিপজ্জনক এলাকায় বালি তোলার অভিযোগ ওঠে। জানা যায়, দামোদরের অন্য পাড়ে, বাঁকুড়ার দিকে ‘লিজ’ পাওয়া এক ব্যক্তি বেআইনি ভাবে দুর্গাপুরের দিকে এসে বালি তুলছেন। তল্লাশিতে ধরা পড়ে ৫টি লরি। অজয় নদ থেকে বেআইনি ভাবে বালি তুলে নিয়ে যাওয়ার সময়ে কিছু দিন আগে ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার হাতেও ধরা পড়ে একটি লরি।
প্রশাসনের আশ্বাসে বুক বাঁধছেন নদীর পাড়ের বাসিন্দারা। ভাঙন কতটা রোখা গেল, সময়ই বলবে। |
|
|
|
|
|